আমাদের দেশে শত সহস্র বছরের পুরনো কিছু মন্দির রয়েছে, এমনই একটি মন্দির ঔরঙ্গাবাদের 'কেভস অফ ইলোরা'-তে অবস্থিত।মহারাষ্ট্রের কৈলাস নামে অভিহিত শিবের এই মন্দিরটি শুধু দেশে নয়, সারা বিশ্বে তার বিস্ময়কর নির্মাণের জন্য পরিচিত। মহাদেবের এই মন্দিরের বিশেষত্ব হল এটি একটি পাথরের শিলা কেটে তৈরি । আসুন এই মন্দিরের বিশেষত্ব কী তা বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক-
এমনটা বিশ্বাস করা হয় যে একবার রাষ্ট্রকূট রাজবংশের রাজা প্রথম কৃষ্ণ খুব অসুস্থ হয়ে পড়লে রানী তার সুস্থতার জন্য উপবাস করার সিদ্ধান্ত নেন। রাজা সুস্থ হয়ে উঠলে রানী জানতে পারলেন যে মন্দিরটি বানাতে অনেক সময় লাগবে। তখন রাণী ভগবানের আশ্রয়ে গেলেন এবং তার প্রকৃত ভক্তি দেখে মহাদেব তখন একটি অস্ত্র প্রদান করেন।
বলা হয়, এই বিশাল মন্দির নির্মাণে সেই অস্ত্রটি ব্যবহার করা হয়েছিল এবং কাজ শেষ হওয়ার পর তা মাটির নিচে পুঁতে দেওয়া হয়েছিল। বলা হয় যে মুঘল আমলে ঔরঙ্গজেব এই মন্দিরটিকেও ক্ষতিগ্রস্ত করার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু তিনি তা করতে পারেননি।
এই মন্দিরটি সেই সময় নির্মিত হয়েছিল যখন কোনও পাথর কাটার মেশিন ছিল না। বড় বড় ইঞ্জিনিয়াররাও এই মন্দিরের কারুকার্য দেখে অবাক হয়ে যান।
মনে করা হয়, মোট ৭,০০০ জন শ্রমিক একটানা ১৭ বছর ধরে একটা পাথর কেটে এই মন্দির তৈরি করেছিল। প্রায় ৯০ ফুট উঁচু কৈলাস মন্দিরের বিশেষত্ব হল এটি উপর থেকে নিচ পর্যন্ত খোদাই করা হয়েছে।
কৈলাস মন্দির ভেতরে এবং বাইরে দুপাশেই মূর্তি দ্বারা সাজানো হয়েছে। মন্দিরের নীচে অনেক হাতি তৈরি করা হয়েছে, এই হাতিদের উপর এই মন্দিরটি রয়েছে। মহারাষ্ট্রের অন্যতম প্রধান পর্যটন গন্তব্য, ইলোরা ১৬ নম্বর গুহার কাছে অবস্থিত।
মহাদেবের নামে নির্মিত এই দোতলা মন্দিরের বিশেষ বিষয় হল এখানে কোনো ধরনের পূজো হয় না। তবে, বিশ্বের রক্ষক হিসাবে বিবেচিত ভগবান শ্রী বিষ্ণুর অনেক রূপ এবং মহাভারতের দৃশ্যগুলি মন্দিরের ভেতরে সুন্দরভাবে চিত্রিত করা হয়েছে।
রাজা প্রথম কৃষ্ণ যখন এটি নির্মাণ করেছিলেন, তখন ভক্তরা এখানে আসতেন। বিশেষ করে যারা হিমালয়ে অবস্থিত কৈলাস ধামে যেতে পারত না। তাৎপর্যপূর্ণভাবে, এই মন্দিরটিও কৈলাশের আদলে তৈরি করা হয়েছে।
এই কৈলাস মন্দিরকে ১৯৮৩ সালে ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট ঘোষণা করা হয়েছে।
No comments:
Post a Comment