'গরু পাচারকারী আপনারা, আর দোষটা দিয়ে দেবেন আমাদের', বীরভূমের সভা মঞ্চ থেকে বিজেপিকে নিশানা রাজ্যের মন্ত্রী তথা কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমের। চৈত্র সংক্রান্তির দিন বীরভূমের সিউড়িতে বেণীমাধব স্কুলের মাঠে সভা করেছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। সেখান থেকে তিনি রাজ্য সরকারকে একহাত নিয়েছিলেন। ১৬ এপ্রিল অর্থাৎ আজ ঠিক তার পাশের মাঠে ইডিগেশন কলোনির মাঠে সভার আয়োজন করা হয় তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে। উপস্থিত ছিলেন কলকাতার মেয়র তথা রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন তৃণমূলের বীরভূমের কোল কমিটির সদস্য সহ সাংসদ ও অন্যান্য তৃণমূল নেতারা। এদিন সভা মঞ্চ থেকে বিজেপিকে তীব্র আক্রমণ করেন ফিরহাদ। পরবর্তীতে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েও পদ্ম শিবিরকে কটাক্ষ করেন একাধিক বিষয় নিয়ে।
সভা মঞ্চ থেকে এদিন তিনি বলেন, 'গরু পাচারের মামলায় আমাদের নেতাকে ধরে রাখা হয়েছে।' তিনি বলেন, 'গরু আসে উত্তরপ্রদেশ থেকে। উত্তরপ্রদেশে গরু দেখভালের দায়িত্ব ওখানকার মুখ্যমন্ত্রী যোগীজি'র। আর গরু যায় বাংলাদেশে। সেই বাংলাদেশের বর্ডারে রয়েছে অমিত শাহ-জি'র বিএসএফ। অর্থাৎ গরু আসছে ওখান থেকে আর যাচ্ছে বাংলাদেশে। ওখানে ওরা গরুগুলোকে ট্রাকে উঠিয়ে দিচ্ছে, পাঠিয়ে দিচ্ছে আর বিএসএফ দরজা খুলে পার করে দিচ্ছে।'
তিনি বলেন, 'গরুর টাকা যদি সত্যি সত্যি কেউ নিয়ে থাকে, সেটা উত্তরপ্রদেশের বিজেপি আর বিএসএফকে যারা রক্ষা করে সেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। আমরা গরু পাচারের টাকা নিই না। গরু পাচারকারী আপনারা, আর দোষটা দিয়ে দেবেন আমাদের।'
পরবর্তীতে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে, উত্তরপ্রদেশে আতিক ভাই হত্যাকাণ্ড প্রসঙ্গে সুর চড়ান ফিরহাদ। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে তিনি বলেন, 'যারা পশ্চিমবঙ্গে এসে ল অ্যান্ড অর্ডারের সিচুয়েশনের কথা বড় বড় করে বলেন, তাদের নিজেদের রাজ্য উত্তরপ্রদেশ, সেখানে পুলিশের সামনে এনকাউন্টার হয় এবং এটা এই প্রথম নয়। ক্রিমিনালদের কোর্টে নিয়ে যাওয়া হয় না, এনকাউন্টার করে মারা হয়, বুলডোজার দিয়ে বাড়ি ভেঙে দেওয়া হয়। অর্থাৎ যে বাহুবলী তার ল, আর যোগী আদিত্যনাথ এখন উত্তরপ্রদেশের সবথেকে বড় বাহুবলী।'
ফিরহাদ বলেন, 'হিউম্যান রাইটস দৌঁড়ে দৌঁড়ে বাংলায় আসে, সেই হিউম্যান রাইটস কমিশনের কর্তা ব্যক্তিদের বলি দয়া করে উত্তরপ্রদেশে ঘুরুন, যেখানে সামান্য মানবিক অধিকার মানুষের নেই। এই ব্যাপারে সচেষ্ট হন।' মন্ত্রী বলেন, 'বাংলায় রাম রাজত্ব রয়েছে, মানুষ তার নিজের অধিকারে বাঁচে। ধর্ম-জাতি নির্বিশেষে মানুষ সুন্দরভাবে রয়েছে। নিশ্চিতভাবে উস্কানি দেওয়া হয়, দেওয়ার চেষ্টা করা হয়, কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দৃঢ়তার সাথে তাঁর প্রশাসন দিয়ে এর মোকাবিলা করেন।' কটাক্ষ করে তিনি বলেন, 'উত্তরপ্রদেশ আজ দেখিয়ে দিয়েছে যে, বিজেপির থোঁতা মুখ ভোঁতা হয়ে গিয়েছে, তাদের দাবী ল অ্যান্ড অর্ডার, সেটা নস্যাৎ হয়ে গিয়েছে, শুধু উত্তরপ্রদেশের ঘটনাগুলোতে।'
