'হিন্দু-মুসলিম নয়, আমাদের প্রথম পরিচয় আমরা মানুষ', সহিংসতার আবহেই মুখ খুললেন ত্বহা সিদ্দিকী - press card news

Breaking

Post Top Ad

Post Top Ad

Wednesday 15 June 2022

'হিন্দু-মুসলিম নয়, আমাদের প্রথম পরিচয় আমরা মানুষ', সহিংসতার আবহেই মুখ খুললেন ত্বহা সিদ্দিকী


'কেউ যদি অন্যের মাকে ভালোবাসতে না পারে, তাহলে সে তার মাকে ভালোবাসতে পারবে না।' রাজ্য জুড়ে উত্তপ্তকর পরিস্থিতির মাঝেই মন্তব্য ফুরফুরা শরীফের পীরজাদা ত্বহা সিদ্দিকীর। সর্বভারতীয় এক বেসরকারি সংবাদমাধ্যমে একান্ত সাক্ষাৎকারে একথা বলেন তিনি। 


নূপূর শর্মার বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে রাজ্যে উত্তেজনা চলছে দফায়-দফায়। ধর্মীয় ইস্যুতে ক্রমাগত প্রতিবাদ এবং নানান তর্ক‌-বিতর্ক‌, অভিযোগ পাল্টা অভিযোগ চলছে। ত্ব‌হা সিদ্দিকীর বিরুদ্ধেও শিবলিঙ্গ নিয়ে আপত্তিকর শব্দ ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে। শিবলিঙ্গ নিয়ে কটূক্তি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ত্বহা সিদ্দিকী ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলেন, তিনি সব ধর্মকে সম্মান করেন। তিনি বলেন, 'কেউ যদি অন্যের মাকে ভালোবাসতে না পারে, তাহলে সে তার মাকে ভালোবাসতে পারবে না। যদি কেউ অন্যের ধর্মের প্রশংসা করতে না পারে, তবে সে তার নিজের ধর্মকে সম্মান করতে পারবে না।


তিনি আরও বলেন, আমি শিবলিঙ্গের জন্য যে শব্দ ব্যবহার করেছি তাতে কিছু সাম্প্রদায়িক ব্যক্তি গাঁটছড়া বেঁধে আমার হিন্দু ভাই-বোন ও মায়েদের উদ্দেশ্যে এসব বলেছে যে, ফুরফুরা শরীফের ধর্মগুরু ভুল নেতারা ভুল করছেন। কিন্তু ভুলটা দেখালে বুঝতে পারতেন শিবলিঙ্গ নিয়ে যা বলেছি, তা পরোক্ষভাবে অপমান। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ওপরও হামলা হচ্ছে। শিবলিঙ্গ নিয়ে আমার কিছু বলার অধিকার নেই। কিন্তু আমার বলার ধরণে কেউ কষ্ট পেলে খারাপ লাগছে।'


পীরজাদা ত্বহা সিদ্দিকী বলেন, বাংলার সরকারের কাছে আমার আর্জি হল, ২০২৪ সালের মধ্যে সমস্ত মসজিদ এবং মন্দিরে সিসিটিভি ক্যামেরা থাকতে হবে। কারণ সাম্প্রদায়িক লোকেরা রাতের অন্ধকারে মসজিদে শিবলিঙ্গ ফেলে সাম্প্রদায়িক আগুন ছড়াবে। একইভাবে, সাম্প্রদায়িক মুসলমানরা মন্দিরে গরুর মাংস নিয়ে যেতে পারে এবং অশান্তি সৃষ্টি করতে পারে। হতে পারে, যারা শিক্ষিত হিন্দু-মুসলমান, তারা এ কাজ করবে না। কিন্তু, অস্থিরতা ও ভোটব্যাংকের জন্য সাম্প্রদায়িক লোকেরা এসব করতে পারে।


তিনি বলেন, 'আমার বাড়িতে প্রতিদিন হিন্দু-মুসলিম আসে। আমি একজন মুসলিম, এটা আমার প্রথম পরিচয় নয় এবং আপনি একজন হিন্দু, এটা আপনার প্রথম পরিচয় নয়। আমাদের প্রথম পরিচয় হল আমরা মানুষ। প্রথমে আমরা মানুষ হব। তিনি বলেন, হিন্দু মা কাঁদলে আমি কষ্ট পাব না? আমি যদি কষ্ট না পাই, তাহলে আমি মানুষ নই।'


বঙ্গে হিন্দুদের বাড়িঘর টার্গেট করার প্রশ্নে পীরজাদা ত্ব‌হা সিদ্দিকী বলেন, 'একজন হিন্দু যদি অন্যায় করে থাকে, তাহলে সকল হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের তা করা উচিৎ নয়। আবার কোনও মুসলমান যদি কোনও অন্যায় করে থাকে, তাহলে মুসলিম ধর্মের সবার তা করা উচিৎ নয়। আমি কিছু মিডিয়া দেখেছি, যেখানে দেখা যাচ্ছে মুসলমানদের ক্যাপ পরা। উত্তরপ্রদেশে মুসলমানরা পাথর ছুঁড়ছে, যা তারা জুম করে দেখাচ্ছে। কিন্তু, তাদের প্রতিপক্ষের কী হচ্ছে, তারা তা দেখাচ্ছে না কেন?'


বিক্ষোভ বা মহাসড়ক জ্যাম করে সাধারণ মানুষের কষ্ট বাড়ানোর প্রশ্নে ত্বহা সিদ্দিকী বলেন, 'আমি অবরোধ ঘৃণা করি। যারা অবরোধ করেছে তারা যদি ১১ ঘণ্টা গাড়িতে বসে থাকত তাহলে তাদের কী ক্ষতি হতো? তাদের এটা দেখা উচিৎ। আমি এক সেকেন্ডের জন্যও অবরোধ পছন্দ করি না। সভা-সমাবেশ, মিছিল-সমাবেশ হবে কিন্তু তার একটা সীমা থাকা উচিৎ। হজরত মহাম্মদ সাহাব বলেছেন, রাস্তা দিয়ে গেলে পেরেক থাকবে, সেই পেরেকগুলো সরিয়ে ফেলুন যাতে অন্যরা যাওয়ার সময় কোনও সমস্যায় না পড়ে।'


তিনি বলেন, 'যারা নামাজ পড়ে বা প্রকৃতপক্ষে মুসলমান, তারা কখনও পাথর ছুঁড়তে পারে না।' তিনি বলেন, 'পশ্চিমবঙ্গ সরকার যতই ভালো কাজ করুক না কেন, বিজেপি তা মেনে নেবে না। সিপিআইএম এটা মেনে নেবে না। আর বিজেপি কতটা ভালো করবে, তা টিএমসি কখনই মেনে নেবে না। এগুলো সবই রাজনৈতিক বিষয়। আমি ভারতের অনেক রাজ্যে গিয়েছি, বিশ্বাস করুন, পশ্চিমবঙ্গ হল সেই জায়গা যেখানে হিন্দু, খ্রিস্টান, শিখ এবং মুসলমানদের মধ্যে ভালবাসা রয়েছে। আমি মনে করি পশ্চিমবঙ্গে অশান্তি সৃষ্টির ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। আপনারা সবাই রাজনীতির জন্য লড়ছেন, কিন্তু ঢিল ছোঁড়া, আগুন লাগানো, মানুষ হত্যা, এই রাজনীতি আমরা পশ্চিমবঙ্গে হতে দেব না।'

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad