জমি বিবাদের জেরেই কী পঞ্চায়েত খুন? - press card news

Breaking

Post Top Ad

Post Top Ad

Saturday 18 November 2023

জমি বিবাদের জেরেই কী পঞ্চায়েত খুন?


 জমি বিবাদের জেরেই কী পঞ্চায়েত খুন? 



নিজস্ব সংবাদদাতা, উত্তর ২৪ পরগনা, ১৮ নভেম্বর: কেন বোমা হামলা করে খুন করল আমডাঙা পঞ্চায়েতের প্রধান রুপচাঁদ মণ্ডলকে? ঘটনার ২৪ ঘন্টা পরও উত্তর নেই সাংসদ অর্জুন সিংয়ের কাছে। মন্ত্রী পার্থ ভৌমিক ও স্থানীয় বিধায়ক রফিকার রহমানের উত্তর, 'পুলিশ খুঁজে বের করবে।' পুলিশ এক তৃণমূল নেতার ছেলেকে গ্রেফতার করেছে। 


পুলিশ ও তৃণমূল সূত্রের খবর, ১৮ কাটা বাগান বাড়ি নিয়ে বিবাদের জেরে বৃহস্পতিবার রাত সাতটা নাগাদ বোমা হামলা করে খুন করা হয় আমডাঙা পঞ্চায়েতের প্রধান রুপচাঁদ মণ্ডলকে। ওই সময় কামদেবপুর বাজারে হাট চলছিল। হাজার মানুষ ব্যস্ত কেনাকাটা করতে। সেই সময় বিকট শব্দ শুনতে পান হাটের সবাই। হাটে উপস্থিত আজগর আলী, কার্ত্তিক দাসরা মনে করেন, গাড়ির চাকা ফেটেছে। মুহুর্তের মধ্যে দৌড়াদৌড়ি শুরু হয়। সঙ্গে শব্দ আর ধোঁয়া ঢাকে এলাকা। ততক্ষণে বোমার আঘাতে ডান বাহুতে জখম রুপচাঁদ মণ্ডল। স্থানীয়রা উদ্ধার করে প্রথমে আমডাঙা গ্রামীণ হাসপাতাল পরে বারাসতের এক নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। সাড়ে আটটা নাগাদ মৃত্যু হয় তার। 


এদিকে কামদেবপুর হাটের মধ্যে পড়তে থাকে বোমা। দোকান বন্ধ করে বাজারের ব্যবসায়ীরা নিরাপদে আশ্রয় নেন। হাটের ব্যবসায়ীরা দোকান ফেলে পালিয়ে যান। পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে জিনিসপত্র নিয়ে বাড়ি ফেরেন। পঞ্চায়েতকে হামলার ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই ১২ নম্বর জাতীয় সড়কের ওপর অবরোধ করেন গ্রামবাসীরা। যান চলাচলও স্তব্ধ হয়। তখনই ঘটনাস্থলে পৌঁছায় আমডাঙা থানার পুলিশ। উত্তেজিত জনতা পুলিশকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখায়। খুনিদের অবিলম্বে খুঁজে বের করে কঠিন শাস্তি দিতে হবে বলে জানান গ্রামবাসীরা। এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে বিশাল পুলিশ বাহিনী। 


এদিন রাতেই হাসপাতালে পৌঁছন ব্যারাকপুরের সাংসদ অর্জুন সিং এবং আমডাঙার বিধায়ক রফিকুর রহমান।শুক্রবার দুপুরেও রুপচাঁদের বাড়িতে আসেন তারা। বিকেলে প্রধানের দেহ নিয়ে সোনাডাঙা মোড়ে ১০ মিনিটের জন্য অবরোধ করে গ্রামবাসীরা। দোষীদের গ্রেফতারের আশ্বাস পুলিশ দিলে অবরোধ ওঠে। 


