'পর্না সবকিছুর বিচার পায় কিন্তু আরজি করের অভয়া পায় না', সরব নেট পাড়া
নিজস্ব প্রতিবেদন, কলকাতা, ২৩ আগস্ট: কথায় বলে চলচ্চিত্র সমাজের আয়না। তবে চলচ্চিত্র হোক বা ধারাবাহিক, এগুলোতে যা দেখানো হয়, সেই সবটা কী বাস্তব জীবনে ঘটা আদৌ সম্ভব? উত্তর হবে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই না। আর আরজি কর কাণ্ডের আবহে এই প্রশ্নই ফের উঠে এল নেটিজেনদের মুখে। এর পাশাপাশি কিছুটা হতাশাও ঝরে পড়ল তাঁদের মন্তব্যে। তাঁদের কথায়, 'পর্না সবকিছুর বিচার পায় কিন্তু আরজি করের অভয়া পায় না।'
বর্তমানে টেলিভিশনের অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি ধারাবাহিক হল নিম ফুলের মধু। ধারাবাহিকে মূল চরিত্র পর্না। ধারাবাহিকের গল্প অনুযায়ী, সে সৃজন দত্তের স্ত্রী, দত্ত পরিবারের বৌমা। পরিবারের যে কোনও সমস্যায় যথারীতি সেই মুশকিল আসান। এর পাশাপাশি পর্না একজন সাংবাদিকও। ফলত সামাজিক নানান সমস্যাও তুড়ি মেরে সমাধান করে দিচ্ছে সে। যদিও মাথায় চোটের কারণে স্মৃতি ভুলে এখন সে পর্না বসু, তবে তাঁর তারকাঁটা স্বভাব মোটেও থিতো হয়নি বরং আগের চেয়েও বেশি সক্রিয় ও বুদ্ধিমতি হয়ে উঠেছে সে। আরও দ্রুতগতিতে যে কোনও সমস্যার সমাধান করে দিচ্ছে পর্না।
সম্প্রতি ধারাবাহিকে যা দেখানো হচ্ছে, তা বাস্তবেই এক জ্বলন্ত সমস্যা। ধারাবাহিকে দেখানো হচ্ছে বাংলার এক জনপ্রিয় সুপারস্টার ইন্দ্রকুমারের কাহিনী। ভালো মানুষ সেজে থাকলেও আসলে তিনি একজন লম্পট, চরিত্রহীন মানুষ। তাঁরই লালসার শিকার হয় পর্নার ননদ বর্ষা। বর্ষাকে সিনেমায় গান গাইবার সুযোগ করে দেওয়ার অছিলায় ডেকে পাঠায় ইন্দ্রকুমার এবং একা ঘরে তার শ্লীলতাহানির চেষ্টা করে। সেখান থেকে কোনও ক্রমে পালিয়ে বাঁচে বর্ষা। বাড়িতে গিয়ে সে কান্নায় ভেঙে পড়ে এবং পর্নাকে এই বিষয়ে জানায়। পর্নাও ইন্দ্রকুমারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। অভিনেতার কুকীর্তি ফাঁসের আপ্রাণ চেষ্টা করে।
তদন্তে নেমে সে জানতে পারে শুধু বর্ষাই নয়, তার মত অনেক মেয়েও এই নোংরামির শিকার। সবশেষে পর্নার বুদ্ধিমত্তার জোরে ইন্দ্রকুমারের শুধু কুকীর্তিই ফাঁস হয় না, আদালত তাকে যাবজ্জীবনের কারাদণ্ডে দণ্ডিত করে। এই এপিসোডের টেলিকাস্ট দেখা যায় শুক্রবার সমাজমাধ্যমে। আর এখানেই নেটিজেনরা রাজ্যের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে সরব হন।
একজন নেটিজেন লিখেছেন, 'পর্না সবকিছুর বিচার পায় কিন্তু আরজি করের অভয়া পায় না।' অন্য এক নেটিজেন লিখেছেন, 'সবই বাস্তবে ঘটছে, জানি না আমরা সুবিচার কবে পাব।' অন্য এক নেটিজেন লিখেছেন, 'এখানে তো জাস্টিস পেল, রিয়েল জাস্টিস কবে হবে।' 'এভাবে যদি বাস্তব সমাজেও শাস্তি পেত, তাহলে সমাজ নোংরা-মুক্ত হত', লিখেছেন এক নেটিজেন। অন্য আরেক জনের কথায়, 'টিভি সিরিয়ালে তো শাস্তি পেয়ে যাচ্ছে, বাস্তবে আমরা কবে বিচার পাব। এইভাবে দেখিয়ে কি হবে যেটা কাজেই না লাগবে।' কেউ আবার লিখেছেন, 'গল্পের ইন্দ্রকুমারের শাস্তি হল কিন্তু বাস্তবের ইন্দ্রকুমারদের কী হবে।'
আরজি কর হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ-খুনের ঘটনায় তোলপাড় রাজ্য থেকে দেশ। দিকে দিকে চলছে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ। সিবিআই এই মামলার তদন্ত করছে। সুপ্রিম কোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত মামলা করেছে, যার শুনানি হয়েছে বৃহস্পতিবারও। ঘটনার প্রতিবাদে পথে নেমেছেন সকল স্তরের মানুষ। কিন্তু দোষীরা কবে পাবে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি? কোথাও গিয়ে ফের নিরাশ হতে হবে না তো? বছরের পর বছর কেটে যাবে না তো বিচারের অপেক্ষায়? এই সকল প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে অনেকেরই মনে। সেই বিষয়টিই যেন ফুটে উঠল নেটিজেনদের মন্তব্যে।
No comments:
Post a Comment