বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার চাইলেন হাসিনা
প্রেসকার্ড নিউজ ওয়ার্ল্ড ডেস্ক, ১৪ আগস্ট: বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মঙ্গলবার জুলাইয়ের ‘হত্যা ও ভাঙচুরের’ ব্যাপক তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে শাস্তির জন্য কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
তাঁর স্পষ্ট পদত্যাগের পর বাংলাদেশ ত্যাগের পর তার প্রথম বিবৃতিতে শেখ হাসিনা নাগরিকদের ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস মর্যাদা ও গৌরবের সাথে পালন করার আহ্বান জানান। তিনি বঙ্গবন্ধু ভবনে ফুলের মালা অর্পণ ও সকল আত্মার মুক্তির জন্য প্রার্থনা করার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানান।
শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় তার পক্ষে এক্স-এ তার সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেলের মাধ্যমে একটি বিবৃতি জারি করেছেন, উল্লেখ করেছেন যে বাংলাদেশ একটি সম্মানিত উন্নয়নশীল দেশ হিসাবে স্বীকৃতি অর্জন করলেও 'সম্মান কলঙ্কিত হয়েছে।'
"গত জুলাই থেকে আন্দোলনের নামে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ এবং সহিংসতার কারণে অনেক নতুন প্রাণ হারিয়েছে... আমার মতো যারা প্রিয়জনকে হারানোর বেদনা নিয়ে বেঁচে আছেন তাদের প্রতি আমার সমবেদনা। হত্যা ও ভাংচুরের সঠিক তদন্ত করা হোক এবং দোষীদের চিহ্নিত করে সেই অনুযায়ী শাস্তি দেওয়া হোক,” বিবৃতিতে বলা হয়েছে।
মুজিবুর রহমানের মূর্তির কথিত অসম্মান প্রসঙ্গে প্রাক্তন এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে স্মৃতিগুলো আমাদের সান্ত্বনা ছিল সেগুলো পুঁড়ে ছাই হয়ে গেছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে চরম অসম্মান করা হয়েছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কর্মসূচি ঘিরে জুলাই মাসে সংগঠিত হত্যাকাণ্ডের বিচার চেয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘স্বজনহারা বেদনা নিয়ে আমার মতো যারা বেঁচে আছেন, তাদের প্রতি সহমর্মিতা জানাই। আমি এই হত্যাকাণ্ড ও নাশকতার সঙ্গে জড়িতদের যথাযথ তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের চিহ্নিত করে উপযুক্ত শাস্তিমূলক ব্যবস্থার দাবি জানাচ্ছি।’
মঙ্গলবার রাতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় তাঁর ভ্যারিফাই ফেসবুক পাতায় শেখ হাসিনার চিঠি পোস্ট করেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দাবির মুখে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করে ভারত চলে যান শেখ হাসিনা। এরপর তাঁর প্রথম কোনো বক্তব্য সামনে এল।
চিঠিতে শেখ হাসিনা বলেন, ‘গত জুলাই মাস থেকে আন্দোলনের নামে যে নাশকতা, অগ্নি সন্ত্রাস ও সহিংসতার কারণে অনেকগুলি তাজা প্রাণ ঝরে যাচ্ছে। ছাত্র, শিক্ষক, পুলিশ এমনকি অন্তঃসত্ত্বা নারী পুলিশ, সাংবাদিক, সাংস্কৃতিক সেবী, কর্মজীবী মানুষ, আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা কর্মী, পথচারী এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত যারা সন্ত্রাসী আগ্রাসনের শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন, তাঁদের প্রতি শোক জ্ঞাপন করছি এবং তাঁদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।’
তিনি বলেন, ‘১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্ট ধানমন্ডি বঙ্গবন্ধু ভবনে যে নারকীয় হত্যার ঘটনা ঘটেছিল সেই স্মৃতি বহনকারী বাড়িটি আমরা দুই বোন বাংলার মানুষকে উৎসর্গ করেছিলাম। গড়ে তোলা হয়েছিল স্মৃতি জাদুঘর। দেশের সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে দেশ বিদেশের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এই বাড়িতে এসেছেন। স্বাধীনতার স্মৃতি বহনকারী এই জাদুঘরটি।’
দেশবাসীর উদ্দেশ্যে শেখ হাসিনা বলেন, ‘অত্যন্ত দুঃখের বিষয় যে স্মৃতিটুকু বুকে ধারণ করে আপনজন হারাবার সকল ব্যথা বেদনা বুকে চেপে রেখে বাংলাদেশের দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাবার লক্ষ্য নিয়ে আপনাদের সেবা করে যাচ্ছি। তার শুভ ফল ও আপনারা পেতে শুরু করেছেন। বাংলাদেশ বিশ্বে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছে। আজ তা ধূলিসাৎ হয়ে গেছে।’
তিনি বলেন, ‘আর যে স্মৃতিটুকু আমাদের বেঁচে থাকার অবলম্বন ছিল তা পুড়িয়ে ছাই করে দেওয়া হয়েছে। চরম অবমাননা করা হয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি, যার নেতৃত্বে আমরা স্বাধীন জাতি হিসেবে আত্মমর্যাদা পেয়েছি আত্মপরিচয় পেয়েছি স্বাধীন দেশ পেয়েছি। লাখো শহীদের রক্তের প্রতি অবমাননা করেছে। আমি দেশবাসীর কাছে এর বিচার চাই।’
নেতা-কর্মীদের ১৫ আগস্ট পালন করার নির্দেশনা দিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের কাছে আবেদন জানাই যথাযথ মর্যাদার সঙ্গে ভাব গম্ভীর পরিবেশে জাতীয় শোক দিবস ১৫ আগস্ট পালন করুন। বঙ্গবন্ধু ভবনে পুষ্প মাল্য অর্পণ ও দোয়া মোনাজাত করে সকলের আত্মার মাগফিরাত কামনা করুন। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বাংলাদেশের মানুষের মঙ্গল করুন। খোদা হাফেজ।’
No comments:
Post a Comment