ভর সন্ধ্যায় বোমা হামলা করে প্রধানকে খুন করা হচ্ছে। এলাকায় বোমা গুলি সহজ লভ্য জিনিসে পরিণত হয়েছে। নিরাপত্তা কোথায়? অবরোধের মধ্যে কয়েকজন পুলিশকে প্রশ্ন করেন। রুপচাঁদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে এসে এবিষয়ে সংবাদ মাধ্যমকে রাজ্যের মন্ত্রী পার্থ ভৌমিক বলেন, "বোমা-গুলি রাজ্যে আসছে উত্তরপ্রদেশ থেকে। হামলাকারী খুনিদের পুলিশ খুঁজে বের করবে। আগাম কোনও মন্তব্য করব না।"


খুনের ঘটনার পর প্রথম থেকেই উঠে আসে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের তত্ত্ব। আমডাঙা ও বোদাই পঞ্চায়েতের মধ্যে কামদেবপুর হাটের দখলদারি নিয়ে যে দ্বন্দ্ব ছিল বলে অভিযোগ করেন অনেকেই। তার জেরেই এই খুন বলে প্রাথমিকভাবে সন্দেহ করা হয়। ধৃত আনোয়ার বোদাই পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দা। ফলে ওই তত্ত্বই আরও প্রকট হয়। পুলিশ জানিয়েছে, রাতভর তল্লাশির পর বারাসত জেলা পুলিশ আমডাঙার খুড়িগাছি এলাকা থেকে আনোয়ার আলী নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে। বাকি দুষ্কৃতীদের খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ। ধৃতকে এদিন বারাসত আদালতে পাঠিয়ে সাত দিনের পুলিশ হেফাজতে নিয়ে জেরা শুরু করেছে। 


এদিকে, খুনের ঘটনার জেরে শুক্রবার সকাল থেকে থমথমে এলাকা। যদিও কামদেবপুর হাট বন্ধ থাকে শুক্রবার। যেটুকু মানুষের আনাগোনা হয়, সেটাও হয়নি এদিন। সবার মুখে ছিল আতঙ্কের ছাপ। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি রুখতে বারাসত পুলিশের একটি বিশাল দল ঘটনাস্থলে রয়েছে। 


পুলিশ সূত্রে খবর, রূপচাঁদকে লক্ষ্য করেই বোমা মারা হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের থেকেও তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, দু’জন পায়ে হেঁটে অনেকক্ষণ ধরেই রুপচাঁদের গতিবিধির উপর নজর রাখছিলেন। পঞ্চায়েত প্রধানকে রাস্তার এক প্রান্তে ফাঁকা জায়গায় দেখতে পেয়েই তাঁরা বোমা ছোঁড়েন। এর পরেই সেখানে থেকে পালিয়ে কামদেবপুর বাজারের ভিড়ে মিশে যান তাঁরা। এই ঘটনায় উত্তেজনা ছড়ায় এলাকায়। পাল্টা রুপচাঁদের অনুগামীরাও বোমা মারতে শুরু করেন। পরে রাস্তায় ঝোপে বেশ কিছু বোমা পড়ে থাকতে দেখা যায়। পুলিশ এসে সেগুলি উদ্ধার করে। পঞ্চায়েত প্রধান খুনের প্রকৃত কারণ কী, সে ব্যাপারে পুলিশের তরফে এখনও স্পষ্ট করে কিছু জানানো হয়নি। 


পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, তৃণমূল নেতার সঙ্গে রাজনৈতিক কিংবা ব্যক্তিগত শত্রুতা ছিল কি না, তা জানার চেষ্টা চলছে। আনোয়ার ছাড়াও তিন জনের নাম ছিল পরিবারের দায়ের করা এফআইআর-এ। তাঁরা হলেন তোয়েব আলী মণ্ডল, পাপ্পু এবং আফতার। তোয়েবেরই ছেলে আনোয়ার। 


রুপচাঁদের বাবা মহম্মদ আলী মণ্ডল বলেন, "তোয়েব ও আমার ছেলে এক সঙ্গে তৃণমূল করত। বছর দশের আগে ওরা জমি ব্যবসা শুরু করে।পাঁচ বছর আগে জমি ব্যবসা নিয়ে ঝামেলা হয়। একটা জমি নিয়ে পার্টি অফিসে মীমাংসা বৈঠক হয়েছিল। তোয়েব এবং ওর দুই ছেলে রুপচাঁদকে হুমকি দিয়েছিল।"

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad