'সবার হিসাব হবে', আরজি কর আবহে কড়া বার্তা প্রধানমন্ত্রী মোদীর
প্রেসকার্ড নিউজ ন্যাশনাল ডেস্ক, ২৫ আগস্ট: আরজি কর কাণ্ডে দেশজুড়ে তোলপাড়। এই আবহে মহিলাদের বিরুদ্ধে হওয়া অপরাধ নিয়ে সুর চড়ালেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। কলকাতা ধর্ষণ-খুনের মামলার নাম না নিয়েই মহিলাদের সঙ্গে অপরাধ করা লোকেদের কার্যত হুঁশিয়ারি দেন তিনি। রবিবার (২৫ আগস্ট) মহারাষ্ট্রের জলগাঁওয়ে একটি সমাবেশে ভাষণ দেওয়ার সময় এই বিষয়ে সরব হন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি এটাও স্পষ্ট করেছেন যে, যারা অপরাধীদের সাহায্য করবে তাদেরও রেহাই দেওয়া হবে না। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকেও নাম না নিয়েই নিশানা করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, প্রত্যেকের হিসাব করা হবে এবং উপরে থেকে নীচে পর্যন্ত এই মেসেজ একদম পরিষ্কার যাওয়া উচিৎ।
কলকাতা ধর্ষণ-খুন মামলায় মমতা সরকারের বিরুদ্ধে একাধিক প্রশ্ন উঠছে। রাজ্য পুলিশের সিস্টেমও একাধিক প্রশ্ন বাণে বিদ্ধ। মনে করা হচ্ছে এই কারণেই মহারাষ্ট্র থেকেই বাংলার আধিকারিক ও সরকারকে সতর্ক করেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেন, 'মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধ এমন যে, যার জন্য কোনও ক্ষমা হয় না। হাসপাতাল থেকে স্কুল পর্যন্ত যে স্তরেই অবহেলা ঘটুক না কেন, যারাই তা করবে, তাদের সবার হিসাব করা হবে।'
লখপতি দিদি সম্মেলনে অংশ নিতে রবিবার মহারাষ্ট্রের জলগাঁও পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী মোদী। আরজি কর কাণ্ডের উল্লেখ না করে তিনি বলেন, "আজ আমি আবারও দেশের প্রতিটি রাজনৈতিক দলকে বলব এবং রাজ্য সরকারকে বলব যে, মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধ ক্ষমার অযোগ্য পাপ। অপরাধী যেই হোক, সে যেন না বাঁচে। তাকে যে কোনও রূপে সাহায্যকারীর বাঁচা একেবারেই উচিৎ নয়।"
তিনি বলেন, "হাসপাতাল হোক, স্কুল হোক, অফিস হোক বা পুলিশ ব্যবস্থা... যে স্তরেই গাফিলতি থাকুক না কেন, সবার হিসেব হওয়া উচিৎ। মহিলাদের ওপর অত্যাচার করা মানুষদের কঠোর থেকে কঠোরতর শাস্তি দিতে আমাদের সরকারও ক্রমাগত আইন কঠিন করছে।" তিনি বলেন, "মহিলাদের রক্ষা করা সমাজ হিসেবে আমাদের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব। নারী নির্যাতনকারীদের কঠোর শাস্তি দিতে আইন আরও কঠোর করা হচ্ছে।"
আরজি কর কাণ্ড নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার ব্যাকফুটে আছে বলে মনে হচ্ছে। এর সবচেয়ে বড় কারণ, যে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে এই নৃশংসতার অভিযোগ উঠেছে সে নিজে সিভিক ভলেন্টিয়ার। মৃতার পরিবার অভিযোগ করেছে যে, প্রথমেই তাঁদের মেয়ের আত্মহত্যার কথা জানানো হয়। এমতাবস্থায় মমতা সরকারের পুলিশ মামলা চাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ। তবে পুলিশ বিষয়টি অস্বীকার করেছে।
অন্যদিকে, আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে ১৪ আগস্ট মেয়েদের রাত দখলের কর্মসূচির সময় আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে বিক্ষোভরত মানুষ ও চিকিৎসকদের ওপর হামলা হয়। শুধু তাই নয়, সেখানে ভাঙচুরও চালানো হয়। তাণ্ডব চালানোর অভিযোগ ওঠে একদল দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে। বিজেপি সহ বিরোধী দলগুলির অভিযোগ, মমতা সরকার প্রমাণ নষ্ট করার চেষ্টা করেছে। বিজেপি এও বলেছে যে, হামলাকারীরা তৃণমূলের সঙ্গে যুক্ত ছিল। এর পাশাপাশি কলকাতা পুলিশের ওপর ওঠা গাফিলতির অভিযোগও মমতা সরকারের ঝামেলা বাড়িয়েছে।
কয়েক মাস আগে সন্দেশখালিতে নারী নির্যাতনের অভিযোগ নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। সেই সময়েও মমতা সরকারের বিরুদ্ধে সরব হন অনেকে। একজন মহিলা মুখ্যমন্ত্রী থাকার পরেও রাজ্যে মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধ বন্ধ হচ্ছে না! এই নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। বিরোধীরাও এই ইস্যুতে সরকারকে ঘেরাও করেছে।
এই আবহে মহিলাদের বিরুদ্ধে হওয়া অপরাধ ও এর শাস্তি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী মোদীর বক্তব্য যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। কারণ জলগাঁওয়ে যে লখপতি দিদির অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী মোদী ভাষণ দেন, সেখানে ১১ লক্ষ লাখপতি দিদি উপস্থিত ছিলেন। এই বিবৃতি দিয়ে, প্রধানমন্ত্রী মোদী দেখিয়েছেন যে তাঁর সরকার মহিলাদের সুরক্ষার জন্য সম্পূর্ণ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এছাড়াও তাঁর মন্তব্যটি গুরুত্বপূর্ণ, কারণ আরজি কর কাণ্ডের পরেও অনেক জায়গায় মহিলাদের প্রতি সহিংসতার খবর সামনে এসেছে।
No comments:
Post a Comment