আদানি গোষ্ঠী নিয়ে বিতর্কের মুখে কেন্দ্রীয় সরকার। গত দুদিন ধরে বিরোধী দলের আক্রমণের নিশানা কেন্দ্রীয় সরকারের ওপর। তাদের অভিযোগ জনগণের টাকা কতটা সুরক্ষিত SBI, LIC তে? এই প্রশ্নের উত্তরে এই প্রথম জবাবদিহি করলেন কেন্দ্রীয় সরকার। অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ আদানি গোষ্ঠী সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে আশ্বাসের বাণী শোনালেন।এক সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি সেই ভরসার কথা বললেন, " বর্তমানেও আদানিতে টাকা ইনভেস্ট করে লাভ করছে SBI,LIC।"
বেশিরভাগ সাধারণ মানুষই SBI এবং LIC তে টাকা জমা রাখেন , আর এই দুই সংস্থার সাথেই আদানির যোগসূত্র রয়েছে। যত দিন যাচ্ছে ততই আদানি গ্রুপের শেয়ার দর নিন্মমুখী। এই কারণে বহু সংখ্যক আমজনতা চিন্তার সম্মুখীন হচ্ছেন। বিরোধী দলের অভিযোগ , আদানি গ্রুপকে এক বড় অঙ্কের ঋণ দিয়েছে বলে জানা গেছে। শুধু তাই নয়, আদানি গ্রুপে এলআইসির বিনিয়োগ আছে। এই তুমুল বিতর্কের মধ্যেই অর্থমন্ত্রী ভরসার কথা বললেন, এলআইসি এবং এসবিআই লাভের মুখেই রয়েছে আদানি গ্রুপে টাকা ইনভেস্ট করে।
অন্যদিকে বিতর্কের জেরে পড়ে আদানি গোষ্ঠী বাজার থেকে ২০ হাজার কোটি এফপিও তুলে নিল।শুধু তাই নয়, বুধবার বৈঠকে আদানি গোষ্ঠীর এক পরিচালক পর্ষদ গ্রাহকদের জন্য সাবস্ক্রাইবড,২০ হাজার কোটি টাকা ইকুইটি এফপিও প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানানো হয়েছে।
আদানি গ্রুপের চেয়ারম্যান গৌতম আদানি বক্তব্য রাখেন "আমরা এফপিওর সম্পূর্ণ সাবস্ক্রিপশন পেয়েছি, যার জন্য আমরা বিনিয়োগকারীদের কাছে কৃতজ্ঞ। এই বিতর্কের কথা মাথায় রেখেই জনগণের স্বার্থে পরিচালন পর্ষদ এফপিও প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।"
তিনি আরও বলেন, ‘শেয়ারবাজারে চলমান দরপতনের পরিপ্রেক্ষিতে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থের কথা মাথায় রেখে আমরা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমরা FPO থেকে প্রাপ্ত পরিমাণ বিনিয়োগকারীদের ফিরিয়ে দেব।"
কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী সীতারামন এক সাক্ষাৎকারে বলেন , ‘আদানি নিয়ে এসবিআই এবং এলআইসি জানিয়েছে যে তারা অনুমোদিত সীমার মধ্যেই আদানি গ্রুপে টাকা ইনভেস্ট করেছে এবং এই দুই সংস্থাই বর্তমানেও লাভজনক অবস্থায় রয়েছে।’
শুক্রবার স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার চেয়ারম্যান দীনেশ খারা মন্তব্য করেছেন, এসবিআই আদানি গ্রুপে মোট ২৭,০০০ কোটি টাকা ইনভেস্ট করেছে যা যা রাষ্টায়ত্ত ব্যাঙ্কের মোট মূলধনের ০.৮৮ শতাংশ।
৩০ জানুয়ারি এলআইসির তরফ থেকে পেশ করা একাধিক রিপোর্টে জানা যাচ্ছে যে, আদানি গ্রুপের শেয়ারে নিন্মমুখী হওয়ার ফলে মুখ থুবড়ে পড়েছে এলআইসি। তারা আরও জানিয়েছে যে , তারা যে পরিমাণ টাকা দিয়েছে আদানি গ্রুপে , সেটি মোট বিনিয়োগের এক শতাংশেরও কম। এই অঙ্কটা হলো, ৩৬,৪৭৪.৭৮ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী দাবী করেন যে,' আমি দায়িত্বের সঙ্গে এই কথা বলতে পারি যে ভারতীয় ব্যাঙ্কিং সেক্টরের অবস্থান শক্তিশালী জায়গাতেই রয়েছে। ব্যাঙ্কগুলির এনপিএ কমেছে এবং ধারাবাহিকভাবে ঋণ আদায় হচ্ছে। সেই কারণের তারা আজও সাবলীল ভাবে টাকা আদায় করতে পারছে।'
অর্থমন্ত্রী এও আশ্বাস দেন যে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আদানি গোষ্ঠীতে নিশ্চিন্তে বিনিয়োগ করতে পারেন। তারা জানিয়েছেন, ভারতের প্রশাসনিক ব্যবস্থা বেশ মজবুত এবং তার সঙ্গে স্থিতিশীল সরকার এর পাশাপাশি সুনিয়ন্ত্রিত আর্থিক বাজার রয়েছে। তাই তিনি ভরসা দেন যে , বিদেশি বিনিয়োগকারীদের পূর্ব অবস্থাই বজায় থাকবে।
বাজেট পেশের দিন অর্থমন্ত্রী আদানি গ্রুপের ভবিষৎ সম্পর্কে বলেন ,"শেয়ার বাজার বাজেটকে স্বাগত জানিয়েছে, বাজার নিন্মমুখী হলেও আমি নিশ্চিত বাজেটে ভালো ফল হবে। ভবিষ্যতে এর জেরে শেয়ারবাজার লাভবান হবে।" হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ রিপোর্ট প্রকাশের দিন থেকে আদানি গ্রুপের শেয়ারের পতন একই রয়েছে।
রিপোর্ট প্রকাশের পূর্বে আদানি গোষ্ঠীর কর্ণধার গৌতম আদানির মোট সম্পদ এর পরিণাম ছিল প্রায় ১২০ বিলিয়ন। রিপোর্ট প্রকাশের পর সেই পরিমাণ কমে হয় ৪৫ বিলিয়ন।১৫৫ বিলিয়ন পরিমাণ সম্পদের নিরিখে গৌতম আদানি বিশ্বের ধনী ব্যক্তিদের লিস্টে দ্বিতীয় স্থানে ছিলেন। আদানি গোষ্ঠীর নিন্মমুখীতার কারণে এখন বিশ্বের ধনী ব্যক্তিদের তালিকায় ১৫ নম্বর স্থানে রয়েছেন। ভারতের রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান মুকেশ আম্বানি যেখানে বর্তমানে ৯ নম্বর স্থান অধিকার করে আছেন।
No comments:
Post a Comment