প্রেসকার্ড নিউজ ওয়ার্ল্ড ডেস্ক, ১৫ অক্টোবর: কানাডা ও ভারতের মধ্যে সম্পর্ক আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। খালিস্তান সমর্থক হরদীপ সিং নিজ্জার হত্যাকাণ্ডে ভারতীয় হাইকমিশনার জড়িত থাকার অভিযোগ করেছে কানাডা সরকার। ভারত সরকার এসব অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে আখ্যায়িত করেছে। একই সঙ্গে কানাডা থেকে ভারত তার হাইকমিশনার সঞ্জয় কুমার ভার্মা এবং অন্যান্য কূটনীতিকদের ফিরিয়ে নিয়ে আসছে।
কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বলেছেন, কানাডা গত বছর একজন কানাডিয়ান নাগরিকের খুনে ভারতীয় আধিকারিকদের জড়িত থাকার অভিযোগ সম্পর্কিত সমস্ত তথ্য নিজের 'ফাইভ আইজ' অংশীদারদের, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে শেয়ার করেছে।
এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রুডো বলেন, "সোমবার ভারত ছয়জন কানাডিয়ান কূটনীতিককে বহিষ্কার করেছে এবং হরদীপ সিং নিজার হত্যাকাণ্ডের তদন্ত সম্পর্কিত অভিযোগ প্রত্যাহার করেছে। এর পর কানাডা তার হাইকমিশনার এবং অন্যান্য আধিকারিকদের দেশে ফিরে যেতে বলেছে।" জাস্টিন ট্রুডো বলেন, "আমি প্রধানমন্ত্রী মোদীর সাথে কথা বলেছি যে, ভারত এই বিষয়টিকে গুরুত্ব সহকারে নিক।"
ট্রুডো বলেছেন যে, "আমরা ইচ্ছাকৃতভাবে কানাডা-ভারত সম্পর্কে উত্তেজনা তৈরি করতে বেছে নিইনি। ভারত একটি গুরুত্বপূর্ণ গণতন্ত্র, এমন একটি দেশ যার সাথে আমাদের জনগণের গভীর ঐতিহাসিক বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে। আমরা এই লড়াই চাই না, কিন্তু স্পষ্টতই কানাডার মাটিতে একজন কানাডিয়ানকে খুন করা এমন কিছু নয় যা আমরা একটি দেশ হিসাবে উপেক্ষা করতে পারি, তাই আমরা প্রতিটি পদক্ষেপে আমরা যা জানি সে সম্পর্কে ভারতকে অবগত করিয়েছি। আমি সরাসরি প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে কথা বলেছি।"
কানাডার প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, "ভারত সরকার এই ভেবে একটি মৌলিক ভুল করেছে যে, তারা কানাডার মাটিতে কানাডিয়ানদের বিরুদ্ধে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হতে পারে, তা সে খুন হোক বা তোলাবাজি। এটি সম্পূর্ণরূপে অগ্রহণযোগ্য। কানাডা ভারতের সার্বভৌমত্ব এবং ভূখণ্ডকে সম্পূর্ণরূপে গ্রহণ করে এবং সম্মান করে। আমাদের আশা ছিল যে, এই মামলায় ভারত কোনও পদক্ষেপ করবে কিন্তু তা হয়নি।"
উল্লেখ্য, ভারত ছয় কানাডিয়ান কূটনীতিক স্টুয়ার্ট রস হুইলার (ভারপ্রাপ্ত হাই কমিশনার), প্যাট্রিক হেবার্ট, মেরি ক্যাথরিন জলি (প্রথম সচিব), ইয়ান রস ডেভিড (প্রথম সচিব), অ্যাডাম জেমস চুইপকা (প্রথম সচিব) এবং পলা অর্জুয়েলা (প্রথম সচিব)কে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ১৯ অক্টোবর মধ্যরাত ১২টার মধ্যে তাদের ভারত ছাড়তে বলা হয়েছে।
ট্রুডো বলেন, "আরসিএমপি কমিশনারের কাছে সুস্পষ্ট এবং বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ রয়েছে। ভারত সরকারের এজেন্টরা এমন কার্যকলাপে জড়িত ছিল এবং এখনও আছে, যা সার্বজনীন সুরক্ষায় বড় হুমকি সৃষ্টি করে। এর মধ্যে রয়েছে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের কৌশল, দক্ষিণ এশীয় কানাডিয়ানদের টার্গেট করা, খুন সহ, অনেক কাজ, এটা অনস্বীকার্য।"
ট্রুডো দাবী করেন, "কানাডিয়ান আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলি এই ক্ষেত্রে তাদের ভারতীয় সমকক্ষদের সাথে কাজ করার জন্য অনেকবার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু তাঁদের বারবার না করে দেওয়া হয়েছে। সে কারণেই এখন কানাডিয়ান আধিকারিকরা একটি অসাধারণ পদক্ষেপ করেছে।"
প্রসঙ্গত, ১৮ জুন, ২০২৩-এ, ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার একটি গুরুদ্বারের বাইরে নিজ্জারকে গুলি করে খুন করা হয়। এই হত্যাকাণ্ডের পর সেপ্টেম্বরে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো নিজ্জার হত্যাকাণ্ডে ভারতীয় এজেন্টদের জড়িত থাকার অভিযোগ তোলেন। ভারত ট্রুডোর অভিযোগকে 'অযৌক্তিক' বলে অভিহিত করেছে।
No comments:
Post a Comment