নিজস্ব সংবাদদাতা, উত্তর ২৪ পরগনা, ২৯ সেপ্টেম্বর: দুর্ঘটনায় ঝড়ে গিয়েছে তিনটে প্রাণ, এর থেকেও শিক্ষা নেয়নি প্রশাসন। বেহাল দশা উত্তর ২৪ পরগনা জেলার দত্তপুকুর ১ নং রেলগেট সংলগ্ন রাস্তার। পাইপ লাইনের কাজের জন্য দত্তপুকুর ১ নং রেলগেটের পাশে রাস্তা খোঁড়া হয়। সেই মাটি নরম থাকায় প্রায় দু'মাস আগে বালি বোঝাই লরি উল্টে প্রাণ যায় তিন তরতাজা যুবকের। এরপরেও বেহাল রাস্তার হাল ফেরেনি। বেশ কিছুটা অংশ অটো-ভ্যান-টোটো স্ট্যান্ড। ব্যস্ততম এই রাস্তায় প্রতিনিয়ত ঘটছে বিপদ, এমনই দাবী স্থানীয়দের।
স্থানীয় বাসিন্দা চন্দন রায় বলেন, 'দীর্ঘদিন রাস্তায় এই গর্ত। জল জমে রয়েছে। সারাই হলেও তা বেশিদিন টেকেনা। কিছুদিন আগে লরি উল্টে তিন যুবকের প্রাণ যায়।' তাঁর দাবী, শুধু এই রেলগেট নয়, দত্তপুকুরে যত রেলগেট আছে, সবগুলোর পাশেই গর্ত। যে কোনও মুহূর্তে অটো-টোটো উল্টে যেতে পারে। তিনি বলেন, 'এই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত খুব বিপজ্জনক।' এক্ষেত্রে, রেলের গাফিলতিরও অভিযোগ তোলেন তিনি এবং এর স্থায়ী সমাধানের দাবী করেন।
কেউ বলেন এই রাস্তা রেলের, তো কেউ বলেন পিডব্লিউডি-এর। আর এই টানাপোড়েনে চরম সমস্যায় দত্তপুকুরবাসী। একটু বৃষ্টিতেই জল জমে পুকুর হয়ে যায় রাস্তা। দুর্ঘটনা ঘটছে প্রায় প্রতিদিনই। স্থানীয় ব্যবসায়ীদের দাবী, প্রশাসন ব্যবস্থা না নিলে তাঁরা রেল ও রাস্তা অবরোধ করবেন।
ব্যবসায়ী সুভাষ পাল বলেন, 'প্রায় এক বছর ধরে রাস্তা এই অবস্থায় পড়ে আছে। রেল কর্তৃপক্ষের কোনও হেলদোল নেই, প্রশাসনের কোনও দায়িত্ব নেই। কেউ বলেন এটা রেলের জায়গা, কেউ বলেন পিডব্লিউডি-এর। আর এই টানাপোড়েনে নাভিশ্বাস উঠছে সাধারণ মানুষের। কিছুদিন আগে লরি উল্টে তিনটে প্রাণ চলে গেল, রেল কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় প্রশাসন এটা দেখেও সমস্যার সুরাহা করছে না।'
তাঁর অভিযোগ, সকাল-সন্ধ্যা বিধায়ক-সাংসদরা, রেল আধিকারিকরা এখান দিয়ে যাতায়াত করলেও বিষয়টি এড়িয়ে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, "বর্ষা বাড়লে এই রাস্তা ভয়ানক রূপ নেবে, চলাচল বন্ধ হয়ে যাবে। বড় দুর্ঘটনা যে কোনও সময় ঘটতে পারে। উভয় পক্ষ দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে তাহলে আমরা রেল অবরোধ আর না হয় রাস্তা অবরোধ করতে বাধ্য হব।"
এই বিষয়ে দত্তপুকুর স্টেশন কমিটির সদস্য অমিত দাস অবশ্য পিডব্লিউডি-র কোটেই বল ঠেলেছেন। রেল আধিকারিকের অভিযোগ, এই রাস্তা দিয়ে ওভারলোডের গাড়িও চলাচল করে। তাঁর কথায়, "এই জায়গাটা রেলের তৈরি করার কথা নয়। এটা পূর্ত দফতরের রাস্তা। আর শুধু এখানে নয়, দত্তপুকুরের বিভিন্ন রাস্তার পরিস্থিতি এরকম। কিছুদিন আগে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে গিয়েছে, এরপরেও প্রশাসনের হুঁশ ফেরেনি।'
তিনি বলেন, 'এখানে জেলা পরিষদের বিজয়ী প্রার্থী নারায়ণ গোস্বামী রয়েছেন। তাঁর এই বিষয়গুলো দেখা উচিৎ। আমি প্রশাসনকে অনুরোধ করব, যত দ্রুত সম্ভব রাস্তা মেরামত করা হোক।'
অপরদিকে, কাশিমপুর অঞ্চল তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি অমল কুমার বিষ্ণু রাস্তার বেহাল দশার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন। তবে এর জন্য পাল্টা রেল কর্তৃপক্ষকেই দায়ী করেছেন তিনি। অঞ্চল তৃণমূল সভাপতি বলেন, "দীর্ঘদিনের একটা সমস্যা চলছে। পিএইচই-র জল যাওয়ার জন্যও রাস্তার এই দশা কিছুটা হয়েছে। কিন্তু এক নং রেলগেট সহ বাম্পার থেকে বাম্পার যে রাস্তাটা আছে, সেটা রেলের জায়গা। পিডব্লিউডি নিজের কাজ করে রেখেছে।"
তিনি আরও বলেন, "বিজেপি ভূগোল জানে না। বিজেপির যারা মাতব্বর আছে তাঁদের চাল নেই, চুলো নেই। কোনটা রেল, কোনটা পিডব্লিউডি, কোনটা পঞ্চায়েতের বা জেলা পরিষদের জায়গা তাঁদের ধারণা নেই, তাঁরা কী বলবে!" তাঁর শেষ কথা, 'এটা রেলের জায়গা, রেলই এটা দেখবে।'
তবে, এই টানাপোড়েনে কাটিয়ে পুজোর আগে এই বেহাল রাস্তার হাল আদৌও ফেরে কিনা, নাকি অপেক্ষা করছে আরও ভয়ানক কিছু! সেটার উত্তর শুধুমাত্র সময় দেবে।
No comments:
Post a Comment