দেশের মধ্যে এই প্রথম! বিধানসভায় পাস ধ-র্ষণ-বিরোধী অপরাজিতা বিল
কলকাতা: আরজি কর কাণ্ডে উত্তাল বাংলা সহ গোটা দেশ। এই আবহেই মঙ্গলবার পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় পাস হয়ে গেল ধর্ষণ বিরোধী অপরাজিতা নারী ও শিশু বিল, ২০২৪। বিরোধীপক্ষ এই বিলের বিরোধিতা করেনি, ফলে বিলটি সর্বসম্মতিক্রমে পাস হয়ে যায়। উল্লেখ্য, দেশের মধ্যে এই প্রথম কোনও রাজ্য ধর্ষণের বিরুদ্ধে বিশেষ বিল পাস করল। কেন্দ্রের ন্যায় সংহিতায় ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের ঘটনায় কঠোর আইনের উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু সেই আইনে সংশোধন ঘটিয়ে ধর্ষণ, গণধর্ষণ এবং নারী ও শিশুদের ওপর যৌন অপরাধের ক্ষেত্রে পৃথক বিল পাস করল রাজ্য। এবারে বিলটি রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের কাছে পাঠানো হবে। তিনি সম্মতি দিলেই রাজ্যে আইনে পরিণত হবে ধর্ষণ বিরোধী অপরাজিতা বিল।
এদিন বিধানসভায় এই বিলের সংশোধনী ধারা উল্লেখ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, 'নতুন বিল আনার উদ্দেশ্য তিনটি - বর্ধিত শাস্তি, দ্রুত তদন্ত ও দ্রুত ন্যায়বিচার। নারীদের ওপর যৌন হিংসার শাস্তি হোক কঠোর থেকে কঠোরতম। ভারতীয় ন্যায় সংহিতা আইনে যা উল্লেখ করা হয়েছে, তা এই আইনে আরও বেশি কঠোর করা হয়েছে। ন্যায় সংহিতায় বিধান রয়েছে ধর্ষণ ও গণধর্ষণে ১০ থেকে ২০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড, বিশেষ ক্ষেত্রে যাবজ্জীবন। আমরা তা বাড়িয়ে আমৃত্যু সশ্রম কারাদণ্ড এবং গুরুতর অপরাধের ক্ষেত্রে প্রাণদণ্ডের বিধান এনেছি।'
ধর্ষণের ঘটনায় ভারতীয় ন্যায় সংহিতা তদন্তের সময় দু'মাস দেওয়া হয়েছে। সেখানে ২১ দিন সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে অপরাজিতা বিলে। মূল আইনে এক বছরের মধ্যে শাস্তি দেওয়ার উল্লেখ রয়েছে। রাজ্য সরকার সেখানে আইন সংশোধন করে সময় কমিয়ে এক মাসে এনেছে।
অ্যাসিড হামলার কথাও অপরাজিতা বিলে উল্লেখ রয়েছে। ভারতীয় ন্যায়-সংহিতায় এর শাস্তি হিসেবে দশ বছরের কারাদণ্ড থেকে সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন উল্লেখ রয়েছে। আর রাজ্য সরকারের পাস করা বিলে উল্লেখ রয়েছে মৃত্যুদণ্ডের।
মূল আইনে কোনও থানায় ঘটনা নথিভুক্ত করার দু'মাসের মধ্যে তদন্ত শেষ করার কথা বলা রয়েছে। আর সংশোধনী এই বিলে সেটি করতে হবে ২১ দিনের মধ্যে। কোন ক্ষেত্রে ২১ দিনে তদন্ত শেষ করা না গেলে তখন এই তদন্তকারী সংস্থাকে অতিরিক্ত ১৫ দিন সময় দেওয়া যাবে, তবে সেটা পুলিশ সুপার পদমর্যাদার কেউ দিতে পারবেন।
মুখ্যমন্ত্রী এদিন বলেন, 'আমরা এই ধরণের ঘটনায় অপরাজিতা টাস্কফোর্স গঠন করব। বিশেষ এই দল ২১ দিনের মধ্যে তদন্ত শেষ করবে। শিশুদের ওপর ধর্ষণের ঘটনায় সাতদিনে তদন্ত শেষ করতে হবে।'
প্রসঙ্গত, আরজি কর হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ-খুনের ঘটনায় তোলপাড় চলছে। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ছাত্র পরিষদের সমাবেশ থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছিলেন ধর্ষণ-বিরোধী বিল আনার কথা। সেই মতই মঙ্গলবার বিধানসভায় এই বিল পেশ করা হয় এবং অপরাজিতা বিল পাস হয় সর্বসম্মতিক্রমে। এই দিনটিকে 'ঐতিহাসিক' বলে উল্লেখ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা।
No comments:
Post a Comment