হাসিনা সরকার উৎখাত মডেলে কলকাতায় ছাত্রদের নবান্ন অভিযানের ডাক
কলকাতা: বাংলাদেশের আদলে ক্ষমতা দখলের সলতে পাকানোর উদ্যোগ নিল পশ্চিমবঙ্গের ছাত্র সমাজ। গণভবনের উদ্দেশ্যে লংমার্চের আদলে নবান্ন অভিযানের ডাক দিল তারা। চলতি মাসের ২৭ তারিখের নবান্ন অভিযানকে সমর্থন জানিয়েছে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা তথা বিজেপির বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী।
কলকাতার আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুনের ঘটনায় এখনও পর্যন্ত একজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ইতিমধ্যে তদন্ত ভার নিয়ে তদন্ত করছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই। গত দুই সপ্তাহের জনসাধারণ থেকে শুরু করে সর্বস্তরের মানুষ আন্দোলন করেছেন দোষীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবীতে। শুধু কলকাতা নয়, রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় প্রতিদিনই কোনও না কোনও সংগঠনের তরফে চলছে প্রতিবাদ, বিক্ষোভ-মিছিল।
বুধবার কলকাতায় কংগ্রেস ও বিজেপি বিক্ষোভ মিছিল করে। পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয়, লাঠি চার্জ করে পুলিশ। কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়। কলকাতা হাইকোর্টের অনুমতি নিয়ে বুধবার সকালে শ্যামবাজার পাঁচ মাথার মোড়ে টানা ধরনা কর্মসূচিতে বসেছে বিজেপি। বিজেপি-সিপিএমের ছাত্র ও অন্যান্য শাখা সংগঠনের সদস্যরা প্রতিদিন কলকাতা সহ রাজ্য জুড়ে বিক্ষোভ মিছিল করছে। রাজনৈতিক দলের পতাকা ত্যাগ করে সাধারণ মানুষকে সাথে নিয়ে সিপিএমের শাখা সংগঠনগুলো টানা মিছিলে কার্যত রাজ্যকে গনপ্রতিবাদের দিকে নিয়ে গেছে। সাধারণ মানুষও অংশ নিয়েছেন এই প্রতিবাদে।
শেখ হাসিনা সরকার উৎখাত করতে ঢাকা সহ বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় যেভাবে 'দফা এক দাবী এক, শেখ হাসিনার পদত্যাগ' স্লোগানে উদ্বুদ্ধ হয়ে কাতারে কাতারে মানুষ পথে নেমেছিলেন, ঠিক সেভাবেই বাংলাদেশের স্লোগানকে পুঁজি করে সিপিএম, বিজেপি, আইএসএফ এবং কংগ্রেস স্লোগান দিচ্ছে 'দফা এক দাবী এক মুখ্যমন্ত্রী মমতার পদত্যাগ'। এই স্লোগান এখন কলকাতা সহ বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে। উদ্বুদ্ধ হয়েছে রাজ্যের একাংশের মানুষ। কয়েক মাস আগে শেষ হওয়া লোকসভা নির্বাচনে বাংলার ষাট শতাংশের কাছাকাছি মানুষ তৃণমূলকে ভোট দেয়নি। বিশেষ করে শহর অঞ্চলের শিক্ষিত সচেতন মানুষের ভোট পায়নি তৃণমূল। সেই মানুষগুলোই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের পতন চেয়ে আন্দোলনে সামিল হচ্ছেন।
বুধবার দুপুরে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ সহ বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজের জুনিয়র ডাক্তাররা বিক্ষোভ মিছিল করেন। এমনকি কলকাতার বিভিন্ন আইটি সংস্থার কর্মরতরাও মিছিল করেন সল্টলেকে। জব চার্নকের তৈরি কলকাতার ইতিহাসে তার সময় থেকে বর্তমান পর্যন্ত এ ধরনের লাগাতার মিছিল, বিক্ষোভ-প্রতিবাদ গত ১৩ দিনে প্রথম ঘটেছে।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় আগেই দুই দফায় বলেছেন, "বাংলাদেশকে দেখে অনেকেই সরকার ফেলার চেষ্টা ও ষড়যন্ত্র করছে। আমাদের সরকার জনগণের নির্বাচিত সরকার।" রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন, "সব পরিবারের থেকে একজন করে নবান্ন অভিযানে থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে, আমি ব্যক্তিগতভাবে সেখানে যাব। এটা কোনও দলের ডাক নয় সকলেই বুঝতে পারছেন। সব সমস্যার মাথা মুখ্যমন্ত্রী, তাঁকে বলব ২৬ তারিখের মধ্যে পদত্যাগ সহ সব ব্যবস্থা নিয়ে রাখুন, যাতে ২৭ তারিখ গুলি চালাতে না হয়।"
ছাত্রদের ডাকা অরাজনৈতিক নবান্ন অভিযান ঘিরে নড়ে চড়ে বসেছে পুলিশ প্রশাসন থেকে শুরু করে শাসক দল তৃণমূল।
No comments:
Post a Comment