আর মাত্র কয়েকদিন পরেই বাঙালির প্রিয় নববর্ষ। চৈত্রের বকেয়া মিটিয়ে বৈশাখকে বরণ করতে প্রস্তুত সকলেই। আর নতুন বছরের জন্য চাই নতুন ক্যালেন্ডার। ইংরেজি নববর্ষের ক্যালেন্ডারের চাহিদা থাকে সরকারি নানান কাজকর্মের জন্য। অপরদিকে নানারকম আচার-অনুষ্ঠান, পুজো-পার্বণ কিংবা উৎসবের জন্য আজও বাঙালিদের প্রয়োজন বাংলা নববর্ষের ক্যালেন্ডার।
ইতিমধ্যেই নববর্ষকে ঘিরে ব্যবসায়ী মহলে ব্যস্ততা রয়েছে, পয়লা বৈশাখে নতুন ক্যালেন্ডার আর মিষ্টি দিয়ে শুভেচ্ছা আদান-প্রদান গ্রাহকদের সাথে। বিভিন্ন প্রেসে ক্যালেন্ডার ছাপার ব্যস্ততা চরমে। আর সেই সময়ই এবার পুরোপুরি হাতে আঁকা বাংলা নববর্ষের ক্যালেন্ডার তৈরির কাজ করছে বর্ধমান শহরের বিধানপল্লীর চিত্র কুটিরের শতাধিক ছাত্রছাত্রী। দিনরাত এক করে ওই পড়ুয়ারা নিজেদের পরিবেশ সচেতনতার ভাবনাকে ফুটিয়ে তুলছে ক্যালেন্ডারের মধ্য দিয়ে। এর আগে হাতে লেখা পুজো বার্ষিকী এই জেলাতেই নজর কেড়েছে, ধরে রেখেছে তাদের ঐতিহ্য। আর এবার হাতে আঁকা ক্যালেন্ডার।
মেমারির পাল্লারোড পল্লীমঙ্গল সমিতির সম্পাদক সন্দীপন সরকার জানান, এই ক্যালেন্ডার তৈরিতে ভেষজ রঙ ব্যবহার হচ্ছে, এখনও পর্যন্ত শতাধিক ক্যালেন্ডার তৈরী হয়েছে। অনলাইনে চাহিদা প্রচুর, হাতে আঁকা ক্যালেন্ডারের। পরের বার বাণিজ্যিকভাবে এটি তৈরীর ভাবনা রয়েছে তাদের, যাতে শিল্পীরা কিছু আয় করতে পারেন।
তিনি জানান, এই ক্যালেন্ডারের বড়ো বিশেষত্ব হল প্রতিটি মাসের পাতায় থাকবে কোনও না কোনও শাকসবজির বীজ লুকোনো। মাস ফুরালে সেই ফেলে দেওয়া পাতা থেকেই জন্ম নেবে নতুন গাছ।
সন্দীপন সরকার আরও জানান, পয়লা বৈশাখের আগেই রাজ্যপাল, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সহ পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের সভাধিপতি, জেলাশাসককে তাঁরা এই ক্যালেন্ডার উপহার হিসাবে তুলে দিতে চলেছেন, কোথাও সশরীরে কোথাও ডাক যোগে। নানা ক্ষেত্রে তাঁদের এই কাজে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে সুইচ অন ফাউন্ডেশন। তাঁরা বর্ধমানের বাইরে কলকাতায় ও রাজ্য স্তরে এই ক্যালেন্ডারকে জনপ্রিয় করে তুলতে উদ্যোগী হয়েছেন। ভবিষ্যতে যাতে এই ভাবনা থেকেই শিল্পীদের কর্মসংস্থান এবং পরিবেশ সচেতনতার বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া যায় তার জন্য আরও বৃহৎ আকারে উদ্যোগে নেওয়া হবে। গাছ মাস্টার অরুপ চৌধুরী এই উদ্যোগের সাধুবাদ জানিয়ে বলেন, ক্যালেন্ডারে গাছের বীজ, সম্পূর্ণ নতুন ভাবনা, সবুজায়নে ও পরিবেশ রক্ষায় এটা কার্যকরী উদ্যোগ।
চিত্র কুটিরের শিক্ষিকা সুতপা রায় জানান, এই ধরনের ক্যালেন্ডার তৈরির ভাবনা পুরো নিজস্ব ও প্রথম। এই ক্যালেন্ডার তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ সহ যাবতীয় সহায়তা করছে পাল্লারোড পল্লীমঙ্গল সমিতি আর বর্ধমান নেহেরু যুব কেন্দ্র।
No comments:
Post a Comment