সোনালী ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখিয়ে অপহরণ, মুক্তিপণ দাবী! উদ্ধার ১৮ যুবক - press card news

Breaking

Post Top Ad

Post Top Ad

Monday 26 September 2022

সোনালী ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখিয়ে অপহরণ, মুক্তিপণ দাবী! উদ্ধার ১৮ যুবক


বিদেশে পাঠানোর নামে কলকাতায় যুবকদের অপহরণ করে তাদের পরিবারের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছে পুলিশ। 


পুলিশ জানায়, এই গ্যাংটি প্লেসমেন্ট এজেন্সি হিসেবে চালানো হতো। সূত্রের খবর, কলকাতা ছাড়াও যুবকদের বেঙ্গালুরু, হায়দরাবাদ ও অন্যান্য শহরে নিয়ে গিয়ে অপহরণ করা হত। অপহৃত যুবকদের পরিবারের সঙ্গে বিদেশের লোকেশন শেয়ার করা হত। এছাড়া বিদেশি মোবাইল নম্বর থেকে যুবকদের সঙ্গে যোগাযোগ করানো হত। এমন পরিস্থিতিতে পুলিশের অনুমান, বিদেশেও এই চক্রের সদস্যরা রয়েছে। শিগগিরই অভিযুক্তদের কাছে পৌঁছাবে পুলিশ।


পুলিশ সূত্রে খবর, হরিয়ানার কর্নালের বাসিন্দা রাহুল কুমারকে আমেরিকায় চাকরি দেওয়ার নাম করে কলকাতায় ডেকে আনা হয়। দিল্লী থেকে পানিপথের ফ্লাইট ধরে কলকাতায় আসেন তিনি। কলকাতায় পৌঁছানোর পর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পুলিশ জানিয়েছে, দিল্লীর একটি সংস্থা আমেরিকায় চাকরির নাম করে রাহুলের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল। রাহুল বর্তমানে বিএ ২য় বর্ষের ছাত্র। এজেন্সির লোকজন তাকে ৪৮ লাখ টাকা দিয়ে বিদেশে চাকরি দেওয়ার কথা বলেছিল। প্রতারকদের কথায় বিশ্বাস করে তার পরিবারের সদস্যরা তাকে কিস্তি দিয়েছিলেন ৫০ হাজার টাকা। কলকাতা থেকে তাকে দোহা ও দুবাই হয়ে আমেরিকায় পাঠানোর কথা বলা হয়।


এদিকে সেপ্টেম্বরের শুরু থেকে পরিবারের লোকজন তার সঙ্গে যোগাযোগ না করলে তার বাবা তাকে খুঁজতে কলকাতায় পৌঁছান। প্রথমে তিনি থানায় অভিযোগ করেননি বলে জানা গেছে। তবে এর মধ্যেই বিধাননগর পুলিশ তাদের তদন্ত অব্যাহত রেখেছে। পরে পুলিশের নির্দেশে হরিয়ানা থেকে রাহুলের বাবা ইমেল করে পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন। ওই অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ এফআইআর নথিভুক্ত করে তদন্ত শুরু করেছে। পরে রবিবার, রাহুল সহ ১০ জন যুবককে সিআইএসএফ কর্মীদের সহায়তায় কলকাতা বিমানবন্দরে পুলিশ উদ্ধার করে। রাহুলকে জেরা করে গোটা ঘটনার খবর পায় পুলিশ। রাহুল পুলিশকে জানিয়েছেন, তিনি দোহা যাওয়ার জন্য কলকাতায় এসেছিলেন।


কলকাতায় এসে হোটেলে থাকার পর কয়েকজন তাকে অপহরণ করে। এরপর নিউ টাউনের একটি ফ্ল্যাটে নিয়ে তাকে বন্দি করে। অভিযুক্তরা মুক্তির বিনিময়ে তার পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে মুক্তিপণ হিসেবে ৪০ লাখ টাকা দাবী করে বলে অভিযোগ রয়েছে।  মুক্তিপণের টাকা পাওয়ার পর অপহরণকারীরা রাহুলকে ছেড়ে দেয়। রাহুল ছাড়াও আরও ১৮ জন অভিযুক্তদের দ্বারা একইভাবে শিকার হয়েছেন। রাহুলের নির্দেশে ১৮ যুবককে উদ্ধার করে পুলিশ।


বিধাননগর কমিশনারেটের ডিসি ডিডি বিশ্বজিৎ ঘোষ জানিয়েছেন, আমেরিকায় চাকরি দেওয়ার নাম করে পাঞ্জাব ও হরিয়ানার যুবকদের কলকাতায় নিয়ে আসা হয়েছিল। অভিযুক্তরা ওই যুবকের পরিবারের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। ১৮ জন যুবককে কলকাতায় আনার পর বিমানবন্দরের কাছে দুটি হোটেলে এবং পরে ইকো আরবান ভিলার একটি বাড়িতে রাখা হয়। সেখানে তাদের ১০ দিন বন্দি রাখা হয়। সেখান থেকে উদ্ধার হওয়া ১০ জনকে মানসিক অবসাদের কারণে বাড়ি পাঠানো হয়েছে। বাকিদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। মামলার অভিযুক্তদের বাড়ি ভাড়া দেওয়া এক চিকিৎসককে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।


ডিসি ডিডি বলেছেন যে, প্রতারকরা তাদের পরিবারের আস্থা জয় করতে কলকাতায় নিয়ে আসার পরে যুবকদের একটি অডিও বা ভিডিও বার্তা রেকর্ড করত।  এতে যুবকরা বলত, তারা আমেরিকায় পৌঁছেছে এবং সেখানে কাজ করছে। তাদের কোনও সমস্যা নেই।  এরপর ওইসব মেসেজ বিদেশে মোবাইল নম্বরের মাধ্যমে যুবকদের পরিবারকে পাঠানো হয়। এরপর যুবকদের নিরাপদ রাখার নামে পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিত। টাকা পাওয়ার পর অপহৃত যুবকদের বাড়ি ফেরত পাঠাতো এসব লোকজন। বর্তমানে অভিযুক্তদের জিজ্ঞাসাবাদ করে বিষয়টি তদন্ত করছে পুলিশ।

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad