রাজা-রাজত্ব কোনওটাই নেই, কিন্তু আছে দুই শতাব্দী প্রাচীন রীতি। আজও একই ভাবে প্রথা মেনে, দেবীর নামাঙ্কিত সম্পত্তির ফসল বিক্রয়ে পূজিতা হন মালদহের চাঁচলের উত্তর সিংহ পাড়ার চতুর্ভুজা চণ্ডী। এই পুজোর প্রচলন প্রায় ২০০ বছরেরও পুরনো। চাঁচল রাজা শরৎচন্দ্র রায় চৌধুরীর হাত ধরে এই পুজো শুরু হয়েছিল। বর্তমানে নেই রাজা, নেই তাঁর রাজত্ব। এখন এই পূজার হাল ধরেছেন গ্রামের মানুষ।
মালদহের চাঁচল সদর থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে ভাকরী গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীনে রয়েছে উত্তর হারো হাজরা গ্রাম। সেই গ্রামের এক কোণে বটগাছ লাগোয়া মন্দিরে পূজিতা হন মা চুতুর্ভূজা চন্ডী। সপ্তমী থেকে দশমী- টানা চার দিন ধরে চলে মহা ধূমধাম সহকারে পুজোপাঠ। নবমীর দিন রয়েছে পাঠাবলির রীতি।
জানা গিয়েছে, আজ থেকে ঠিক প্রায় ২০০ বছর আগে চাঁচলে রাজা শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের রাজদরবারে কর্মচারী হিসেবে নিয়োগ ছিলেন উত্তর হারো হাজরা গ্রামের এক প্রজা নেহাল সিংহ। রাজার জমিদারির কিছু অংশ তিনি দেখাশোনা করতেন। সেই থেকে রাজার একজন বিশ্বস্ত কর্মচারী হয়ে ওঠেন নেহাল সিংহ। এই সময় হাতির পিঠে চড়ে রাজা শরৎচন্দ্র উত্তর হারো হাজরা গ্রামে যান এবং সেখানে গিয়ে এই পূজার প্রচলন করেন। সেই থেকেই ওই গ্রামে শুরু হয় চন্ডী পুজো।
শুধু তাই নয়, পুজোর খরচ বহনের জন্য চণ্ডীর নামে দান করা হয় দুই বিঘা জমি। সেই জমি থেকে উৎপাদিত ধান-পাট-সরষা বিক্রি করে এই পুজোর খরচ তোলা হয়। এই পুজোকে ঘিরে প্রায় ছয়টি গ্রামের মানুষ আনন্দে মেতে ওঠেন।
সপ্তমী থেকে দশমী চার দিন মহা ধুমধাম সহকারে চতুর্ভূজা চন্ডী। নবমীতে চল রয়েছে পাঠা বলির। দশমীর সন্ধ্যায় গোধূলি লগ্নে দিললাগোয়া চন্ডী দীঘিতে বিসর্জন দেওয়া হয় দেবীর। বছরের পর বছর ধরে নিয়ম-নিষ্ঠার সঙ্গে হয়ে আসছে এই পুজো।
No comments:
Post a Comment