বন্যার জল সরতেই অসুস্থ এলাকার মানুষ-গবাদি পশু , দেখা নেই সরকারের - press card news

Breaking

Post Top Ad

Post Top Ad

Sunday 29 September 2024

বন্যার জল সরতেই অসুস্থ এলাকার মানুষ-গবাদি পশু , দেখা নেই সরকারের


নিজস্ব সংবাদদাতা, খানাকুল, ২৯ সেপ্টেম্বর: বন্যা কবলিত হুগলি জেলার খানাকুল ব্লকে চুয়াডাঙায় গিয়ে মানুষ ও গবাদিপশুদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে ওষুধ দিলেন উত্তর ২৪ পরগনা জেলার কয়েকজন চিকিৎসক। ব্যক্তিগত উদ্যোগে চিকিৎসা পরিষেবার পাশাপাশি ত্রাণ ও পোশাক বিলি করেন তারা। 


বন্যার জল সরতেই ঘরে ঘরে সর্দি জ্বর ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন নানা বয়সীরা। নানা ধরণের উপসর্গ দেখা দিয়েছে গবাদি পশুদেরও। ত্রাণের অপেক্ষায় পথের দিকে তাকিয়ে আছে গ্রামের চাষি থেকে দিনমজুররা। ডিবিসির জল ছাড়ার কারণে তৈরি হওয়া বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এলাকার চাষের জমি। ভেঙেছে শতাধিক বাড়ি। কিছুটা জল নামার পর এলাকার বিভিন্ন বয়সের মানুষ ও গবাদি পশুর নানা রকম রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। সেই খবর পেয়ে ব্যক্তিগত উদ্যোগে ত্রাণ ও নানা রোগের ওষুধ নিয়ে এলাকায় হাজির হন দেগঙ্গা ও বারাসত এলাকার চিকিৎসকরা। শনিবার দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পুরো গ্রামের মানুষ ও পশুদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে ওষুধ দেন তারা। 



দেগঙ্গা ব্লকের সরকারি পশু চিকিৎসা কেন্দ্রের চিকিৎসক পিউ পাল, বারাসত পশু চিকিৎসা কেন্দ্রের চিকিৎসক সন্দীপ চৌধুরী ও বারাসতের দন্ত চিকিৎসক সুমিত সাহা চিকিৎসা সহায়কদের নিয়ে খানাকুল ব্লকের চুয়াডাঙা গ্রামে গিয়ে মেডিকেল ক্যাম্প করেন। শতাধিক গ্রামবাসী নিজেদের উপসর্গ দেখিয়ে ওষুধ নেন। এলাকাবাসীরা তাদের গবাদি পশুদের নিয়ে আসেন ওই ক্যাম্পে। নিয়ে যান ওষুধ। পশু চিকিৎসক পিউ পাল ও সন্দীপ চৌধুরী গবাদি পশুদের সুস্থ রাখার নানা ধরণের পরামর্শ। বাসিন্দাদের দাবী, এলাকায় জল নামার পর ডায়রিয়া ও জ্বরের প্রাদুর্ভাব সবথেকে বেশি দেখা দিয়েছে। 


স্থানীয় সূত্রের খবর, ডিভিসির ছাড়া জলে খানাকুল বিধানসভার দুই নম্বর কিশোরপুর এলাকার চুয়াডাঙ্গা গ্রাম ডুবেছিল। গবাদি পশু নিয়ে গ্রামবাসীদের অধিকাংশই এলাকার উঁচু এলাকায় আশ্রয় নিয়েছিলেন। অনেকে বাড়ির ছাদে পরিবার নিয়ে আশ্রয় নিয়েছিল। তাদের দাবি, দশ ফুট উচ্চতার বেশি জল উঠেছিল । বেশ কয়েকদিন ধরে চাষের জমিতে জল জমে থাকায় ধাম, পটল, ঝিঙে, বরবটি সহ অন্যান্য আনাজ গাছ পচে মরেগেছে। চাষের ক্ষেতে এখনও কোথাও হাঁটু সমান আবার কোথাও কোমর জল জমে আছে। গত চারদিন হল অধিকাংশ যায়গা থেকে সরেছে জল। ভেঙেছে শতাধিক মাটির বাড়ি। জলের তোড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বহু রাস্তা। নষ্ট হয়েছে মজুত রাখা ধান, চাল সহ অন্যান্য খাদ্য শস্য। 



এলাকার গভীর নলকূপের জল এখনও পচাঁ দূর্গন্ধ। মাঠের আনাজ পচা দূর্গন্ধে এলাকায় বসবাস করা কঠিন। গবাদি পশুদের খাওয়ার ঘাষ ও লতা জাতীয় খাবার নেই। পচন ধরেছে বিচুলি গাদায়। জলের তেষ্টা মেটাতে গভীর নলকূপের দূষিত জলই ভরসা। স্থানীয় বাসিন্দা দেবশ্রী প্রামানিক বলেন, " কলের মধ্যে ব্লিচিং দিয়েছি তারপরও জলে পচা গন্ধ আছে। এখানকার পরিবারগুলো চাষাবাদের উপর নির্ভরশীল। মাঠের ধান সহ আনাজ বেঁচে নেই। ঘরেও খাবার নেই। সরকারি ত্রাণ এখনও আসেনি। ঘরে ঘরে সর্দি জ্বরও ডায়রিয়া রোগ। ভালো নেই গবাদি পশুরাও। কয়েকজনকে ত্রিপল ছাড়া সরকারের তরফে কিছু মেলেনি এখনও। "


চিকিৎসক সুমিত সাহা বলেন, "আমরা ব্যক্তিগত ভাবে কয়েকজন চিকিৎসক ৫০০ জনকে দেওয়ার জন্য জল ও শুকনো খাবার নিয়ে এসেছি। স্থানীয় আইসিডিএস স্কুলে মেডিকেল ক্যাম্প বসিয়ে মানুষ ও পশুদের নানা রকম রোগের ওষুধ দিয়েছি। বন্যা বিধ্বস্ত এলাকায় সবাই খাবার নিয়ে যায়। খাবারের থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা পরিষেবা। স্থানীয় সাংবাদিকদের থেকে খবর পেয়ে এখানে এসেছি। এখানে কেউ ত্রাণ ও চিকিৎসা পরিষেবা দিতে না আসায় এলাকার পরিস্থিতি উদ্বেগ জনক।"


পশু চিকিৎসক পিউ পাল ও সন্দীপ চৌধুরী বলেন, "গবাদি পশু গ্রামীণ অর্থনীতির মেরুদণ্ড। আমরা নিজেদের উদ্যোগে ওষুধ নিয়ে এসেছিলাম। পাশাপাশি শুকনো খাবার ও মেয়েদের জন্য পোশাক নিয়ে এসে বিলি করেছি।"


চিকিৎসকদের এই উদ্যোগে খুশি এলাকাবাসী। তাদের দাবী, খাদ্যের সাথে সাথে অত্যন্ত প্রয়োজন রোগের চিকিৎসা। স্থানীয় বাসিন্দা উজ্জ্বল সিনহা বলেন, "সরকার যদি এরকম ক্যাম্প করত ভালোই হত। ডাক্তার বাবুরা আসায় আমাদের কষ্ট অনেকটাই কমল। শুধু কিশোরপুর নয় পাশের বন্দিপুর ছাড়াও অন্য গ্রাম থেকেও বহু মানুষ চিকিৎসা পরিষেবা নিতে এসেছে ।"

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad