মালদা: উৎপাদিত আলু বিক্রিতে মিলছে না ন্যায্য মূল্য! দুঃশ্চিন্তায় চাষীরা। ঘটনা ঘিরে জেলায় শুরু রাজনৈতিক তরজা।
মালদা জেলার মধ্যে আলু উৎপাদনে অন্যতম হচ্ছে পুরাতন মালদা ব্লক। এই ব্লকে প্রচুর পরিমাণে আলু উৎপাদন হয়ে থাকে। তবে এই বছর পুরাতন মালদা ব্লকের আলু চাষিদের মাথায় হাত। এলাকার কৃষকেরা আলু উৎপাদন করেছেন কিন্তু পাচ্ছেন না ন্যায্য মূল্য, যার জেরে দুঃশ্চিন্তায় পড়েছেন পুরাতন মালদা ব্লকের আলু চাষিদের একাংশ।
চাষিদের দাবী, বাজারে এখন ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা ক্যুইন্টাল প্রতি আলু বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু বিগত কয়েকদিন ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা ক্যুইন্টাল প্রতি বিক্রি হচ্ছিল। কার্যতা হঠাৎ করে প্রতিদিন দাম কমে যাওয়াতে দুঃশ্চিন্তায় তারা। আলু চাষিদের কথায়, 'আগামীতে যদি আলুর দাম ঊর্ধ্বমুখী না হয়, তাহলে তাদের আত্মহত্যা ছাড়া আর কোনও উপায় থাকবে না।'
বিঘা প্রতি আলু চাষ করতে খরচ পড়ে ৩০ হাজার টাকা। তবে, বর্তমানে আলুর যা বাজার, সবমিলিয়ে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা আসছে। অতএব বলা যায়, বিঘা প্রতি ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা করে লস হচ্ছে। কৃষকদের দাবী, অবিলম্বে সরকারকে সরকারি সহায়ক মূল্যে আলু কেনার ব্যবস্থা করতে হবে, না হলে এইভাবে আলুর দাম না বাড়লে ক্ষতির মুখে পড়তে হবে তাদের। মহাজনের ঋণও শোধ করতে পারবেন না, যার ফলে আত্মহত্যা ছাড়া আর কোন পথ থাকবে না। সরকার উদাসীনতার ফলে কৃষকদের আজকে এই হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে এমনই অভিযোগ তাদের। আর এই বিষয় নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানৌউত্তর।
ইংরেজবাজার বিধানসভা কেন্দ্রের বিজেপি বিধায়ক শ্রীরূপা মিত্র চৌধুরী জানান, 'রাজ্যের কৃষকদের সম্মান দিতে এই সরকার ব্যর্থ। আজকে এই রাজ্যে কৃষাণ ক্রেডিট কার্ড লাগু করছে না এই সরকার, যার ফলে কৃষকরা বঞ্চিত হচ্ছে। যদিও এই বিষয়ে পাল্টা দিয়েছেন মালদা জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র শুভময় বসু। তিনি বলেন, 'আমাদের সরকার সব সময় কৃষকদের পাশে রয়েছে, কৃষক বন্ধু সম্মান দেওয়া হচ্ছে কৃষকদের। এবারে চাহিদার তুলনায় যোগান বেশি, যার ফলে একটু সমস্যা হচ্ছে, তবে সরকার কৃষকদের পাশে রয়েছে। পাশাপাশি বিকল্প চাষ করে কৃষকরা যাতে আরও অর্থ রোজগার করতে পারে, সেটাই এখন ভাবা দরকার।'
মালদা জেলা কৃষি দফতর সূত্রে জানা যায়, মালদা জেলায় ১০ হাজার ১১৬ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়, যার মধ্যে পুরাতন মালদা ব্লকে বেশি হয়। এবারে প্রতি হেক্টর জমি থেকে ৩০ মেট্রিক টন আলু ফলন হয়েছে। এখনও পর্যন্ত ৯৫ শতাংশ জমি থেকে আলু উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে।গতবারের তুলনায় থেকে এবারে ৫ শতাংশ আলুর ফলন বেশি হয়েছে। ফলে চাহিদার তুলনায় যোগান বেশি হওয়াতেই আলুর দাম কমে গিয়েছে।
মালদা কৃষি দফতরের অধিকর্তা দেবনাথ মজুমদার জানান, 'চাহিদার তুলনায় যোগান এবারে অনেকটাই বেশি আলুর ক্ষেত্রে। তবে সরকার সহায়ক মূল্যে কৃষকদের কাছ থেকে আলু কেনার বিষয়ে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে আমাদের কাছে খবর। কৃষকদের পাশে সরকার রয়েছে। কৃষকরা মহাজনের কাছ থেকে ঋণ না নিয়ে সরকারি ঋণ নিতে গেলে তাদের সুদের হারটাও অনেকটা কম হবে, বলেও জানান তিনি।
No comments:
Post a Comment