'৪৮ ঘন্টার সময় কেন?'- কেজরিওয়ালের পদত্যাগ ঘোষণা নিয়ে প্রশ্ন বিজেপির
প্রেসকার্ড নিউজ ন্যাশনাল ডেস্ক, ১৫ সেপ্টেম্বর: তিহাড় থেকে বাইরে আসার মাত্র দু'দিন পর মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার ঘোষণা করেছেন আম আদমি পার্টির আহ্বায়ক তথা দিল্লীর মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। রবিবার তিনি জানান, দু"দিন পর মুখ্যমন্ত্রীর পদ ছাড়বেন। কেজরিওয়ালের এই ঘোষণার পরে, বিজেপি প্রশ্ন তুলেছে কেন মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগের জন্য ৪৮ ঘন্টা প্রয়োজন? বিজেপি নেতা সুধাংশু ত্রিবেদী বলেন, 'কেন কেজরিওয়াল জেলে থাকা অবস্থায় পদত্যাগ করেননি, জেল থেকে বেরিয়ে এসে কেন পদত্যাগের কথা বলছেন?'
এক সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি প্রশ্ন করেন, 'কেন দিল্লীর মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগের জন্য ৪৮ ঘন্টা সময় লাগবে? এই ঘন্টায় তাঁর কী কী মীমাংসা করতে হবে, এর রহস্য কী?' তিনি বলেন, 'কেজরিওয়াল যদি কোনও ফাইলে সই করতে না পারেন, তাহলে এমতাবস্থায় তাঁর ব্যক্তিগত কাজ কী?' তিনি বলেন, 'কেজরিওয়াল প্রথম মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন যাঁকে সুপ্রিম কোর্ট প্রতিবন্ধ করেছে; না তো কার্যালয়ে যেতে পারবেন, না কোনও ফাইলে সই করতে পারবেন। মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার অর্থ কেজরিওয়াল তাঁর অপরাধ স্বীকার করেছেন।'
বিজেপি নেতা প্রশ্ন করেন, কেজরিওয়ালের দলের মধ্যে এমন কোনও দঙ্গল আছে, যা তিনি ইস্তফার বাধ্যতায় চাপা দিতে চান? কেজরিওয়াল, বলুন এই বাধ্যতা কী, জনতা জানতে চায়।' তিনি বলেন, 'কেজরিওয়ালের আচরণ ও বক্তৃতা বিভ্রান্তি ও সন্দেহে ঘেরা।' তিনি বলেন, 'কেজরিওয়াল দেশের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী যিনি তাঁর সরকারের তৈরি করা নিয়ম ভাঙলেন।'
বিজেপি নেতা বলেন, 'যখন তাঁর বিরুদ্ধে মদ কেলেঙ্কারির অভিযোগ উঠেছিল, তখন দিল্লীতে মদের নদী তৈরি করা ব্যক্তিরা, মদ কেলেঙ্কারির অভিযুক্ত মহাত্মা গান্ধীর সমাধিতে শপথ নেওয়ার ভান করছিলেন। যেখানে মহাত্মা গান্ধীর জন্মদিন, ২ অক্টোবর ছিল ড্রাই ডে।' সুধাংশু ত্রিবেদী বলেন, 'এর চেয়ে বড় রসিকতা আর কী হতে পারে।' তিনি বলেন, আজকে এই লোকেরা ভগৎ সিংয়ের কথা বলছেন। ভগৎ সিং-এর আত্মা আজ কষ্টে থাকবেন, তাঁর নাম ব্যবহার করছেন দুর্নীতির অভিযুক্তরা।'
