বাংলার ফিল্ম ও টেলিভিশন ইন্ডাস্ট্রি হতবাক। গত ১৫ দিনে তিন টলিউড অভিনেত্রী ও মডেলের রহস্যজনক মৃত্যু। এতে নড়েচড়ে বসেছে গোটা ইন্ডাস্ট্রি। গত ১৫ মে থেকে রহস্যজনক মৃত্যুর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ১৫ মে সকালে অভিনেত্রী পল্লবী দে-র ঝুলন্ত দেহ তার ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় তার লিভ-ইন-পার্টনারকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বিষয়টি এখনও সমাধান হয়নি তারই মধ্যে দুদিন আগে বিদিশা দে মজুমদারের মৃত্যুর খবর পুরো ইন্ডাস্ট্রিকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। শুক্রবার দক্ষিণ কলকাতার পাটুলি এলাকা থেকে মডেল মঞ্জুষা নিয়োগীর মৃত্যুর খবর আসে।এতে স্তম্ভিত গোটা ইন্ডাস্ট্রি।
১৫ মে সকালে অভিনেত্রী পল্লবী দে-র ঝুলন্ত দেহ তার ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার করা হয়। ছোট পর্দার জনপ্রিয় মুখ ছিলেন তিনি। প্রেমিকের সঙ্গে থাকতেন পল্লবী। এ ঘটনায় পরিবারের সদস্যদের অভিযোগে তার প্রেমিক সাগ্নিককে আটক করেছে পুলিশ।
ঘটনার দিন তার প্রেমিক কলকাতার কেপি রায় লেনে তার ফ্ল্যাটে পল্লবীর ঝুলন্ত থাকার কথা পুলিশকে জানায়। গড়ফা থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করা হয়েছে। তার মৃত্যুর কারণ কি ছিল? এ নিয়ে পুলিশ এখনও বিভ্রান্ত। ঘটনাস্থল থেকে কোনও সুইসাইড নোট উদ্ধার হয়নি। তবে পল্লবীর পরিবারের অভিযোগ, সে আত্মহত্যা করেনি, তাকে খুন করা হয়েছে। এই অভিযোগের ভিত্তিতে পল্লবীর প্রেমিককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তিনি এখনও পুলিশ হেফাজতে রয়েছেন। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
পল্লবীর মৃত্যুর ১০ দিন পর বুধবার রাতে নগরবাজারের রামগড় কলোনির বাড়ি থেকে বিদিশা নামে আরেক অভিনেত্রীর দেহ উদ্ধার করা হয়। গলায় দোপাট্টা ঝুলন্ত অবস্থায় তার দেহ পাওয়া যায়। ঘরের দরজা ভিতর থেকে তালাবদ্ধ ছিল। দেহের কাছে থেকে একটি সুইসাইড নোট উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশের ধারণা বিদিশা আত্মহত্যা করেছে। তবে পল্লবীর মৃত্যুর পর বিদিশা ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেন। তিনি লিখেছেন, 'এ সবের অর্থ কী'। ফেসবুকে পল্লবীর একটি ছবিও পোস্ট করেন বিদিশা। সেখানে তিনি লিখেছেন, 'আমি মেনে নিতে পারছি না।' ১০ দিন পর ওই বিদিশাই আত্মহত্যা করেন। পুলিশ অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা দায়ের করেছে।
বিদিশার মৃত্যুর দুই দিনেরও কম সময়ের মধ্যে, শুক্রবার সকালে তার পাটুলি বাড়ি থেকে আরেক অভিনেত্রী মঞ্জুষা নিয়োগীর ঝুলন্ত দেহ পাওয়া যায়। পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, মঞ্জুষা বিদিশার ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন, যিনি বুধবার মারা যান। তার মায়ের মতে, বিদিশার মৃত্যুর পর থেকে মঞ্জুষা মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন। সে আত্মহত্যা করেছে। তবে এ ঘটনায় কোনও সুইসাইড নোট পায়নি পুলিশ। যেমনটা পাওয়া গিয়েছিল বিদিশার ক্ষেত্রে। তাই মঞ্জুষার অস্বাভাবিক মৃত্যুর তদন্ত শুরু হয়েছে।
কলকাতার পাটুলি এলাকায় থাকতেন মঞ্জুষা নিয়োগী। তিনি একজন দ্রুত উঠতি মডেল ছিলেন। মঞ্জুষা কয়েকটি টিভি অনুষ্ঠানে ছোট চরিত্রে অভিনয় করেছেন। তিনি কাঞ্চি টিভি শোতে একজন নার্সের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। তিনি ইন্ডাস্ট্রিতে তার কেরিয়ার তৈরি করতে ব্যস্ত ছিলেন যখন হঠাৎ চাঞ্চল্যকর খবর এল। মৃত্যুর মাত্র দুদিন পর তার বন্ধু মঞ্জুষার অকাল মৃত্যুর সঙ্গে বিদিশার কোনও সম্পর্ক ছিল কিনা তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, তিন-চার দিন আগে মঞ্জুষা পাটুলিতে তার বাবার বাড়িতে আসে। বৃহস্পতিবার একটি ফটোশুটও করেন তিনি। সেদিন তার স্বামী তাকে নিতে আসলেও মঞ্জুষার মা তার জামাইকে কিছু সময়ের জন্য তাকে ছেড়ে যেতে বলেন। এদিকে বুধবার বন্ধু মঞ্জুষা বিদিশার মৃত্যুর খবর পান। তারপর থেকে তিনি বিষণ্নতার সাথে লড়াই করছিলেন। মঞ্জুষার মা দাবী করেছেন, অভিনেত্রী পল্লবীর সঙ্গেও মঞ্জুষার যোগাযোগ ছিল। মৃত্যুর কারণ খতিয়ে দেখছে পুলিশ। পুলিশও খতিয়ে দেখছে কেন এভাবে জীবন দিচ্ছেন অভিনেত্রী?
No comments:
Post a Comment