চলতি বছর অর্থাৎ ২০২২ সাল এখন শেষ পর্যায়ে। এ বছর যেমন অনেক ভালো স্মৃতি দিয়ে যাচ্ছে, তেমনই অনেক তিক্ত স্মৃতিও থেকে যাবে মানুষের মনে। যদিও গত দুই বছরের তুলনায় এ বছর ভালো ছিল, কিন্তু ভারতীয় সংস্কৃতি, সাহিত্য, অর্থনীতি এবং আমাদের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা অনেক বিশিষ্ট ও বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব; লতা মঙ্গেশকর, মুলায়ম সিং যাদব, রাজু শ্রীবাস্তব, সিধু মুসেওয়ালা সহ অনেক সেলিব্রিটি আমাদের ছেড়ে এই বছর না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন, যা আমাদের সকলের কাছে অপূরনীয় ক্ষতি। আজকের এই প্রতিবেদন এমনই কয়েকজন সেলিব্রেটি স্মরণে-
লতা মঙ্গেশকর
আমাদের দেশের কিংবদন্তী গায়িকা লতা মঙ্গেশকর এই বছরেই আমাদের ছেড়ে চলে যান। ভারতের নাইটিংগেল নামে পরিচিত ভারতরত্ন লতা মঙ্গেশকর নিউমোনিয়া এবং কোভিড-১৯-এর পরবর্তী স্বাস্থ্য সমস্যার সঙ্গে লড়াই করছিলেন। লতা মঙ্গেশকর ৬ ফেব্রুয়ারি, ৯২ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
মুলায়ম সিং যাদব
সমাজবাদী পার্টির প্রতিষ্ঠাতা তথা উত্তরপ্রদেশের তিনবারের মুখ্যমন্ত্রী মুলায়ম সিং যাদবের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার ছয় দশকেরও বেশি সময় ধরে বিস্তৃত ছিল। তাঁকে ভালোবেসে 'নেতাজি' বলা হয়। তিনি একসময় ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রীও ছিলেন। দীর্ঘ অসুস্থতার পর গুরুগ্রামের একটি বেসরকারি হাসপাতালে, ৮২ বছর বয়সে- ১০ অক্টোবর প্রয়াত হন মুলায়ম সিং যাদব।
বাপ্পি লাহিড়ী
গায়ক-সুরকার বাপ্পী লাহিড়ী, বাপ্পি দা নামে পরিচিত, বিনোদন জগতের একজন সুপরিচিত ব্যক্তিত্ব। ভারতে ডিস্কো সঙ্গীতকে জনপ্রিয় করার কৃতিত্ব তারই। ডিস্কো কিং খ্যাত বাপ্পি দা দেশকে আরও একটি নতুন সুর উপহার দেন। তিনি এক বছরে ১৮০ টিরও বেশি গান রেকর্ড করার জন্য গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড করেন। তিনি ১৫ ফেব্রুয়ারি, ৬৯ বছর বয়সে ঘুমের দেশে পাড়ি জমান।
পন্ডিত বিরজু মহারাজ
পদ্মবিভূষণে ভূষিত, মহান কথক নৃত্যশিল্পী পণ্ডিত বিরজু মহারাজ নাচের পাশাপাশি একজন গায়ক ও সঙ্গীতজ্ঞ হিসেবেও পরিচিত ছিলেন। বিরজু মহারাজ কথকের সমার্থক ছিলেন। তিনি লখনউয়ের কালকা বিন্দাদিন ঘরানার সদস্য ছিলেন। বিরজু মহারাজের পুরো নাম ছিল ব্রিজমোহন নাথ মিশ্র। লখনউ ঘরানার অন্তর্গত, বিরজু মহারাজ একজন কথক নৃত্যশিল্পীর পাশাপাশি একজন শাস্ত্রীয় গায়ক ছিলেন। বিরজু মহারাজের বাবা এবং গুরু অচ্চন মহারাজ, কাকা শম্ভু মহারাজ এবং লাছু মহারাজও বিখ্যাত কথক নৃত্যশিল্পী ছিলেন। ১৬ জানুয়ারি দিল্লীতে তার বাড়িতে, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ৮৩ বছর বয়সে তিনি প্রয়াত হন।
অরুণ বালি
দুর্দান্ত অভিনয়ের জন্য পরিচিত অভিনেতা অরুণ বালির চলতি বছরের ৭ অক্টোবর মৃত্যু হয়। দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন অরুণ বালি। তিনি বিরল রোগ মায়াস্থেনিয়া গ্র্যাভিসের সাথে লড়াই করছিলেন। এটি একটি অটোইমিউন রোগ, যা স্নায়ু এবং পেশীর মধ্যে যোগাযোগের ব্যর্থতার কারণে ঘটে। অরুণ বালি রাজু বান গয়া জেন্টলম্যান, ফুল অর আঙ্গারে, কেদারনাথ, খলনায়ক, থ্রি ইডিয়টস এবং পানিপথ সহ অনেক ছবিতে অভিনয় করেছিলেন।
রাজু শ্রীবাস্তব
রাজু শ্রীবাস্তবকে বলা হতো 'কমেডির রাজা'। তিনি একজন বিখ্যাত কৌতুক অভিনেতা ছিলেন। রাজু দ্য গ্রেট ইন্ডিয়ান লাফটার চ্যালেঞ্জ, কমেডি সার্কাস এবং দ্য কপিল শর্মা শো-এর মতো অনুষ্ঠানের অংশ ছিলেন। দিল্লীর একটি জিমে ব্যায়াম করার সময় হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রায় ৪০ দিন পর- ২১ সেপ্টেম্বর মাত্র ৫৮ বছর বয়সে AIIMS হাসপাতালে তিনি প্রয়াত হন।
সিধু মুসেওয়ালা
পাঞ্জাবি গায়ক-গীতিকার শুভদীপ সিং সিধু মুসেওয়ালা ছিলেন পাঞ্জাবের একজন সুপরিচিত গায়ক। তিনি ২০১৭ সালে তার 'সো হাই' গানের পরে প্রচুর খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। সিধু মুসেওয়ালা পাঞ্জাব এবং আশেপাশের অনেক রাজ্যের যুবকদের মধ্যে খুব বিখ্যাত ছিলেন। ২৮ বছর বয়সী গায়ককে ২৯ মে পাঞ্জাবের মানসা জেলায় গ্যাংস্টার লরেন্স বিষ্ণোইয়ের আততায়ীর গুলিতে খুন হন।
কেকে ওরফে কৃষ্ণকুমার কুন্নাথ,
কেকে ওরফে কৃষ্ণকুমার কুন্নাথ, যিনি একটি পুরো প্রজন্মের জন্য রোমান্টিক এবং দুঃখজনক গানকে পরিভাষিত করেছিলেন, ৩১ মে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন৷ কলকাতায় নজরুল মঞ্চে একটি অনুষ্ঠানের সময় অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। এরপরেই মঞ্চ ছেড়ে হোটেল রুম, সেখান থেকে হাসপাতাল নিতে নিতেই আগেই সব। শেষ খুদা জানে', 'ডিং দং', 'আঁখোঁ মে তেরি' এবং আরও অনেকের মতো অনেক আধুনিক ক্লাসিকের পিছনে ছিল কেকে-র কণ্ঠস্বর। তাঁর গাওয়া সেই জনপ্রিয় গানের লাইন; 'হাম রাহে ইয়া না রাহে কাল...ইয়াদ আয়েঙ্গে ইয়ে পাল...' মনে আজও গভীর ভাবে দাগ কাটে।
গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়
গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ছিলেন দেশের একজন বাংলা ভাষার প্লেব্যাক ভোকালিস্ট এবং গিটারিস্ট। ১৯৭০ সালে, জয় জয়ন্তী এবং নিশি পদ্মা চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ মহিলা প্লেব্যাক গায়িকা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ভূষিত হন। ২৭ জানুয়ারি শ্বাসকষ্ট নিয়ে এসএসকেএম হাসপাতালে এবং পরে কোভিড -পজিটিভ হওয়ায় অ্যাপোলো হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল তাঁকে। ফুসফুসে সংক্রমণ, হাইপোটেনশন, ইস্কেমিক হার্ট ডিজিজ, মাল্টি-অর্গান ফেইলিউর এবং বাম ফিমার ফ্র্যাকচারেও ভুগছিলেন গীতশ্রী। ১১ ই ফেব্রুয়ারিতে সফল ফেমোরাল সার্জারিও হয়, কিন্তু ১৫ ফেব্রুয়ারি সকালে কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে এবং সেইদিনই সন্ধ্যা ৭.৩০ নাগাদ সব শেষ, চিরতরে থেমে যায় গীতশ্রীর কন্ঠ, প্রয়াত হন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়।
এছাড়াও আরও অনেক জনপ্রিয় গুণী ব্যক্তিত্বকে আমরা হারিয়েছি, সেই সকলকে আমাদের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধাঞ্জলি।
No comments:
Post a Comment