ভক্ত ও ভক্তির একটি শ্রেষ্ঠ উদাহরণ হল কৃষ্ণ ভক্ত মীরা বাঈ। তিনি কৃষ্ণের পরম ভক্ত ছিলেন। চলুন এই ভক্তের ভক্তির কিছু গল্প জেনে নেওয়া যাক-
মীরাবাই শুধু একটি নাম নয়, তার রয়েছে ভক্তি, তরঙ্গ, বিশ্বাস ও শ্রদ্ধার মর্যাদা। ১৫০৪ মীরাবাই বিক্রমীতে মেরতাতে রাজা রতন সিংহের বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। যোধপুরের রাঠোর রতন সিংয়ের একমাত্র মেয়ে ছিলেন মীরা। রাজপুতানা জাতিতে জন্ম নেওয়া মীরাবাইয়ের বাড়ির বাইরে বেরোতে কঠোর নিষেধাজ্ঞা ছিল।
মীরার বয়স যখন আট বছর, পাড়ায় বর আসতে দেখে মীরা তার মাকে জিজ্ঞেস করেন তার বর কে? সন্তানের কৌতূহল প্রশমিত করতে তাঁর মা বলেন, তোমার স্বামী শ্রীকৃষ্ণ। এই ঘটনার পর মীরাবাঈ শ্রী কৃষ্ণকে নিজের সর্বস্বরূপে গ্রহণ করেন এবং তাঁর ভক্তিতে নিমগ্ন হয়ে যান।
তিনি শ্রী কৃষ্ণের মূর্তিকে রোজ স্নান করান, তাঁকে নতুন পোশাক পরান, খাবার খাইয়ে দেন, গান করেন এবং নাচ করেন। তাঁর সবটা জুড়ে ছিল শুধুই শ্রীকৃষ্ণ। বয়ঃসন্ধিকালে মীরা কৃষ্ণকে তার স্বামী মনে করতেন। তাই মীরা সর্বদা কৃষ্ণের ভক্তিতে মগ্ন হয়ে গান গাইতেন।
মীরাবাঈ মহারানা সাঙ্গের পুত্র ভোজরাজের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন, যাকে পরবর্তীতে মহারানা কুম্ভ বলা হয়। বিয়ের প্রথম দিনই মীরা তার স্বামীকে বলেছিলেন যে তার স্বামী একমাত্র শ্রীকৃষ্ণ। কিন্তু মহারানা কুম্ভ মীরার এই আলোচনাকে একটি রসিকতা বলে মনে করেন।
তবে ধীরে ধীরে শ্রী কৃষ্ণের প্রতি মীরার ভক্তি দেখে তিনিও নিশ্চিত হন যে মীরা শ্রী কৃষ্ণের জন্য পাগল। বিয়ের পরও মীরা শ্রীকৃষ্ণের ভক্তিতে মগ্ন হতে থাকে। মীরার এসব কর্মকাণ্ড দেখে তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন রেগে যান।
কিছুকাল পর মীরার স্বামী যুদ্ধক্ষেত্রে মারা যান। স্বামীর মৃত্যুর পর শ্বশুরবাড়ির লোকজন মীরাকে সতীদাহ করতে বললে মীরা বলেন, আমার স্বামী শ্রীকৃষ্ণ। মীরা তার স্বামীর মৃত্যুর পরেও মন্দিরে যেতে শুরু করে এবং গান গেয়ে নাচ করেন।
এতে তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন মীরাকে ব্যভিচারিণী হিসেবে অভিযুক্ত করে এবং মীরাকে এক মজলিসে বিষ পান করতে বলে। শ্রীকৃষ্ণের নাম জপ করতে করতে মীরা সেই বিষ পান করেন। সবার ভাবে মীরা এখন বাঁচবে না। কিন্তু মীরার জন্য বিষের পেয়ালা অমৃত হয়ে যায়। শ্রীকৃষ্ণের কৃপায় মীরার উপর বিষের কোন প্রভাব পড়েনা।
শ্বশুরবাড়িতে অনেক অত্যাচার সহ্য করার পর, অত্যাচার সহ্যের বাইরে চলে গেলে মীরা প্রাসাদ ত্যাগ করে বৃন্দাবনে চলে যান বহু স্থানে তীর্থযাত্রা করেন। অন্যদিকে মীরা প্রাসাদ ত্যাগ করার কারণে রাজ্যে অশান্তি শুরু হয়। ব্রাহ্মণরা বলেন মীরা ফিরে এলে সব ঠিক হয়ে যাবে।
মীরার সন্ধানে দুজন সৈন্যও পাঠানো হয়, তারা মীরাকে তাদের সঙ্গে ফিরে আসার জন্য অনুরোধ করলে, মীরা তা প্রত্যাখ্যান করে। সৈন্যরা অনুরোধ করে বলে আমাদের সঙ্গে জীবিত না ফিরলে আমরাও রাজ্যে ফিরব না।
মীরা তবুও যেতে রাজী হন না। এরপর শ্রীকৃষ্ণের স্তব গাইতে গাইতে মীরার চোখ থেকে প্রেমের অশ্রু প্রবাহিত হতে থাকে এবং তারপর মীরা শ্রী কৃষ্ণের মূর্তির মধ্যে লীন হয়ে যান।
No comments:
Post a Comment