নিয়োগ থেকে আবাস দুর্নীতি হোক বা কয়লা থেকে বালি পাচার কাণ্ডে; নাম জড়িয়েছে রাজ্যের শাসকদলের একাধিক নেতা-মন্ত্রী থেকে পঞ্চায়েত প্রধান বা সদস্যর, সেখানে ভিন্ন চিত্র বালুরঘাটে। বালুরঘাট পঞ্চায়েত সমিতির ৫ নং ভাটপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান মুকুল মুর্মু যেন একেবারে ব্যতিক্রমী। ক্ষেত মজুরি থেকে শুরু করে ইট ভাটায় শ্রমিকের কাজ করেই অফিস সামলান তিনি। এমনকি, যাতায়াতের জন্য ভরসা একটি মাত্র সাইকেল।
পঞ্চায়েতর প্রধান হয়েও এখনও নিজের পৈতৃক ভিটা জমিতে ধান লাগানোর কাজে যেমন হাত লাগান, তেমনই পরিবার নিয়ে দিন গুজরান করতে পরের কৃষি-জমিতে কাজ করতে হয় গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান মুকুল মুর্মুকে।আবার যখন কৃষি জমিতে কাজ থাকে না তখন পেট চালাতে বাড়ির কাছে থাকা ইট ভাটাতে শ্রমিকের কাজ করেই কোনরকমে দিনপায করেন তার পরিবার নিয়ে। এসব করতে গিয়ে পঞ্চায়েতের কাজ-কর্মের তো ফাঁকি দেনই না, তেমনই এলাকার মানুষের সুখ-দুঃখে পাশে গিয়ে দাঁড়াতেও কখনও পিছপা হন না তিনি।
বালুরঘাট শহর থেকে সামান্য খানেক দুরত্ব চকরাম গ্রামে মুকুল মুর্মুর বাড়ি। একটু বসতভিটে থাকলেও তা ইট, সিমেন্ট, রডের তৈরি পাকা বাড়ি নয় বরং চারিদিকে ধসে পড়া এবং জরাজীর্ণ অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকা একটি মাটির বাড়ি। মুকুল মুর্মুর কথায়, 'প্রধান হয়ে যদি সরকারি প্রকল্পের সুযোগ নিয়ে নিজের জন্য কিছু করি তাতে গ্রামের লোকজন নানা কথা বলবে। সেটা শুনতে ভালো লাগবে না। তাই সরকারি প্রকল্পের কোনও সুবিধে আমি নিতে রাজি নই।' তিনি বলেন, গ্ৰামের লোকেরা বাড়ি পায়নি, সেখানে আমি পেলে অন্যরকম কথা বলবে গ্ৰামের লোক।'
এছাড়াও তিনি জানান, কোনও মানুষের ক্ষতি করতে চাই না। কোনও লোকের অসুবিধা হলে আমি কাউকে ফেরত পাঠান না। এমনকি এমার্জেন্সি কিছু থাকলে ভাটাতেও পৌঁছে যেতেন পারেন যে কেউ।
অন্য সব এলাকার প্রধান বা পঞ্চায়েতের কর্তারা যখন মোটর সাইকেলে অফিসে আসেন। তখন অত্যন্ত সাধারণ ঘরের ছেলের মতই মুকুল এখনও সাইকেল অথবা পায়ে হেঁটেই অফিসে আসেন। তিনি জানান, মোটরসাইকেল চড়ার ইচ্ছে থাকলেও উপায় নেই। মুকুল মুর্মু বলেন, ইচ্ছে তো সবারই থাকে। কিন্তু টাকা-পয়সা ছাড়া তো হবে না। যতদিন চলছে, সাইকেলই চালাই। পরিবারটাও তো দেখতে হবে; তিন মেয়ে আছে আমার।'
এলাকার বাসিন্দাদের দাবী, যেখানে রাজ্য জুড়ে বহু পঞ্চায়েত নেতাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠছে, সেখানে ভাটপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান মুকুল মুর্মু ব্যতিক্রমী।
স্থানীয় এক বাসিন্দা রামপ্রসাদ বর্মন বলেন, 'মুকুল মুর্মু খুবই ভালো লোক। আমাদের সঙ্গে খুব ভালো ভাবে মেশেন, সব কাজ ভালো ও সঠিক ভাবে করেন, কাউকে ঘোরান না।' তিনি বলেন, 'মুকুল মুর্মু যখন ভালো কাজ করছে, তাকেই ভালোবাসতে হবে। ভালো কাজ করলে আগামী পঞ্চায়েত নির্বাচনেও তিনিই আসবেন।'
ইট ভাটার ম্যানেজার গৌতম চৌধুরী জানান, মানুষ হিসেবে উনি খুবই ভালো। আগেও কাজ করতেন, এখনও করেন। তবে , পঞ্চায়েত প্রধান হওয়ার পর কাজের গতি কিছুটা কমেছে।' তিনি বলেন, মুকুল মুর্মু মানুষ হিসেবে খুবই ভালো, কাজকর্মও ভালো করছেন। তিনি এও বলেন, ভালো কাজ করলে তাঁকেই সাধারণ মানুষ আগামী পঞ্চায়েত নির্বাচনে চাইবেন।'
উল্লেখ, দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার বালুরঘাট ব্লকের ৫নং ভাটপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের নকসা গ্রামের বাসিন্দা মুকুল মুর্মু ২০২২ সালে ভাটপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান পদের দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
No comments:
Post a Comment