চাকরির দাবীতে জল প্রকল্পের দ্বারে তালা! মহিলার কাণ্ডে গ্ৰামে হাহাকার, বালতি-কলসি বাজিয়ে বিক্ষোভ - press card news

Breaking

Post Top Ad

Post Top Ad

Sunday 23 April 2023

চাকরির দাবীতে জল প্রকল্পের দ্বারে তালা! মহিলার কাণ্ডে গ্ৰামে হাহাকার, বালতি-কলসি বাজিয়ে বিক্ষোভ


চাকরির দাবীতে জল প্রকল্পের দ্বারে তালা! মহিলার কাণ্ডে গ্ৰামে হাহাকার, বালতি-কলসি বাজিয়ে বিক্ষোভ



নিজস্ব সংবাদদাতা, মালদা, ২৩ এপ্রিল: চাকরি পেলে তবেই পানীয় জল পাবেন গ্রামবাসীরা। অভিযোগ, গ্রামেরই এক মহিলার এই দাবীর কারণে পরিশ্রুত পানীয় জল পরিষেবা থেকে বঞ্চিত গোটা গ্রাম। তীব্র দাবদাহের  মাঝেই পানীয় জলের দাবীতে গ্রামীন সড়কে বালতি-কলসি রেখে বিক্ষোভ গ্রামের বাসিন্দাদের। রবিবার ঘটনা ঘিরে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়ায় মালদার চাঁচল-১ নং ব্লকের মহানন্দপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের দৈভাত্তা গ্রামে। প্রশ্নের মুখে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের ভূমিকা। জল সঙ্কটের ঘটনা সামনে আসতেই শুরু রাজনৈতিক চাপানউতোর।


জানা গিয়েছে, মালদার চাঁচল-১ নং ব্লকের দৈভাত্তা গ্রামে প্রায় ৪০০টি পরিবারের বসবাস। পানীয় জলের সঙ্কট দূরীকরণে গ্রামের এক পাশে বসানো হয়েছে পিএইচই প্রকল্প। পরিশ্রুত পানীয় জল পরিষেবা দিতে বাড়ি বাড়ি পৌঁছে গিয়েছে জল সংযোগ, কিন্তু অভিযোগ তিন বছর কেটে গেলেও মেলেনি পানীয় জল। গ্রামবাসীরা একাধিকবার প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট দফতরকে জানিয়েও কোনও সুরাহা হয়নি বলেও অভিযোগ। রবিবার দুপুরে দৈভাত্তা গ্রামীণ সড়কে পরিশ্রুত পানীয় জলের দাবীতে বিক্ষোভ দেখায় গোটা গ্রাম। খালি বালতি-কলসি বাজিয়ে ক্ষিপ্ত মহিলারা বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। পাশাপাশি পঞ্চায়েত নির্বাচনে, ভোট না দেওয়ারও হুঁশিয়ারি দেন। 


গ্রামবাসীদের অভিযোগ, এলাকার এক মহিলা ছবি মণ্ডল পিএইচই প্রকল্পের দ্বারে তালা ঝুলিয়ে রেখেছেন। ফলে জল পরিষেবা ব্যাহত হয়ে পড়েছে এলাকায়। গ্রামে পঞ্চায়েতের তরফে সাব মার্সিবল না থাকায় এক কিমি দূরে মাঠের মধ্যে কৃষি সেচের জল সংগ্রহ করতে হয়।রাতের বেলা আতঙ্কের মধ্যে জল আনতে যেতে হয় মহিলাদের। এই দুর্ভোগ প্রায় তিন বছরের। এ দিকে তীব্র রৌদ্রে পুকুরের জল শুকিয়ে যাওয়ায় গ্রামবাসীরা স্বাভাবিক ভাবে স্নান করতে পারছেন না। রান্না করা, বাসন মাজা, কাপড় কাচার ক্ষেত্রে স্বল্প পরিমাণে জল ব্যবহার হয়। 


গ্ৰামের বাসিন্দা পূর্ণিমা দাস বলেন, "জলের অনেক সমস্যা। সবার বাড়িতে টিউবওয়েল থাকলেও তাতে জল উঠছে না। অনেক দূর ধানের জমি থেকে জল আনতে হয়। এমনকি স্নান করা, বাসন মাজাও দায়, কারণ পুকুরের জল শুকিয়ে গিয়েছে।"


