রাজ্যপাল অসত্য ভাষণ পাঠ করছিলেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার সাংবিধানিক প্রধানকে দিয়ে অসত্য বিবৃতি পাঠ করিয়েছেন কেন্দ্রের বিরুদ্ধে- সাংবাদিক সম্মেলনে বিস্ফোরক অভিযোগ বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর। পাশাপাশি, পরোক্ষভাবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চোরেদের সম্রাজ্ঞী বলে কটাক্ষ করেন তিনি।
বুধবার বিধানসভায় রাজ্যপালের ভাষণের সময় তুমুল হইচই। বিজেপির অভিযোগ, রাজ্যপালের ভাষণ মিথ্যা, তাই তারা তা মানবেন না। ফলত বিধানসভার কার্যক্রম থেকে ওয়াকআউট করে, জয় শ্রীরাম স্লোগান তোলার পাশাপাশি বিধানসভা থেকে বেরিয়ে যান বিরোধী দলনেতা সহ বিজেপির অন্যান্য বিধায়করা।
পরবর্তীতে সাংবাদিক সম্মেলনে এই ইস্যুতে সুর চড়ান শুভেন্দু। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশাপাশি নতুন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসকেও তোপ দাগেন তিনি। শুভেন্দু বলেন, 'আবাস যোজনা এবং গ্রামীণ সড়ক নিয়ে যে মিথ্যাচার এই বিধানসভায় করা হয়েছে, তা কোনও ভাবে সমর্থনযোগ্য নয়। তিনি বলেন, "যেখানে রাজ্য সরকার ৭,৭০০ কোটি টাকার ডিমান্ড পাঠিয়েছে মনেরেগায়। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী লোকসভায় বলেছেন, আপনাদের ২৮০০ কোটি টাকা ডিমান্ড আমাদের কাছে পেন্ডিং আছে। 'আপনারা যতক্ষণ না আধারের সঙ্গে জব কার্ড লিঙ্ক করবেন, ফেক জব কার্ড বাদ দেবেন ততক্ষণ এই টাকা ছাড়া যাবে না', সেখানে রাজ্যপাল মহোদয়কে দিয়ে ২১-২২ অর্থ বর্ষে ১১, ৮০০ কোটি টাকা পাওনা বলানো হয়েছে।"
শুভেন্দুর আরও অভিযোগ, যেখানে নভেম্বর মাসে প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনায় টাকা ভারত সরকার দিয়েছে, সেখানে রাজ্যপালকে দিয়ে বলানো হয়েছে গ্রামীণ সড়ক নির্মাণে টাকা কেন্দ্রীয় সরকার দিচ্ছে না।' তিনি বলেন, 'অনেক অভিযোগের পরেও কেন্দ্র সরকার ৫৩৪ কোটি টাকা দিয়েছে। কিন্তু এখানে উল্লেখ করা হয়েছে টাকা দেওয়া হয়নি। এত বড় অসত্য বিবৃতি কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে কি করে দেন, অন রেকর্ড সাংবিধানিক প্রধান কে দিয়ে! এতে আমরা অত্যন্ত ব্যথিত এবং লজ্জিত।'
বিরোধী দলনেতার অভিযোগ, দলিতরা, জনজাতিরা এবং বিজেপি সমর্থকরা বঞ্চিত হয়েছে আবাস থেকে। তাদের নাম হাজারে হাজারে কেটে বাদ দেওয়া হয়েছে। শুধু বিজেপি করে বলে, তাদের নাম দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, 'তারপরও ১১ লক্ষ ২৬ হাজার বাড়ী অনুমোদন করা হয়েছে, কেন্দ্রের তরফে। সেখানে বলা হয়েছে আবাস যোজনায় অর্থ দেওয়া হয়নি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার এসব কথা মহামান্য রাজ্যপালের মুখ দিয়ে বলিয়েছেন।'
'আমরা আশা করেছিলাম, তামিলনাড়ুর রাজ্যপালের মত বা পশ্চিমবঙ্গের বিগত মেরুদন্ড সোজা রাখা কয়েকজন সাংবিধানিক বিশেষজ্ঞ রাজ্যপালের মতো তিনিও এইসব লাইন স্কিপ করে যাবেন, পড়বেন না। কিন্তু আমরা দেখলাম উনি এগুলো পড়েছেন। আমরা মহামান্য রাজ্যপালকে প্রায় দশ মিনিট ধরে থামানোর চেষ্টা করেছি, বলেছি আপনি অসত্য ভাষণ পড়া বন্ধ করুন টেবিল করে দিন। কিন্তু, ওনার সচিব, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যাকে তাঁর গোয়েন্দাগিরি করার জন্য রাজভবনে পাঠিয়েছেন, প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি; তার তৈরি করে দেওয়া ভাষণ তিনি পরেই যাচ্ছেন। স্বাভাবিকভাবে আমরা ভিতরে এবং বাইরে প্রতিবাদ করেছি", সংযোজন শুভেন্দুর।
এরপরই শুভেন্দুর কটাক্ষ, "আমি রাজ্যপাল মহোদয়কে বলে এসেছি যে, আপনার ডানদিকে যিনি বসে আছেন, যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আপনি অটলবিহারী বাজপেয়ী, রাধাকৃষ্ণান জি, এপিজে আব্দুল কালামের মত প্রাতঃস্মরণীয় ভারতের সুসন্তানদের সঙ্গে তুলনা করেছেন, তাতে বাংলা-বাঙালি লজ্জিত হয়েছে।' আপনি এই ধরণের শেমফুল ভাষা বা শব্দ চোরেদের রানীর সম্পর্কে ভবিষ্যতে ব্যবহার করবেন না। প্রতিবাদ সরকারের বিরুদ্ধে আছে মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে আছে।"
তার হুঁশিয়ারি, "ভবিষ্যতে যিনি জেনে বা না জেনে ভারতরত্ন অটল বিহারী বাজপেয়ী, ভারতরত্ন, শিক্ষক দিবস যার নামে হয় ডঃ সর্বোপল্লী রাধাকৃষ্ণন, ভারতরত্ন মিসাইল ম্যান এপিজে আব্দুল কালামের সঙ্গে এই চোরেদের সম্রাজ্ঞীর তুলনা করবেন, ভারতীয় জনতা পার্টি কিন্তু এর প্রতিবাদ করবে।"
বিরোধী দলনেতা বলেন, "আমি গভর্নরের পাশে গিয়ে তাকে শেম শেম করে এসেছি, এই ল্যাঙ্গুয়েজের জন্য। তিনি সেন্ট জেভিয়ার্সে এই কথাগুলো বলেছেন, এর জন্য বাংলা-বাঙালি লজ্জিত থাকবে একথা স্পষ্ট করে বলে দিয়ে এসেছি।"
সেইসঙ্গেই তিনি বলেন, ১০ ও ১৩ তারিখে বিধানসভায় যদি পরিবেশ থাকে, যদি আমাদের বলার সুযোগ দেয় বা সেরকম পরিবেশ শাসক দল রাখে, তাহলে আমরা নিশ্চিত ভাবে যুক্তি-তর্ক-তথ্য দিয়ে রাজ্যপাল মহোদয়ের কথিত ভাষণ যা রাজ্য সরকারের তৈরি করে দেওয়া, তা যে ছত্রে ছত্রে মিথ্যা, প্রমাণ করে দেব।" রাজ্যপাল মিস গাইডেড হচ্ছেন, বলেও এদিন মন্তব্য করেন শুভেন্দু অধিকারী।
No comments:
Post a Comment