কেজরিওয়ালকে সিবিআই তলব প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "আমরা যারা বিজেপি বিরোধী, তাদের সবাইকে ডেকে পাঠানো হবে। কটাক্ষ করে তিনি বলেন, 'নাকের ডগা থেকে যখন কোটি কোটি টাকা চুরি হয়ে যায় এবং বলতে বাধা নেই, সেই ছবিগুলো প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাদের থাকে, সেই মানুষগুলোকে দেশে না নিয়ে এসে দেশের নেতা যারা, তাদের ওপরে অত্যাচার হচ্ছে। অথচ যারা সত্যি সত্যি দেশের সম্পদ নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে, চুরি করছে, সাধারণ মানুষকে লুট করছে; সে মেহুল চসকি হোক বা নীরব মোদী হোক, এছাড়াও অনেক বড় তালিকা রয়েছে, তাদের ব্যাপারে নীরব।' 'চোরের জলসায় নীরব কেন মোদী!' কটাক্ষ ফিরহাদের।
বড়ঞায় তৃণমূল বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহার বাড়িতে সিবিআই তল্লাশি ও পুকুর থেকে ফোন উদ্ধারের ঘটনায় ফিরহাদ বলেন, এই ব্যাপারে আমার ঠিক জানা নেই। তবে, এজেন্সি যারা বাংলায় নিজেদের দায়িত্ব পালন করেন, তাদের উত্তরপ্রদেশ বা অন্য বিজেপি শাসিত রাজ্যের মত বাধা দেওয়া হয় না। আইন আইনের কাজ করবে, কোর্ট তার বিচার করবে। আমরা এখানে এনকাউন্টার করে দিই না, মারিও না। আমরা আদালতের ওপর বিশ্বাস রাখি এবং আদালত তার বিচার করবে।'
অনুব্রত জেলে থাকা সত্ত্বেও তাঁকে জেলার সভাপতি পদ থেকে সরানো হয়নি, অমিত শাহর এই মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে ফিরহাদ বলেন, 'এটা একটা রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র, সুতরাং ওনার বানানো ষড়যন্ত্রে আমরা পা দেব না।'
একাধিক জায়গায় সিবিআই তল্লাসি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'কোনও অসুবিধা নেই। সিবিআই তো আমাকেও অ্যারেস্ট করেছিল, কি হয়েছে! আইনের ওপর আমাদের ভরসা আছে, আইন আমাদের প্রোটেকশন দেবে।'
এর পাশাপাশি এদিন বীরভূমে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের অভিযোগ উড়িয়ে ফিরহাদ বলেন, 'বীরভূমে আমরা সবাই এক। সকলে একসঙ্গে কাজ করে বীরভূমের প্রতিটা আসন পঞ্চায়েত ভোটে জিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পায়ে অর্পণ করব।'
অমিত শাহ সম্প্রতি সভা করতে এসে ৩৫ টি আসন জেতার কথা বলেন এবং বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন তৃণমূল সরকারটাই আর থাকবে না, এই নিয়ে তীব্র কটাক্ষ ছুঁড়ে দিয়েছেন ফিরহাদ হাকিম। তিনি বলেন, 'দেখেছেন তো, আবকি বার ২০০ পার, টোটাল হয়ে গেল পগারপাড়। এবার ৩৫ অর্থাৎ বিজেপি বাংলা থেকে ফিনিস।'
এছাড়াও শুভেন্দু অধিকারীর দাবী বিজেপির সঙ্গে অনেকে যোগাযোগ রাখছে, এটা নস্যাৎ করে মন্ত্রী বলেন, 'আমার মনে হয় না এরকম কেউ আছেন। আমরা আদর্শ নিয়ে দলটা করি। আমাদের আদর্শ, গান্ধী-বাদ, সুভাষ-বাদ জিন্দাবাদ। আমরা কখনই গডসে-বাদ জিন্দাবাদ বলব না। অতএব আমরা যারা আদর্শ নিয়ে কথা বলি, কখনও বিজেপি করতে পারব না।'
No comments:
Post a Comment