কলকাতার রাস্তায় আজ প্রচণ্ড ভিড়। কারণ আজ ২১ শে জুলাই। এই দিনটি তৃণমূল কংগ্রেস শহীদ দিবস হিসাবে পালন করে। এ দিন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ধর্মতলায় ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনে একটি সভা করেন এবং কর্মীদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন। তিনি বামফ্রন্ট শাসনামলে আন্দোলনের সময় নিহত ১৩ কর্মীকেও শ্রদ্ধা জানান। কিন্তু করোনা কাঁটায় গত দুই বছর ধরে ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে শহীদ দিবস পালন করা হয়। তবে এবারে পরিস্থিতি ভিন্ন। তাই আজ ধর্মতলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভায় লক্ষ লক্ষ তৃণমূল কর্মী সমবেত হয়েছেন এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তার কর্মীদের এজন্য অভিনন্দনও জানিয়েছেন।
শহীদ দিবস উপলক্ষে, একটি বিশাল মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে, যেখানে তৃণমূলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত থাকবেন। কিন্তু কেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রতি বছর ২১শে জুলাই শহীদ দিবস পালন করেন? চলুন জেনে নেওয়া যাক-
সময়টা ছিল ১৯৯৩ সালের ২১ শে জুলাই। সেই সময় পশ্চিমবঙ্গে সিপিআই(এম) এর নেতা জ্যোতি বসু রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন এবং ছাত্র রাজনীতির পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলার রাজনীতির মূল স্রোতে প্রবেশ করেন এবং তিনি বাংলায় যুব কংগ্রেসের সভাপতি ছিলেন এবং ধীরে ধীরে বিরোধী দলনেত্রী হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অগ্নি কন্যা রূপে ধরা দিতে শুরু করেন।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বাংলার লড়াকু কংগ্রেস নেত্রী হিসেবে গণ্য করা হচ্ছিল। সে সময় নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে ভোটারদের জন্য ছবি পরিচয়পত্র জারি করা হত না। ভোটার তালিকায় শুধু নাম থাকত। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ, যেহেতু ভোটারদের ছবি সেখানে নেই, এ কারণে সিপিআই(এম) নির্বাচনে কারচুপি করেছে। নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনতে ছবির পরিচয়পত্র দাবী করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এই দাবী নিয়ে কংগ্রেস, রাজ্য সরকারের তৎকালীন সচিবালয় রাইটার্স অভিযানের ডাক দিয়েছিল। এই আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিলেন স্বয়ং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই সময় তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী তথা জ্যোতি বসু সরকার কলকাতার সর্বত্র পুলিশ মোতায়েন করেছিল।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে হাজার হাজার কংগ্রেস কর্মী এদিন রাস্তায় নামেন। তারা পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে তৎকালীন রাজ্য সচিবালয় রাইটার্স বিল্ডিংয়ের দিকে এগোতে থাকেন। তৃণমূল কংগ্রেস নেতাদের মতে, সেই সময় সিপিআই(এম) নেতারা ভয় পেয়েছিলেন যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দলের কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে রাইটার্স দখল করে ফেলবেন।
তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, যিনি পরে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হন। ভিড় দেখে পুলিশও আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। এই অভিযানের সময় পুলিশের গুলিতে ১৩ যুব কংগ্রেস কর্মী নিহত হন। নিহত কর্মীদের মধ্যে রয়েছেন রঞ্জিত দাস, প্রদীপ রায়, আবদুল খালিক, কেশব বৈরাগী, বন্দনা দাস, শ্রীকান্ত শর্মা, দিলীপ দাস, রতন মণ্ডল, মুরারি চক্রবর্তী, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, বিশ্বনাথ রায়, অসীম দাস ও ইনু মিয়া।
কিন্তু পরবর্তীতে ১৯৯৭ সালে কংগ্রেস নেতা প্রণব মুখার্জী, সোমেন মিত্র এবং প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরোধ হয়। কংগ্রেস সভাপতি পদ নিয়ে বিতর্কের পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কংগ্রেসের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে আলাদা দল তৃণমূল কংগ্রেস গঠন করেন। দলের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই তৃণমূল কংগ্রেস ২১শে জুলাইকে শহীদ দিবস হিসেবে পালন করে আসছে।
২০১১ সালে ক্ষমতায় আসার পর, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই দিনটিকে আরও ব্যাপকভাবে উদযাপন করেন এবং একটি গণ আন্দোলনের ঘোষণা দেন। দলীয় কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। সব মিলিয়ে এদিন আগামী দিনের জন্য দলের কৌশল ঘোষণা করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
উল্লেখ্য, এ বছরও তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ট্যুইট করেছেন এবং ২১ জুলাইয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। তৃণমূলের পক্ষ থেকেও শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে।
No comments:
Post a Comment