১০২৮ বছরের রীতি মেনে মল্ল রাজবাড়িতে শুরু মৃন্ময়ীর আরাধনা - press card news

Breaking

Post Top Ad

Post Top Ad

Thursday 26 September 2024

১০২৮ বছরের রীতি মেনে মল্ল রাজবাড়িতে শুরু মৃন্ময়ীর আরাধনা

 


১০২৮ বছরের রীতি মেনে মল্ল রাজবাড়িতে শুরু মৃন্ময়ীর আরাধনা 




নিজস্ব সংবাদদাতা, বাঁকুড়া, ২৬ সেপ্টেম্বর: পুজোর এখনও প্রায় দুই সপ্তাহ দেরি। ক্লাবগুলোতে এখন চূড়ান্ত ব্যস্ততা। আর এরই মধ্যে বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর মল্ল রাজ পরিবারে বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয়ে গেল ধূমধাম সহযোগে দেবী মৃন্ময়ীর পুজো। স্থানীয় মাধব সায়েরে স্নান করিয়ে বড় ঠাকুরানীকে নিয়ে আসা হল মন্দিরে। দেবীর আগমনের নির্ঘন্ট সূচিত হল মুহুর্মুহু কামানের শব্দে। ১০২৮ বছরের প্রাচীন পুজো শুরুর সাথে সাথে আবেগে ভাসলেন প্রাচীন মল্লগড়ের আপামর মানুষ। 


কথিত আছে, ১৯ তম মল্লরাজ জগৎমল্ল ৯৯৭ খ্রীষ্টাব্দে প্রাচীন মল্ল রাজধানী প্রদ্যুম্নপুর থেকে শিকারে বেরিয়ে পথ ভুলে বন বিষ্ণুপুরে এসে পড়েন। আজ যেখানে দেবী মৃন্ময়ীর মন্দির, ঠিক সেখানেই বিভিন্ন দৈব ঘটনার সম্মুখীন হয়ে দেবীর মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীতে মল্ল রাজত্ব প্রদ্যুম্নপুর থেকে সরিয়ে আনা হয় বিষ্ণুপুরে। মন্দির প্রতিষ্ঠার পর থেকে মহাসমারোহে দেবী মৃন্ময়ীর পুজো শুরু করেন জগৎমল্ল। 


কথিত আছে প্রথম দিকে শাক্ত মতে এই পুজো শুরু করেন মল্ল রাজারা। স্বাভাবিক ভাবে সে সময় এই পুজোয় চালু ছিল বলিদান প্রথা। এমনকি কথিত আছে এই পুজোয় নরবলিরও প্রথা ছিল। পরবর্তীতে বিষ্ণুপুর রাজ পরিবার বৈষ্ণব ধর্মে দীক্ষীত হলে পুজোর আচারে কিছু বদল আসে। বলিদান প্রথা বন্ধ হয়ে শব্দকে ব্রহ্ম জ্ঞান করে শুরু হয় তোপধ্বনি প্রথা। তারপর থেকে শতকের পর শতক ধরে দেবী মৃন্ময়ীর পুজোর প্রতিটি নির্ঘন্ট ঘোষিত হতে থাকে তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে। 


১০২৮ বছরের সেই প্রাচীন রীতি আজও অব্যাহত মল্লগড় বিষ্ণুপুরে। আজও প্রাচীন রীতি মেনে জীতাষ্টমীর পরের দিন স্থানীয় গোপাল সায়েরের পাড় থেকে মুহুর্মুহু গর্জে উঠল কামান। গোপাল সায়েরে একপ্রস্থ পুজো পাঠ সেরে দেবীরই এক রূপ বড় ঠাকুরানীকে নিয়ে আসা হল মন্দিরে। এরপর মান চতুর্থীর দিন একইভাবে মন্দিরে আনা হবে মেজ ঠাকুরানীকে। সবশেষে ষষ্ঠীর দিন মন্দিরে আনা হবে ছোট ঠাকুরানীকে। অষ্টমীর দিন মন্দিরে পুজিতা হবেন খচ্চরবাহিনী। 


প্রাচীন রীতি ও আচার নিয়ম অটুট থাকলেও রাজত্ব হারানোয় মল্ল রাজ পরিবারের এই পুজোর জেল্লা কিছুটা ম্লান হয়েছে ঠিকই কিন্তু এতটুকুও ভাটা পড়েনি মল্লগড় বিষ্ণুপুরের মানুষের আবেগে। আজ বড় ঠাকুরানীর আগমনের মূহুর্তে স্বাভাবিক ভাবেই মল্লগড়ের মানুষ ভিড় জমালেন হাজার বছরের প্রাচীন মল্ল রাজকূলদেবী মৃন্ময়ীর মন্দিরে। পুজো শুরুর সপ্তাহ দুই আগেই পুজোর উন্মাদনায় মাতলেন আট থেকে আশি সকলেই।

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad