জামা মসজিদে মেয়েদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা! 'এটা কি ইরান'? প্রশ্ন ক্ষুব্ধ মালিওয়ালের - press card news

Breaking

Post Top Ad

Post Top Ad

Thursday 24 November 2022

জামা মসজিদে মেয়েদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা! 'এটা কি ইরান'? প্রশ্ন ক্ষুব্ধ মালিওয়ালের


দিল্লীর ঐতিহাসিক জামা মসজিদে একা মেয়েদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। মসজিদের প্রবেশ গেটে একা মহিলাদের জন্য নো-এন্ট্রি বোর্ড লাগানো হয়েছে। নোটিশে লেখা আছে, জামে মসজিদে একা মেয়ে বা মেয়েদের প্রবেশ নিষিদ্ধ। এঁর অর্থ স্পষ্ট যে, পুরুষ ছাড়া নারীরা আর জামা মসজিদে প্রবেশ করতে পারবে না। এ নিয়ে রাজনৈতিক তরজাও শুরু হয়েছে। এই নির্দেশের বিরোধিতা করেছেন দিল্লী মহিলা কমিশনের চেয়ারপারসন স্বাতী মালিওয়াল। স্বাতি মালিওয়াল জানিয়েছেন, এই বিষয়ে তিনি মসজিদের ইমামকে নোটিশ দেবেন। অন্যদিকে মসজিদ প্রশাসন বলছে, নারীদের সঙ্গে অশ্লীলতা ঠেকাতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।


জামা মসজিদে মেয়েদের প্রবেশ নিষিদ্ধ সংক্রান্ত নোটিশও সাঁটানো হয়েছে। এমনই একটি বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, "জামা মসজিদে একা মেয়ে বা মেয়েদের প্রবেশ নিষিদ্ধ।" দিল্লির জামে মসজিদের অফিস থেকে এই নোটিশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি নোটিশে projmd2000@gamail.com ইমেইল আইডিও লেখা হয়েছে। বলা হচ্ছে মেয়ে বা মেয়েরা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যেতে পারবে।



মসজিদ প্রশাসনের সিদ্ধান্তের বিষয়ে মসজিদের পিআরও সাবিউল্লাহ বলেন, একাকী মেয়েরা এখানে আসা, অন্যায় কাজ, ভিডিও করা বন্ধ করতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পিআরও সাবিউল্লাহ বলেন, 'সপরিবারে আসতে কোনও বাধা নেই, তবে এটাকে পার্ক ভেবে মিটিং পয়েন্ট বানানো, টিকটক ভিডিও করা, নাচ করা কোনও ধর্মীয় স্থানের জন্য উপযুক্ত নয়। আমাদের নিষেধাজ্ঞার উদ্দেশ্য হল মসজিদটি ইবাদতের জন্য এবং এটি কেবল ইবাদতের জন্য ব্যবহার করা উচিৎ। এটা ছেলেদের সময় দেওয়ার জায়গা নয়। ভিডিও বানানোর জন্য নয়।'


এই নিষেধাজ্ঞার তীব্র আপত্তি জানিয়েছেন দিল্লী মহিলা কমিশনের চেয়ারপারসন স্বাতী মালিওয়াল। স্বাতী মালিওয়াল বলেন, 'আমরা জামা মসজিদের শাহী ইমামের তালেবানী সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে এই নোটিশ জারি করেছি। শাহী ইমামের আদেশ অসাংবিধানিক। তারা কি মনে করেন, এটা ইরান, যে তারা প্রকাশ্যে নারীদের প্রতি বৈষম্য করবে এবং কেউ তাদের বাধা দেবে না। মসজিদ প্রশাসনের জারি করা এই নিষেধাজ্ঞা আমরা তুলে নেব।'


এর আগে স্বাতি মালিওয়াল তার ট্যুইটে লিখেছেন, "জামা মসজিদে নারীদের প্রবেশ বন্ধের সিদ্ধান্ত একেবারেই ভুল। একজন নারীরও একজন পুরুষের মতো উপাসনার অধিকার আছে। আমি জামে মসজিদের ইমামকে নোটিশ দিচ্ছি। এভাবে নারীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করার অধিকার কারও নেই।"



জামা মসজিদের এই আদেশের বিরোধিতা করেছেন অনেক সমাজকর্মী। সমাজকর্মী শাহনাজ আফজাল বলেন, 'ভারতে সবাই সমান অধিকার পেয়েছে। সেক্ষেত্রে এ ধরনের সিদ্ধান্ত, প্রকাশ্যে সংবিধান লঙ্ঘন। তিনি বলেন, এ ধরনের সিদ্ধান্ত কোনও অবস্থাতেই বৈধ নয়। মুসলিম রাষ্ট্রীয় মঞ্চের মুখপাত্র শাহিদ সাইদও এর বিরোধিতা করেছেন। তিনি বলেন, 'এটা ভুল মানসিকতা। নারীর জন্য অন্য নিয়ম কেন? উপাসনার স্থান সবার জন্য উন্মুক্ত থাকতে হবে।'


অন্যদিকে, জামা মসজিদের শাহী ইমাম সৈয়দ আহমেদ বুখারি বলেছেন, 'মসজিদে নামাজ পড়তে আসা নারীদের আটকানো হবে না।' তিনি বলেন, 'মেয়েরা তাদের বয়ফ্রেন্ড নিয়ে মসজিদে আসছে বলে অভিযোগ ছিল। কোনও নারী জামে মসজিদে আসতে চাইলে তাকে তার পরিবার বা স্বামী সহ আসতে হবে।


এদিকে বিষয়টি নিয়ে তুঙ্গে উঠেছে রাজনৈতিক তরজাও। জামা মসজিদে নারীদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ বলেছে, ইরানের ঘটনা থেকে এসব মৌলবাদী চিন্তাবিদদের শিক্ষা নেওয়া উচিৎ। ভিএইচপি মুখপাত্র বিনোদ বনসাল বলেন, 'ভারতকে সিরিয়া বানানোর মানসিকতা নিয়ে মুসলিম মৌলবাদীদের ইরানের ঘটনা থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিৎ। একদিকে ভারত সরকার যেখানে বেটি বাঁচাও-বেটি পড়াও-সহ অনেক পরিকল্পনা চালিয়ে মেয়েদের শক্তিশালী করার চেষ্টা করছে, অন্যদিকে এই ধরনের উগ্র মানসিকতার লোকেরা তাদের পবিত্র স্থানেই তাদের প্রবেশ বন্ধ করে দিচ্ছে।'


এআইএমআইএম প্রধান আসাদুদ্দিন ওয়াইসিকে নিশানা করে বিনোদ বনসাল বলেন, ভাগ্যনগরের উত্তেজক ভাইজান কোথায়, যিনি স্বপ্ন দেখছিলেন যে বুরকা পরিহিত বোন দেশের প্রধানমন্ত্রী হবেন। তাদের আগে মসজিদে তো প্রবেশ করিয়ে দিন। ভারতে এমন কোন মসজিদ নেই যেখানে পুরুষের সাথে মহিলারা নামাজ পড়তে পারে। লজ্জা পাওয়া উচিৎ। মেয়েদের স্বাধীনতা ও তার স্বাধীনতায় বেড়ি পড়ানোদের এটা বোঝা উচিৎ, সারা পৃথিবীতে মেয়েরা চাঁদে পৌঁছে গিয়েছে কিন্তু তারা তাদের মসজিদে বসতে দিচ্ছে না।' বনসাল বলেন, 'মেয়েদের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পরিবর্তে এই লোকদের তাদের মানসিকতা পরিবর্তন করা উচিৎ।'




No comments:

Post a Comment

Post Top Ad