জল আমাদের শরীরের জন্য একটি মৌলিক প্রয়োজন, তাই পূর্ণ পরিমাণে জল পান করার উপর জোর দেওয়া হয়। কিন্তু ডাক্তার নিজে না বললে নবজাতককে প্রথম ৬ মাসে জল দেওয়া হয় না।
কলম্বিয়া এশিয়া হাসপাতালের সিনিয়র কনসালট্যান্ট পেডিয়াট্রিশিয়ান এবং নিউওনাটোলজিস্ট ডঃ অমিত গুপ্তা বলেছেন যে বাচ্চাদের খাদ্যের চাহিদা জানা আসলে একটু কঠিন, কারণ তারা কথা বলে আমাদের বলতে পারে না।
মায়েরা প্রয়োজন ছাড়াই জল পান করলে তা তাদের ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে। এটি শিশুর শরীরের তাপমাত্রা কমাতে পারে এবং খিঁচুনি হওয়ার ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
এই অবস্থাকে জলের নেশা বলা হয়। এই অবস্থা শিশুদের মধ্যে খুব কমই দেখা যায় কিন্তু তারপরও কিছু শিশুর বাবা-মা তাদের অতিরিক্ত জল দিতে থাকেন যা শিশুর মধ্যে জলের নেশা সৃষ্টি করে।
শিশুদের মধ্যে জলের নেশার লক্ষণ:
শিশু খুব অলস থাকা এবং মাথা ঘোরা অনুভব করে।
একটি শিশু যে সব সময় খুশি হয় খিটখিটে হয়ে ওঠে এবং বেশ উচ্ছৃঙ্খল হয়।
৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে তাপমাত্রা থাকা।
বমি বমি ভাব।
বাহু, হাত ও মুখ ফুলে যাওয়া।
শ্বাস-প্রশ্বাসে অস্বাভাবিক অনুভূতি।
শরীরে সোডিয়ামের মাত্রা খুবই কম।
বাচ্চাদের কতটা জল পান করানো উচিৎ:
৬ মাসের কম বয়সী শিশুকে জল দেওয়ার প্রয়োজন নেই কারণ তারা বুকের দুধ দ্বারা হাইড্রেটেড হয়।
৬ মাস থেকে ১ বছর বয়সী শিশুকে দিনে আধা থেকে এক কাপ জল দেওয়া যেতে পারে। এই পরিমাণ জল শিশুর হাইড্রেশনের চাহিদাও পূরণ করে এবং তাদের নিরাপদও রাখে।
শিশুদের জলের নেশার কারণ:
জল এবং জুস খাওয়ানো: কিছু বাবা-মা তাদের শিশুকে ৬ মাস বয়সের আগেই জল এবং হালকা জুস দেওয়া শুরু করে যাতে তারা অতিরিক্ত পুষ্টিও পায়।
শিশুদের এই ধরনের পুষ্টি বা হাইড্রেশনের প্রয়োজন নেই। এই জল শুধু তাদের ক্ষতি করবে। এই মুহূর্তে শিশুর কিডনি জল ফিল্টার করতে অক্ষম।
কাপের মাধ্যমে কিছু খাওয়ানো: এক থেকে দুই বছর বয়সী শিশুদের শুধুমাত্র বোতল থেকে তরল খাওয়াতে হবে। ছোট বাচ্চাদের যদি কাপ থেকে জল দেওয়া হয়, তাহলে তারা সাথে সাথে প্রচুর জল পান করার প্রবণতা রাখে, যার কারণে জলে নেশার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
মিশ্রিত খাবার খাওয়ানো: আপনি যদি শিশুকে ফর্মুলা দুধ খাওয়ান, তবে তার প্যাকেজে লেখা সমস্ত জিনিস মনোযোগ সহকারে পড়ুন। আপনি যদি ফর্মুলায় খুব বেশি জল পাতলা করেন তবে এটি শিশুরও ক্ষতি করতে পারে।
জলের নেশা চিকিৎসা:
যদি আপনার সন্তানের জলের নেশার লক্ষণ দেখা যায়, তাহলে আপনি বাড়িতে তার চিকিৎসা করতে পারবেন না, তাই তাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়াই সবচেয়ে ভালো বিকল্প।
আপনার ডাক্তার আপনার সন্তানের ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্য বজায় রাখতে এবং তাদের উপসর্গগুলি কমানোর জন্য চিকিৎসা শুরু করবেন।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, শিশুকে জল দেওয়া হয় না যতক্ষণ না এই অতিরিক্ত জল তার শরীর থেকে প্রস্রাবের মাধ্যমে বের হয়ে যায়।
টিপস :
শিশুর ৬ মাস বয়স না হওয়া পর্যন্ত তাকে জল দেবেন না।
যদি শিশুর হাইড্রেশন নিয়ে আপনার মনে প্রশ্ন আসে, তাহলে একজন ভালো শিশু চিকিৎসকের কাছে এই সমস্যাটি পরিষ্কার করুন। তবে অনুমানের ভিত্তিতে তাদের বেশি জল দেবেন না।ফর্মুলা খুব বেশি পাতলা করবেন না।
জলের নেশার অবস্থা শিশুদের মধ্যে খুব কমই দেখা যায়। কিন্তু যদি এই অবস্থার যত্ন না নেওয়া হয়, তবে কিছু গুরুতর লক্ষণ যেমন শিশুর কোমায় চলে যাওয়া বা খিঁচুনি হওয়াও দেখা যেতে পারে, তাই আপনার সন্তানের সম্পূর্ণ যত্ন নিন।
No comments:
Post a Comment