তাঁর অভিযোগ, ছবি মণ্ডল নামে গ্ৰামের মহিলা গোটা গ্ৰামের জল বন্ধ করে রেখেছেন। তিনি বলেন, "ঐ জায়গাটা ওনারই ছিল, তাঁর স্বামী বিক্রি করে দিয়েছিলেন অমল নামে একজনকে। তাকে সরকার থেকে চাকরি দিয়েছে, ও ঘরও করেছে। কিন্তু ছবি মণ্ডলের দাবী, উনি এটা অন্য জায়গায় বিক্রি করেছেন। এমনকি গ্ৰামবাসীরা দলিল দেখাতে বললেও তিনি দেখাননি, জায়গাটা জবরদস্তি দখল করতে চাইছেন।" 


তিনি এও বলেন, সবার ঘরে ঘরে পিএইচই কানেকশন গেলেও শুধু নলই আছে, জল নেই। প্রশাসনের তরফে জলের ব্যবস্থা করার শুধু আশ্বাসই পেয়েছেন বলেও জানান তিনি। তিনি বলেন, 'এদিন আমরা গ্ৰামবাসীরা জলের দাবীতে বিক্ষোভ করলাম। আগামীতে এই জল সমস্যা না মিটলে আমরা পঞ্চায়েতে কেউ ভোট দেব না। '


গ্রামবাসীদের অভিযোগের ভিত্তিতে পাল্টা জবাব দিয়েছেন ছবি মণ্ডল। তিনি দাবী করে বলেন, 'আমার জায়গায় পিএইচই প্রকল্প বসানো হয়েছে। আমি কেন চাকরি পাব না। চাকরি না দিলে আমি তালা খুলব না। তবে চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে গ্রামবাসীরা আমাকে সহযোগিতা করলেই তালা খুলে দিব।'


স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য বিভূতিভূষণ দাস বলেন, 'পিএইচই-র কানেকশন পৌঁছালেও জল পৌঁছায়নি। তাঁর অভিযোগ, 'ছবি মণ্ডল পিএইচই-র কাজে বাঁধা দিচ্ছেন। তিনি জোর করে চাকরি করতে করছেন। কিন্তু এই জায়গা ওনার নয়। অমল মণ্ডলকে ওনার স্বামী বিক্রি করে দিয়েছেন এবং অমল এটা পিএইচই-কে দান করেছে এবং তাকে কাজও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ছবি মণ্ডল জোর করে কাজ পেতে চাইছেন। এই নিয়েই এই জল সমস্যা।'


তিনি বলেন, 'আমরা গত ১২ তারিখ পিএইচই-কে জানিয়েছি, তবে আজও কোনও সুরাহা হয়নি।'  তিনি জানান, জলের জন্য খুবই সমস্যা হচ্ছে। পঞ্চায়েত থেকে একটা ব্যবস্থা করা হয়েছিল, কিন্তু জলের লেয়ার নেমে যাওয়ায় জল উঠছে না।‌ তিনি বলেন, 'কোথাও অভিযোগ করে সুরাহা না হওয়ায় আমরা গ্ৰামবাসীরা আজ রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখিয়েছি।'


এদিকে দৈভাত্তায় জল সঙ্কটের ঘটনা সামনে আসতেই শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর। চাঁচল-১ নং ব্লক বিজেপির কো-কনভেনার প্রসেনজিৎ শর্মা বলেন, 'রাজ্য সরকার ও তার জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর পানীয় জলের পরিষেবা দিতে ব্যর্থ। আধিকারিকেরা নাকে সর্ষের তেল দিয়ে ঘুমোচ্ছেন।'


অন্য দিকে চাঁচল-১ নং ব্লক কংগ্রেস কমিটির সভাপতি আঞ্জারুল হকের বলেন, 'তৃণমূলের আমলে টাকার বিনিময়ে চাকরি হয়। ওই মহিলাকে চাকরি টোপ দিয়ে পিএইচই বসিয়েছে। তৃণমূল প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে পারেনি, যার জেরে জল সঙ্কটে ভুগছে গোটা গ্রাম।'


বিরোধীদের কটাক্ষের পাল্টা জবাব দিয়েছেন চাঁচলের তৃণমূল বিধায়ক নীহাররঞ্জন ঘোষ। বিধায়ক বলেন, 'পিএইচই দফতরের আধিকারিকদের সঙ্গে জল সঙ্কটের বিষয়টি তুলে ধরেছি। দ্রুত জল পরিষেবা স্বাভাবিক হবে।তবে বিজেপি ও কংগ্রেস মানুষের সাথে বঞ্চনা করে।তাদের পাশে মানুষ নেই। তৃণমূল সরকার দুয়ারে দুয়ারে জল পৌঁছে দিয়েছে।'

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad