মমতাকে বাঁচিয়ে আজ নিজেই প্রায় মৃত। একুশের শহীদ মঞ্চে কখনও ডাক পায় না, জীবন্ত শহীদ বলে নিজেকে আখ্যা দিলেও এখনও বিশ্বাস মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে চাকরি ফিরে পাবেন সিরাজুল।
উত্তর ২৪ পরগনা জেলার গাইঘাটা থানার অন্তর্গত ইছাপুর-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের ভদ্রডাঙার বাসিন্দা সিরাজুল হক মন্ডল। ১৯৯৩ সালের ২১ জুলাইয়ের তৎকালীন কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সচিত্র পরিচয় পত্রের জন্য মহাকরণ অভিযানের ডাক দিয়েছিলেন। সেই দিন মিছিল যখন মহাকরণের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল তৎকালীন কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে, তখন কলকাতা পুলিশের তৎকালীন ডেপুটি কমিশনার দীনেশ বাজপেয়ীর নির্দেশে লাঠিচার্জ শুরু করেন তৎকালীন বাম সরকারের পুলিশ।
চোখের সামনে বিরোধী নেত্রীকে রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়তে দেখে স্পেশাল ব্রাঞ্চের অফিসার নির্মল বিশ্বাসের নির্দেশে কলকাতা পুলিশের কনস্টেবল সিরাজুল হক মণ্ডল নিজের সার্ভিস বন্দুক তাক করেছিলেন সুপিরিয়র দীনেশ বাজপেয়ীর দিকে কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-কে বাঁচাতে। কলকাতা পুলিশের তৎকালীন কনস্টেবল সিরাজুল চিৎকার করে বলেছিলেন, ‘স্যার এই অত্যাচার থামান। নাহলে আমি আপনাকে গুলি চালাতে বাধ্য হব।’ হতভম্ব পুলিশ কর্তা রণে ভঙ্গ দিয়েছিলেন।
ঘটনাটি ঘটে কলকাতার ব্রাবোন রোডে। সেই দিনের ২৭ বছরের তরতাজা কনস্টেবল হাতে মাস্কেট নিয়ে হাজির ডিউটি করতে। তৎকালীন বিরোধী দলের নেত্রীর ওপর অত্যাচার দেখতে না পেরে ঊর্ধ্বতন কর্তার মুখের উপর কথা বলতে বাধ্য হয়েছিলেন সেদিন। ফলস্বরূপ চলল মানসিক অত্যাচার, পরিশেষে তিন বছর বাদে চাকরি থেকে বরখাস্ত করে দেওয়া হয়। বেশ কিছুদিন চলল আদালতে দড়ি টানাটানি এবং বিভিন্ন দফতরে দফতরে চাকরি ফিরে পাওয়ার দরবার। অবশেষে টাকার অভাবে আদালতের দরজায় আর ঘোরেন না।
ভাঙ্গাচুরা দরমার বেড়া উপরে টিনের চালা ঘরে বসবাস করেন, ভাই-বোন এবং ছোট ভাগ্না-ভাগ্নী সহ বয়স্ক মা-কে নিয়ে দিন মজুরের কাজ করে চলছে কোনও মতে সংসার। ১৯৮৮ সালের জানুয়ারি-তে চাকরিতে যোগ দেন আলিপুর বডিগার্ড লাইনে কলকাতা পুলিশের কনস্টেবল পদে। চাকরির বয়স এখনও বছর চারেক বাকি। তাই চাকরি পাওয়ার আশায় এখনও অপেক্ষা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিকে সিরাজুল হক মণ্ডল সহ তার অসুস্থ-বৃদ্ধা মা।
No comments:
Post a Comment