দল বদল যেন আস্ত ধাঁধা! - press card news

Breaking

Post Top Ad

Post Top Ad

Tuesday 7 February 2023

দল বদল যেন আস্ত ধাঁধা!


নিজস্ব প্রতিবেদন: পদ্ম ছেড়ে জোড়া ফুলে যোগ দিয়েছেন আলিপুরদুয়ারের বিধায়ক সুমন কাঞ্জিলাল। রবিবার তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্যামাক স্ট্রিটের অফিসে গিয়ে তৃণমূলে যোগ দেন তিনি। তাঁকে উত্তরীয় পরিয়ে স্বাগত জানান অভিষেক। এই নিয়ে তোলপাড় বঙ্গ রাজনীতি; জেলা জুড়ে ধিক্কার মিছিল, গদ্দার তকমা, আরও কত কী!


কিন্তু যার ফুল-বদল ঘিরে এই তোলপাড়, সেই বিধায়ক সুমন কাঞ্জিলাল কী বলছেন? তিনি যে তৃণমূলে যোগদান করেছেন, নিজে মুখে সেই কথা স্বীকার করতে শোনা গেল না বিধায়ককে। এমনকি তৃণমূলের পতাকা বা প্রতীক কোনওটাই তিনি হাতে তুলে নেননি! রবিবার অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে উত্তরীয় পরিয়ে স্বাগত জানানোন পর মঙ্গলবার আলিপুরদুয়ারে পা রাখেন বিধায়ক সুমন কাঞ্জিলাল। জেলার শীর্ষ নেতৃত্বরা তাঁকে স্বাগত জানানোর জন্য উপস্থিত হন এবং পরবর্তীতে তিনি সাংবাদিক সম্মেলনেও যোগ দেন তৃণমূলের দলীয় কার্যালয়ে। অথচ সেখানেও বিধায়কের উত্তরীয়র রঙ ছিল বাকিদের থেকে ভিন্ন। 

 

এদিন সাংবাদিকরা তাকে বিজেপি ছাড়ার কারণ জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, 'আমার প্রথম পরিচয় আমি আলিপুরদুয়ারের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। সাধারণ মানুষ আমাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন, আমার দায়বদ্ধতা মানুষের প্রতি। কিন্তু দু'বছর অতিক্রান্ত হলেও আমি সন্তোষজনক উন্নয়নের কাজ আলিপুরদুয়ারের মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে পারছিলাম না বিরোধী দলের বিধায়ক হিসেবে। এমনকি কেন্দ্রীয় সরকারেরও বেশকিছু প্রকল্প যার সংসদের মাধ্যমে বিধায়কদেরও উন্নয়নের কাজে যুক্ত করা হবে। কিন্তু আমি সেখানেও আশাহত হই। নির্বাচিত সাংসদের কাছ থেকেও আমি কোনও সদর্থক বার্তা পাইনি। সাধারণ মানুষের কাছে অনেক কথা শুনতে হয়েছে।'


বিধায়ক বলেন, 'আমার মনে হয়েছে, প্রতিহিংসাপরায়ন রাজনীতির জন্য আমাদের বাংলার মানুষ এবং প্রান্তিক এলাকার মানুষ ক্ষতিগ্ৰস্থ হয়েছে। কিন্তু বাংলার প্রতিটি কোণায় মুখ্যমন্ত্রী যেভাবে উন্নয়নমূলক কাজ পৌঁছে দিতে চাইছেন তাঁর এই কর্মযজ্ঞে নির্বাচিত বিধায়ক হিসেবে সামিল হওয়ার সৌভাগ্য ও সুযোগ যদি আমি অর্জন করি, আমার ও মানুষের পক্ষে ভালো হবে।'


এদিন কেন্দ্রকে একাধিক ইস্যুতে খোঁচা দিতে এবং মুখ্যমন্ত্রীর প্রশংসা করতে শোনা যায় বিধায়ককে। কিন্তু তিনি বারবার মুখ্যমন্ত্রীর উন্নয়নের যজ্ঞে সামিল হওয়ার কথা বললেও তৃণমূলের প্রতীক তিনি কেন হাতে নেননি, সেই প্রসঙ্গ এড়িয়ে যান। আপনি তৃণমূলে না বিজেপিতে?-সাংবাদিকরা একথা জানতে চাইলে পাল্টা প্রশ্ন করে বসেন বিধায়ক। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে স্বাগত জানিয়েছেন সেই ছবি দেখে কী মনে হয়- জানতে চান সুমন। তিনি জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি, এমনকি বিধানসভায়ও তার পরিচয় এটাই, একথাতেই অনড় থাকেন বিধায়ক। এদিন সাংবাদিকরা দলত্যাগ বিরোধী আইনের প্রসঙ্গ উঠলেও তাতে গুরুত্ব দিতে নারাজ বিধায়ক‌। তার দাবী, সময় সব উত্তর দেবে। 


এদিকে বিধায়কের এমন আচরণে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, তবে কী দলত্যাগ বিরোধী আইনের প্যাঁচ থেকে বাঁচতেই তৃণমূলের প্রতীক নেননি সুমন কাঞ্জিলাল! না কি নেপথ্যে অন্য রহস্য!


ইতিমধ্যেই এই ফুল বদল নিয়ে বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য থেকে শুরু করে শিলিগুড়ির বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ সুমন কাঞ্জিলালকে ঠুকেছেন এমনকি উত্তরবঙ্গের বিজেপি বিধায়ক মনোজ টিগ্গাও এক্ষেত্রে বলেছেন, তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় খুব বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে এই যোগদান করিয়েছেন। 


অপরদিকে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী দাবী করেন, 'বাইরে বলবে সরকারের সাথে আছে, ভেতরে বলবে বিজেপির সঙ্গে আছি। আমার কোনও অসুবিধা নেই, বিধানসভার ভেতরে ৭৫ জনই বিজেপি।'


ফলত এই নিয়ে ক্ষোভ-বিক্ষোভ বা তরজা চললেও সুমন কাঞ্জিলালের ফুল বদল বর্তমানে যেন আস্ত এক ধাঁধা, একথাই মনে করছেন রাজনৈতিক মহলের একাংশ।

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad