রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুকে নিয়ে মন্ত্রী অখিল গিরির বিতর্কিত বক্তব্য নিয়ে তুঙ্গে রাজ্য রাজনীতি। নিজের বিবৃতি নিয়ে মন্ত্রী অখিল গিরি প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইলেও গুজরাট নির্বাচনের আবহে, একেই হাতিয়ার করে ময়দানে নেমেছে পদ্ম শিবির। একদিকে দিল্লীর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিজেপি নেতা তথা মন্ত্রী অর্জুন মুন্ডা এই বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ক্ষমা চাওয়া এবং মন্ত্রী অখিল গিরিকে বরখাস্তের দাবী জানিয়েছেন, অন্যদিকে বিজেপির সমর্থকরা কলকাতার রাস্তায় নেমে মন্ত্রীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবী জানাচ্ছেন।
উল্লেখ্য, শুক্রবার নন্দীগ্রামে অখিল গিরি বলেন, “দেখতে ভালো লাগে না। কি সুন্দর! আমরা কাউকে তার চেহারা দিয়ে বিচার করি না। আমরা তোমার রাষ্ট্রপতির চেয়ারকে সম্মান করি, কিন্তু তোমার রাষ্ট্রপতি কেমন দেখতে বাবা?"
অখিল গিরির বক্তব্য প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই তীব্র আক্রমণ শানিয়েছেন বিজেপি নেতারা। বাংলার কেন্দ্রীয় সহ-ইনচার্জ অমিত মালব্য থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অর্জুন মুন্ডা, এই বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিশানা করেছেন। সাংসদ সৌমিত্র খাঁ, জাতীয় মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন রেখা শর্মাকে চিঠি লিখে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবী জানিয়েছেন। মহিলা কমিশনও এই বিষয়ে স্বতঃপ্রণোদিত পদক্ষেপ করেছে।
এদিকে, মন্ত্রী অখিল গিরির বক্তব্যের বিরুদ্ধে বিজেপি সমর্থকরা কলকাতার রাস্তায় নেমে এসেছেন এবং অখিল গিরির পাশাপাশি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধেও স্লোগান দিচ্ছেন ও মন্ত্রীর বরখাস্তের দাবী করছেন। শনিবার সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউতে বিজেপির পক্ষ থেকে বিক্ষোভ মিছিল হয়।
মৎস্য দফতরের মন্ত্রী অখিল গিরির কুশপুতুল হাতে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন তারা এবং তাকে পদ থেকে বরখাস্ত করার পাশাপাশি দল থেকে বহিষ্কারের দাবী করা হয়। এও দাবী ওঠে, মন্ত্রীর বিরুদ্ধে এফআইআর করে গ্ৰেফতার করা উচিৎ। কারণ রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুকে নিয়ে করা তারই মন্তব্য অত্যন্ত কুরুচিপূর্ণ এবং তাতে দেশের সম্মানহানি হয়েছে।
এদিকে, তৃণমূল কংগ্রেসের নেতৃত্ব শনিবার বিকেলে এই বিষয়ে একটি সাংবাদিক সম্মেলন করবেন। তৃণমূল নেতাদেরও মন্তব্য, রাষ্ট্রপতির বিষয়ে মন্ত্রীর এমন বক্তব্য দেওয়া উচিৎ হয়নি। তার সংযমী হওয়া দরকার ছিল। তৃণমূল সাংসদ শান্তনু সেন জানান, মন্ত্রীর এই মন্তব্য দল কোনও ভাবেই সমর্থন করে না। তিনি বলেন, 'তৃণমূল ভারতের সংবিধান এবং রাষ্ট্রপতিকে সম্মান করে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নারীর ক্ষমতায়নের প্রতীক, তাই এমন মন্তব্যকে সমর্থন করার প্রশ্নই ওঠে না। মন্ত্রী তার ভুল বুঝতে পেরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষমা চেয়েছেন।'
অখিল গিরি নিজেই প্রকাশ্যে একটি বিবৃতি জারি করেছেন, যাতে তিনি বলেন, 'তাঁর উদ্দেশ্য আদিবাসী সমাজকে আঘাত করা বা মহিলাকে আঘাত করা নয়। তিন মাস ধরে হামলা চালাচ্ছেন শুভেন্দু অধিকারী। তিনি একজন মন্ত্রী এবং সংবিধানের শপথও নিয়েছেন। তিনি শুভেন্দু অধিকারীকে বলছিলেন। তার উদ্দেশ্য রাষ্ট্রপতিকে আঘাত করা ছিল না। এ নিয়ে আর কখনও কথা বলব না। রাষ্ট্রপতিকে অপমান করছি না। বিজেপি এই ইস্যুকে রাজনৈতিক রঙ দিচ্ছে এবং আদিবাসী সম্প্রদায়কে উস্কে দেওয়ার চেষ্টা করছে।'
তবে, রাষ্ট্রপতিকে নিয়ে দেওয়া অখিল গিরির এই বক্তব্যের পর রাজ্যের শাসক দল যে যথেষ্ট ব্যাকফুটে, সেকথাই মনে করছেন রাজনৈতিক মহলের একাংশ।
No comments:
Post a Comment