প্রেসকার্ড নিউজ,লাইফস্টাইল ডেস্ক,২৫ নভেম্বর: মা হতে না পারা আজ শুধুমাত্র আর বয়স্ক মহিলাদের সমস্যা নয়।২৮-৩০ বছর বয়সী মহিলাদের ডিম্বাশয়ও অকালে বার্ধক্যের কবলে পড়ছে।এর কারণ কিছু জিনিস,যা মহিলাদের মা হতে দেয় না।মহিলারা এখন তাদের ক্যারিয়ার নিয়ে অনেক সিরিয়াস হয়ে উঠেছে।ক্যারিয়ারে স্থায়ী হওয়ার আগে বিয়ে করতে চান না তারা।কিন্তু এরই মধ্যে অনেক মহিলার ডিম্বাশয় এতটাই বৃদ্ধ হয়ে যায় যে,তাদের জন্য মা হওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।
কেন মহিলাদের ডিম্বাশয় ২৮ বছর বয়সেই ৪০ বছরের মতো হয়ে যায়,কেন ডিম্বাশয় অকালে বৃদ্ধ হয়ে যায়,এই বিষয়ে জানাচ্ছেন মুম্বাইয়ের মেডিকভার হাসপাতালের কনসালটেন্ট গাইনোকোলজিস্ট এবং বন্ধ্যাত্ব বিশেষজ্ঞ ডাঃ অনুরঞ্জিতা পল্লবী।
ওভারিয়ানের বার্ধক্যজনিত কারণে মা হতে অসুবিধা -
আজকাল যুবতীরাও মা হতে অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছেন।এর একটি বড় কারণ তাদের ডিম্বাশয়ের অকাল বার্ধক্য।শুনতে অদ্ভুত লাগলেও এটাই সত্যি।একজন ২৮ বছর বয়সী মহিলার ডিম্বাশয়ের বয়স ৪০ হতে পারে।
প্রতিটি মহিলার শরীরে ডিমের সংখ্যা ইতিমধ্যেই নির্দিষ্ট।বয়স বাড়ার সাথে সাথে ডিমের সংখ্যা কমে যায়।যখন ডিম ফুরিয়ে যায়,তখন একজন মহিলা মেনোপজে যায়।কিন্তু ডিম্বাশয়ের বার্ধক্যজনিত সমস্যায় মহিলাদের ডিম্বাণু ক্ষয় হওয়ার প্রক্রিয়া তাড়াতাড়ি শুরু হয়।
ডাঃ অনুরঞ্জিতা পল্লবী বলেছেন যে,আজকাল অনেক মেয়েই ২৮ থেকে ৩২ বছর বয়সেও মা হতে অসুবিধার সম্মুখীন হয়। ডিম্বাশয় বার্ধক্যজনিত কারণে এটি ঘটছে।সাধারণত জেনেটিক সমস্যা,পরিবেশ বা জীবনযাত্রার কারণে মহিলাদের ডিম্বাশয় তাদের বয়সের আগেই বার্ধক্য শুরু করে।এই কারণে, মহিলাদের ৩০ থেকে ৩৫ বছর বয়সেও আইভিএফ শিশুর পরিকল্পনা করতে হয়।
জেনেটিক সমস্যার কারণে মা হতে অসুবিধা -
ক্রোমোজোম সমস্যার কারণে অনেক মহিলার মা হতে অসুবিধা হয়।যদি মহিলার মায়ের প্রজনন সমস্যা থাকে তবে তারও মা হতে সমস্যা হতে পারে।মহিলার মায়ের যদি হরমোনের ভারসাম্যহীনতা,পিসিওএস,স্থূলতা,থাইরয়েড, ফ্যালোপিয়ান টিউবে ব্লকেজ,জরায়ু সংক্রান্ত সমস্যা থাকে, তাহলে তিনিও এসব সমস্যায় ভুগতে পারেন।এই কারণে অল্পবয়সী হওয়া সত্ত্বেও একজন মহিলার মা হতে অসুবিধা হতে পারে।
গর্ভধারণে দেরি হলে তা স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের ওপর প্রভাব ফেলতে শুরু করে।দেরীতে গর্ভধারণের কারণে সম্পর্কের মধ্যে দূরত্ব বাড়তে থাকে।ক্যারিয়ারের পাশাপাশি দম্পতির উচিৎ সন্তানের জন্যও সময়মতো পরিকল্পনা করা।
পরিবেশের কারণে বন্ধ্যাত্ব বাড়ছে -
আমাদের পরিবেশ এতটাই দূষিত হয়ে পড়েছে যে,তা আমাদের স্বাস্থ্যের ওপরও প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে।আমাদের চারপাশে রাসায়নিক পদার্থ আছে।এমনকি খাদ্য সামগ্রীতেও। এটি মহিলাদের ডিম্বাশয়েও প্রভাব ফেলছে।জরায়ু অকালে বুড়িয়ে যাচ্ছে।এই কারণে তরুণীদেরও মা হতে অসুবিধা হচ্ছে।
স্থূলতা প্রজনন সমস্যা বাড়াচ্ছে -
যেসব মহিলার ওজন বেশি তাদের মা হতে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।স্থূলতার কারণে ডায়াবেটিস,উচ্চ রক্তচাপ, PCOD-এর মতো অনেক রোগ হয়।এটি মহিলাদের গর্ভাবস্থাকেও প্রভাবিত করে।এই সমস্যাগুলির মধ্যে একটি হল ডিম্বাশয়ের বার্ধক্য।যেসব মহিলার ডিম্বাশয় স্থূল হয় তাদের দ্রুত বয়স হয়।এই ধরনের মহিলাদের মা হওয়ার ক্ষেত্রে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।তাই গর্ভাবস্থার পরিকল্পনা করার জন্য একজন মহিলার ফিট এবং স্বাস্থ্যকর হওয়া গুরুত্বপূর্ণ।
অ্যান্টি-ক্যালরিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলা -
যেসব মহিলা স্বাস্থ্যকর খাবার খান না,তাদের ডিম্বাশয় বয়সের আগেই বার্ধক্যের কবলে পড়তে শুরু করে।চিপস,পিৎজা, বার্গারের মতো জিনিসে প্রচুর ফ্যাট থাকে, কিন্তু ক্যালরি নগণ্য।এই ধরনের জিনিস মহিলাদের ডিম্বাশয়ের অকাল বার্ধক্যের কারণ।উর্বরতা বাড়াতে মহিলাদের খাদ্যতালিকায় অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট খাবার অন্তর্ভুক্ত করা উচিৎ।
মানসিক চাপ এড়ানো -
মানসিক চাপ অনেক রোগের মূল।মানসিক চাপ মহিলাদের উর্বরতাকেও প্রভাবিত করে।যে সমস্ত মহিলারা প্রচুর মানসিক চাপের মধ্যে থাকেন,তাদের মা হতে অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়।ডিম্বাশয়ের বার্ধক্যজনিত সমস্যা এই ধরনের মহিলাদের মধ্যে দেখা যায়।অর্থাৎ তাদের বয়সের আগেই ডিম্বাশয় বৃদ্ধ হয়ে যায়।এতে মা হতে অসুবিধা হয়।
আগে ওভারিয়ানের বার্ধক্যজনিত সমস্যা মহিলাদের মধ্যে খুব কমই দেখা যেত।এর সবচেয়ে বড় কারণ হলো আগে মহিলারা ঘরের সব কাজ নিজেরাই করতেন।অনেক মহিলা মাঠেও কাজ করেছেন।তাদের খাবারে কোনও ভেজাল ছিল না।পরিবেশ ভালো ছিল।এখন মহিলাদের জীবনযাত্রায় অনেক পরিবর্তন এসেছে।তাদের মানসিক চাপ বাড়লেও শারীরিক সক্ষমতা কমছে।মহিলারা তাদের দৈনন্দিন রুটিনে খাদ্য,জীবনধারা, যোগ-ধ্যান অন্তর্ভুক্ত করে ফিট এবং সুস্থ থাকতে পারেন।এতে করে গর্ভধারণ সহজ হবে।মা হতে কোনও সমস্যা হবে না।
বি.দ্র: এই বিষয়বস্তু,পরামর্শ সহ, শুধুমাত্র সাধারণ তথ্য প্রদান করে।এটা কোনওভাবেই যোগ্য চিকিৎসা মতামতের বিকল্প নয়। আরও তথ্যের জন্য সর্বদা একজন বিশেষজ্ঞ বা আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন। প্রেসকার্ড নিউজ এর দায় স্বীকার করে না।
No comments:
Post a Comment