সুধাংশু ছাড়াও, দিল্লী বিজেপির সভাপতি বীরেন্দ্র সচদেবাও অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে তীব্র আক্রমণ করেন। তিনি বলেন যে, কেজরিওয়ালের আচরণ, ভাবমূর্তি এবং চরিত্র সবই সন্দেহের মধ্যে রয়েছে।' তিনি বলেন, 'কেজরিওয়াল জি বলছেন যে তিনি জনগণের মধ্যে যাবেন এবং জনগণ তাঁর সিদ্ধান্ত নেবেন। তো আমি তাঁকে বলতে চাই যে, দিল্লীর জনতা তিন মাস আগে লোকসভা নির্বাচনে তাঁদের সিদ্ধান্ত শুনিয়ে দিয়েছে, যখন আপনি বলেছিলেন জেল না বেল? তাই দিল্লীর মানুষ আপনাকে পরাজিত করে জেলে পাঠিয়েছেন।'
বীরেন্দ্র সচদেবা আরও বলেন, 'কেজরিওয়ালের দুর্নীতি দিল্লীকে খোকলা করে দিয়েছে। জলাবদ্ধতায় দিল্লীর ৪০ থেকে ৪৫ শিশু মারা গেছে, ওই শিশুদের মৃত্যুর কারণ কেজরিওয়ালের দুর্নীতি, তিনি নালা পরিষ্কার করাননি। সারচার্জসহ বিদ্যুৎ বিল আসছে। কেজরিওয়াল বিদ্যুৎ কোম্পানি থেকে কমিশন খায়।' তিনি বলেন, দিল্লীতে আমরা দেখেছি মানুষ প্রতি ফোঁটা জলের জন্য আকুল, জলের জন্য মানুষ খুন হয়েছেন। কেজরিওয়াল ট্যাঙ্কার মাফিয়াদের কোলে বসে আছেন।'
দিল্লীর রাজ্য বিজেপি সভাপতি বলেন, 'কেজরিওয়াল স্বাস্থ্য সুরক্ষার কথা বলেন, কিন্তু আজ আইসিইউ কাজ করছে না। সরকারি হাসপাতালে বিক্রি হচ্ছে নকল ওষুধ। দিল্লীতে নবম ও একাদশের পড়ুয়াদের ফেল করিয়ে দেওয়া হয় কারণ বোর্ডের ফলাফল উন্নত করতে হবে। ৭৩ হাজার টাকা লোকসানে দিল্লী জল বোর্ড। অটো পারমিট, প্যানিক বাটন ইত্যাদি সবকিছুতে প্রতারণা করা হয়েছে। যে ব্যক্তি ৮ লাখ টাকা মূল্যের পর্দা এবং ২ কোটি টাকার বিছানায় ঘুমায়, তাঁকে জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে হবে।' শীশ মহল দেখানোর সাহস কেজরিওয়ালের আছে কি না, তা নিয়ে তিনি প্রশ্ন করেন।
বিজেপি সভাপতির আরও প্রশ্ন, 'কেজরিওয়াল যদি মদ নীতিতে কোনও কেলেঙ্কারি না করে থাকেন তবে তদন্ত হওয়ার সাথে সাথে কেন তিনি মদ নীতি প্রত্যাহার করলেন?' তিনি বলেন, 'মদ কেলেঙ্কারিতে পুরো দলই দোষী। দিল্লীর মানুষকে লুটপাট করার কাজ করেছে দলটি।'
তিনি স্বাতি মালিওয়ালকে নিয়েও কেজরিওয়ালকে তীব্র আক্রমণ করেছেন। বিজেপি নেতা বলেন, 'এক মহিলাকে তাঁর বাড়িতে ডেকে মারধর করা হয়েছিল, আপনি যদি একটু লজ্জা থাকলে ডুবে মরতেন।' পদত্যাগের জন্য দুই দিনের সময় কেন, কী জিনিস একত্রিত করতে চান?' প্রশ্ন বিজেপি নেতার। তিনি বলেন, 'পুরো মন্ত্রিসভা পদত্যাগ করুন এবং নভেম্বরে নির্বাচন করুন।'
No comments:
Post a Comment