আম থাকাকালীন প্রকাশ্যে কেটে ফেলা হচ্ছে একের পর এট আম গাছ, প্রশ্নের মুখে প্রশাসন ও বন দফতরের ভূমিকা, ঘটনা ঘিরে শুরু রাজনৈতিক তরজা।
মালদা মানেই মহানন্দা, মালদা মানেই নানান স্বাদের সুমিষ্ট আম। কিন্তু আমের মরশুমের প্রাক্কালেই মুকুল ও আম চলে আসা অবস্থায় নির্বিচারে আম গাছ কাটার অভিযোগ আমের জেলাতেই। প্রশ্নের মুখে বন দফতরের ভূমিকা। গাছ কাটায় ক্ষুব্ধ পরিবেশপ্রেমীরা। ঘটনা ঘিরে চাঞ্চল্য মালদহের চাঁচলের মকদম পুরে।
মালদা জেলার আম বিখ্যাত দেশ জুড়ে। জেলার ব্যবসা, অর্থনীতি অনেকাংশে নির্ভর আমের ওপর। সামনেই আমের মরশুম। ইতিমধ্যে প্রতিটি গাছেই প্রচুর পরিমাণে মুকুল চলে এসেছে, কোনও গাছে আবার মুকুলের পাশপাশি ধরেছে আম। আর এরকম আবহতেই এক সাথে প্রায় ১৪-১৫ টি আম গাছ কাটার অভিযোগ উঠল মালদহের চাঁচল থানার মকদমপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের শেরপুরে। দিনের আলো হোক বা রাতের আঁধার প্রতিনিয়ত চলছে বৃক্ষ নিধন যজ্ঞ। মুকুল থাকা অবস্থায় কাটা হচ্ছে একের পর এক আম গাছ। মাফিয়াদের বাড়বাড়ন্তে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী ও পরিবেশপ্রেমীরা।
মালদা জেলার আম বিশেষজ্ঞ ড. কমল কৃষ্ণ দাসের কথায়, 'যে কোনও গাছ কেটে ফেলা সামাজিকভাবে অপরাধ। মালদা জেলা আমের জেলা, আর সেই আমের জেলায় অবাধে কেটে ফেলা হচ্ছে আম গাছ! এই ঘটনা সত্যি নিন্দাজনক। মালদা জেলা বন দফতর কীভাবে এই গাছ কাটার অনুমতি দেয়?'
পরিবেশ প্রেমী তথা চাঁচল সিদ্ধেশ্বরী ইনস্টিটিউশনের শিক্ষক নীহার রঞ্জন দাস বলেন, 'রাতের অন্ধকার হোক বা প্রকাশ্য দিবালোক; অবলীলায় চলছে বৃক্ষ নিধন-যজ্ঞ, প্রশাসন দেখেও নিশ্চুপ হয়ে আছে। আমের মরশুমে এই মুহূর্তে আম গাছ কাটা আইনত দণ্ডনীয়। আমরা মালদা বিজ্ঞান মঞ্চের পক্ষ থেকে এই ঘটনার তীব্র ধিক্কার জানাই।'
তিনি বলেন, 'গাছ কাটার আমরা ঘোর বিরোধী। আগামীতে আমরা বৃহত্তর আন্দোলনে নামতে চলেছি।'
এই গোটা ঘটনা নিয়ে চাঁচল রেঞ্জের বন দফতরের আধিকারিক মনীন্দ্রনাথ কর্মকারকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি জানান, গাছ কাটার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। নিয়ম মেনেই কাটা হচ্ছে। যদি মালদা রেঞ্জের বন বিভাগকে স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, মুকুল থাকা অবস্থায় কোনও আম গাছ কাটার এক্তিয়ার নেই। যেখানে জেলা বন দফতর বলছে মুকুল থাকা অবস্থায় আম গাছ কাটা যাবে না, সেই অবস্থায় চাঁচল বন দফতর কীভাবে অনুমতি দেয়, সেটা নিয়ে উঠছে বিস্তর প্রশ্ন!
এদিকে এই সমগ্র ঘটনা সামনে আসতেই শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা। বিজেপির চাঁচল ব্লকের কো-কনভেনার প্রসেনজিৎ শর্মা বলেন, 'শাসকদলের মদত ছাড়া আম গাছ কাটা সম্ভব না। তৃণমূল নেতাদের মদতে বন দফতর এই আম গাছ কাটার অনুমতি দিয়েছে।'
তবে, বিজেপির এই অভিযোগ মানতে নারাজ তৃণমূল। চাঁচল ১ নং ব্লক তৃণমূলের সভাপতি শেখ আফসার আলী বলেন, 'গাছ কাটা সামাজিক অপরাধ। তবে বিজেপি যে অভিযোগ করছে তা একেবারে মিথ্যে এবং ভিত্তিহীন। প্রশাসনের ভূমিকায় ব্যাপক ক্ষুব্ধ আমরা।'
সমগ্র ঘটনায় দ্রুত প্রশাসনিক পদক্ষেপের দাবী করছেন, এলাকার পরিবেশপ্রেমী মানুষজন। কেন এতগুলো গাছ কাটার অনুমতি দেওয়া হল? কি স্বার্থ এর নেপথ্যে? উঠছে একাধিক প্রশ্ন।
No comments:
Post a Comment