বেশ ঝাঁ চকচকে পোশাক, হাতে ব্যাগ ও এক গুচ্ছ কাগজ নিয়ে এক সরকারি আধিকারিকের গাড়ির জানলার কাছে মুখ রেখে ঘেউ-ঘেউ করে যাচ্ছেন বছর ৪০-এর এক ব্যক্তি। আর এই দৃশ্য দেখে ওই আধিকারিকও যে চরম বিড়ম্বনায় পড়েছেন, তার ছাপ ওই আধিকারিকের চোখে-মুখে স্পষ্ট। কিন্তু কেন এমন করছেন ওই ব্যক্তি? আসলে এটাই তাঁর প্রতিবাদের ভাষা। ওই ব্যক্তির নাম শ্রীকান্তি কুমার দত্ত।
জানা গিয়েছে, বাঁকুড়া-২ নম্বর ব্লকের বিকনা গ্রাম পঞ্চায়েতের কেশিয়াকোল গ্রামের শ্রীকান্তি দত্ত, রাজ্যের খাদ্য ও সরবরাহ দফতরের তরফে রেশন কার্ডের যে প্রতিলিপি পেয়েছেন সেই জায়গায় দত্ত নয়, তার পদবী হয়ে গেছে 'কুত্তা'(KUTTA)। তাই এমন ভুলের প্রতিবাদে অভিনব পন্থা নিলেন শ্রীকান্তি। জয়েন্ট বিডিও দুয়ারে সরকারের ক্যাম্প পরিদর্শনে এলে তিনি ঘেউ ঘেউ করে তিনি 'প্রতিবাদ' জানান।
শ্রীকান্তি জানান, প্রথম বার যখন রেশন কার্ড হাতে পান, সেখানে পদবী আসে মণ্ডল। দুয়ারে সরকারে সংশোধনের আবেদন করলে পরের বার পদবী ঠিক এলেও নাম আসে শ্রীকান্ত। তিনি পুনরায় দুয়ারে সরকারে সংশোধনের আবেদন জানান এবং চলতি মাসের ১১ তারিখ রেশন কার্ড ডাউনলোড করলে নজরে আসে তাঁর নাম এসেছে শ্রীকান্তি কুমার কুত্তা।
শ্রীকান্তি বাবু বলেন, 'এটা দেখার পর আমি মানসিক ভাবে বিভ্রান্ত ও বিকৃতমনা হয়ে পড়ি। পরবর্তীতে ফের দুয়ারে সরকারের ক্যাম্পে গেলে সেখানে জয়েন্ট বিডিওর গাড়ি দেখেই তার পিছনে ছুটি এবং কুকুরের মত ঘেউ-ঘেউ করি ও রেশন কার্ডটি দেখাই-এর নামটা কি।'
ব্যক্তির অভিযোগ, তাঁর কথার কোনও উত্তর না দিয়ে জয়েন্ট বিডিও সেখান থেকে একপ্রকার পালিয়ে যান।
ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন, শ্রীকান্তি দত্তর মা হীরা দত্ত। তিনি বলেন, অশিক্ষিত চুক্তিভিত্তিক লোকদের দিয়ে কাজ করানো হচ্ছে। তার কথায়, 'ডি' - এর জায়গায় 'কে' এসেছে, এটা তাদের ঠিক করে দেওয়া উচিৎ ছিল, কিন্তু হয়নি যখন নিশ্চয়ই তারা পড়তে জানে না, তাই এই 'কুত্তা' নামটা পাঠিয়েছে। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, "আমি আমার ছেলের একটা নাম দিয়েছি, আর তা 'কুত্তা' নয়। এটা খুবই অসম্মানজনক।"
এই বিষয়ে এসডিও জানান, শুধু দুয়ারে সরকারের ক্ষেত্রে নয়, অনেক প্রকল্পেই নাম জমা দেওয়ার বিষয়টা থাকছে, একটু ভুল হতে পারে, তবে সচেতন হয়ে কাজটা করলে ভুলের পরিমাণ কম হবে। পাশাপাশি তিনি এও জানান, শ্রীকান্তি কুমার দত্তর বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখবেন।
প্রসঙ্গত, এর আগে অনেক বার আধার, প্যান বা রেশন কার্ডে নাম ভুলের ঘটনা ঘটেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন সময়ে এ নিয়ে ঠাট্টা তামাশাও করতে দেখা যায় অনেককেই। কিন্তু এবারের এই ঘটনা যেন সেই সবকিছুকে ছাপিয়ে গিয়েছে। পাশাপাশি এমন নজির বিহীন প্রতিবাদও হয়তো বঙ্গবাসী এই প্রথম চাক্ষুষ করল।
No comments:
Post a Comment