একটি মন্দির, যার গায়ে লেখা-- 'জয় কুতিয়া মহারানি মা'। উত্তরপ্রদেশের ঝাঁসি অঞ্চলে অবস্থিত এই মন্দিরে স্থানীয় মানুষজন গিয়ে ভক্তিভরে প্রণাম করেন। এই মন্দির স্থাপনের উদ্দেশ্য কি? এর পশ্চাতে আছে এক আশ্চর্য গল্প। আমাদের দেশ বিভিন্ন ধর্মীয় ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিতে ভরপুর। এখানে লক্ষ লক্ষ মন্দিরের অবস্থান রয়েছে এবং ভিন্ন ভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের একাধিক উপাসনালয় রয়েছে। আবার একই সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে বিভিন্ন পুজো প্রচলিত রয়েছে।
এ দেশে দেবদেবীর মূর্তির পাশাপাশি প্রকৃতির অপরূপ মহিমাকেও পজো করা হতো, যা আজও বর্তমান। গাছ থেকে শুরু করে বিভিন্ন পশুদেরও ভগবান রূপে পুজো করার প্রথা দেখতে পাওয়া যায়। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, সুন্দরবনের বাঘ কিংবা বিশালাকৃতির ঐরাবৎকে দেবতা হিসেবে গভীর বিশ্বাসে আরাধনা করা হয়।
এমনই এক অভাবনীয় ঘটনা দেখা যায় উত্তরপ্রদেশের গ্রামটিতে। এমন একটি মন্দির, যেখানে মূর্তি রয়েছে এক কুকুরীর। সেখানে মানুষ ভক্তি ভরে পুজো করেন। তাঁকে বলা হয় 'কুতিয়া মহারানী মা'।
উত্তরপ্রদেশে ঝাঁসি জেলার মৌরানিপুর তহসিলে একটি পাকা রাস্তার ধারে এই মন্দিরের অবস্থান।কুকুরীর মন্দিরটি মৌরানিপুরের রেভান ও কাকওয়াড়া গ্রামের সীমান্তে রয়েছে। এই মন্দিরে একটি কালো কুকুরীর মূর্তি স্থাপন করা হয়েছে। মানুষ এখানে ভক্তিভরে প্রণাম করেন, পুজো করেন।
কারণ হিসেবে স্থানীয় লোকেরা জানিয়েছে, উত্তরপ্রদেশের এই গ্রাম দুটিতে একটি কুকুর থাকতো। সে প্রতিদিন এক নির্দিষ্ট সময়ে খাবারের জন্য হাজির হতো। একদিন রেভানের গ্রামে একটি অনুষ্ঠানে কুকুরটি খাওয়ার খেতে গিয়ে নিরাশ হয়। তারপর কুকুরটি কাকওয়াড়া বলে একটি গ্রামে পৌঁছায়। সেখানেও ভাগ্যক্রমে সেদিন খাওয়ার শেষ হয়ে গিয়েছিল। শোনা যায় এভাবেই দিনের পর দিন না খেয়ে কুকুরটির অনাহারে প্রাণ হারায়।
এই গ্রামের স্থানীয় ব্যক্তি ইতিহাস বিশেষজ্ঞ হরগোবিন্দ কুশওয়াহা জানান ,কুকুরটির এই দুঃখজনক মৃত্যুতে গভীরভাবে শোকাহত হয়েছিল গ্রামের মানুষেরা। কুকুরটির মৃতদেহ নিয়ে তারা কবর দেন এবং সেখানে একটি মন্দির প্রতিষ্ঠা করে। বর্তমানে এই রীতি প্রচলিত আছে যে, মন্দিরের আশেপাশের গ্রামে কোনও অনুষ্ঠান হলে স্থানীয় লোকেরা কুকুরটিকে উদ্দেশ্য করে খাওয়ার রেখে যান।
No comments:
Post a Comment