শিশুদের নাক দিয়ে জল পড়া বন্ধ করতে ঘরোয়া প্রতিকার
প্রেসকার্ড নিউজ, হেল্থ ডেস্ক, ৯ মে: সর্দি বা নাক দিয়ে জল পড়ার সমস্যা শিশুদের মধ্যে খুবই সাধারণ। ক্রমাগত নাক দিয়ে জল পড়ার কারণে শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা হয় এবং এই সমস্যায় ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়াও করা যায় না। শিশুদের নাক দিয়ে জল পড়া বন্ধ করতে ওষুধের পরিবর্তে ঘরোয়া প্রতিকার ব্যবহার করলে শিশুরা দ্রুত আরাম পাবে এবং এসব প্রতিকারের কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। জেনে নিন শিশুদের নাক দিয়ে জল পড়া বন্ধ করার কিছু ঘরোয়া প্রতিকার।
তুলসী পাতা -
তুলসী এমনই একটি ওষুধ যা অনেক রোগের প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে। শিশুর নাক দিয়ে জল পড়ার সমস্যা দূর করতে তুলসী পাতার সঙ্গে কিছুটা গুড় বা মধু মিশিয়ে দিনে দুই-তিনবার খাওয়ান। এর ফলে নাক দিয়ে জল পড়া বন্ধ হয়ে যায় এবং এই প্রতিকারটি শিশুদের ঠান্ডাজনিত অন্যান্য সমস্যা থেকেও মুক্তি দেয়।
এর পাশাপাশি আপনি যদি শিশুকে দিনে দুবার তুলসী পাতা খেতে দেন তবে এটি তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও শক্তিশালী করে, যার ফলে তারা কাশি, সর্দি এবং নাক বন্ধ হওয়ার মতো সমস্যা থেকে রক্ষা পাবে।
জোয়ান -
জোয়ান এমন একটি মশলা যা অনেক রোগ নিরাময়ে ব্যবহৃত হয়। শিশুদের নাক দিয়ে জল পড়া বন্ধ করতে কিছু জোয়ান নিয়ে ভালো করে পিষে নিন। এরপর এটি রুমালে বেঁধে নিন। যখনই শিশুর নাক দিয়ে জল পড়বে তখনই শিশুকে এটির গন্ধ শুঁকতে দিন। এতে শিশু খুব তাড়াতাড়ি আরাম পাবে।
সরিষার তেল -
সরিষার তেল শিশুদের নাক দিয়ে জল পড়া বন্ধ করতে পারে। কয়েক ফোঁটা সরিষার তেল নিয়ে কয়েক সেকেন্ড গরম করুন। এর পর হালকা গরম হতে দিন। এক ফোঁটা হালকা গরম সরিষার তেল শিশুর নাকে দিন। এতে সর্দিও দ্রুত সেরে যাবে এবং নাক দিয়ে জল পড়াও বন্ধ হবে। হালকা গরম সরিষার তেল দিয়ে শিশুদের মালিশ করলেও ঠান্ডা ও ফ্লুতে উপশম পাওয়া যায়।
মধু -
যদি শিশুর নাক দিয়ে জল পড়ে তাহলে হালকা গরম জলে লেবু ও মধু মিশিয়ে এই মিশ্রণটি শিশুকে পান করতে দিন। এতে শিশুর বন্ধ নাক খুলে যাবে এবং সর্দিজনিত নানা সমস্যা থেকে মুক্তি পাবে।
গরম জল -
সর্দির কারণে শিশুদের মধ্যে জলের অভাব দেখা দেয়। তাদের শরীরে যেন জলের অভাব না হয়, তাই শিশুকে তরল পানীয় দিতে থাকুন। অল্প সময়ের ব্যবধানে শিশুকে বারবার হালকা গরম জল পান করতে দিন। এতে শিশু আরাম বোধ করবে।
ভাপ এবং গার্গল -
যদি শিশুটি বড়ো হয় এবং ভাপ নিতে পারে তবে এটি সর্দির জন্য সবচেয়ে কার্যকর প্রতিকার। ভাপ নিলে বন্ধ নাকও খুলে যায়। এর জন্য, একটি পাত্রে গরম জল রাখুন এবং বাষ্প বের হওয়া পর্যন্ত গরম করে তারপর তার ভাপ শিশুকে দিন। আপনি এই জলে সামান্য ভিক্স বা লবণও যোগ করতে পারেন।
শুধু মনে রাখবেন, স্টিম দেওয়ার সময় শিশুকে সবসময় আপনার সাথে রাখুন যাতে সে গরম জল দিয়ে নিজের ক্ষতি না করে এবং একই সাথে গরম জল থেকে সঠিক দূরত্ব বজায় রাখে। এর জন্য বাজারে পাওয়া স্টিমারও ব্যবহার করতে পারেন।
শিশু যদি গার্গল করতে পারে, তাহলে হালকা গরম জলে সামান্য লবণ মিশিয়ে দিনে দুই-তিনবার গার্গল করালেও তার নাক দিয়ে জল পড়া বন্ধ হয়ে যাবে।
আদা -
সর্দি বা নাক দিয়ে জল পড়া বন্ধ করার জন্য আদা একটি ভালো প্রতিকার। এতে থাকা পুষ্টি উপাদান শরীর থেকে সমস্ত ব্যাকটেরিয়া দূর করে। আদার রস করে মধুর সাথে মিশিয়ে শিশুকে খাওয়ালে নাক দিয়ে জল পড়া বন্ধ হবে। এই প্রতিকারটি খুব দ্রুত কাজ করে, অর্থাৎ দিনে দুই বা তিনবার এটি করলেই আপনি প্রভাব দেখতে শুরু করবেন।
হলুদ -
হলুদের আয়ুর্বেদিক গুণাগুণ সম্পর্কে সবাই জানে। এতে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য রয়েছে। শিশুর যদি নাক দিয়ে অনেক বেশি জল পড়তে থাকে, তাহলে হলুদ জ্বালিয়ে তার ধোঁয়া শিশুকে শুঁকতে দিন। এটি করলে নাক দিয়ে জল পড়া থেকে আরাম পাওয়া যায়। এর পাশাপাশি শিশুকে জল বা গরম দুধের সঙ্গে হলুদ মিশিয়েও দিতে পারেন।
কাড়া বা ক্বাথ -
সর্দি বা নাক দিয়ে জল পড়া রোধে ক্বাথ তৈরি করা খুবই সহজ। এর জন্য এক গ্লাস জলে লবঙ্গ, এলাচ, জোয়ান, তুলসী, আদা, হলুদ ইত্যাদি মিশিয়ে ফুটিয়ে নিন। ভালো করে ফুটে উঠলে এই ক্বাথ নামিয়ে ঠান্ডা হতে দিন। এবার এই মিশ্রণে মধু বা চিনি মেশান। এই ক্বাথ দিনে দুই থেকে তিনবার দিলে শিশু অনেক ভালো বোধ করবে।
রসুন -
নাক দিয়ে জল পড়া থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য রসুনও একটি ঘরোয়া প্রতিকার। রসুন ভাজার পর যদি শিশুকে খাওয়াতে পারেন, তাহলে দ্রুতই এর প্রভাব দেখতে পাবেন। শিশু এভাবে না খেলে দুধে রসুন সেদ্ধ করে তাতে চিনি বা মধু মিশিয়ে শিশুকে দিন। খুব শীঘ্রই ভালো ফল পাবেন।
ইউক্যালিপ্টাস তেল -
রুমালে ইউক্যালিপ্টাস বা নীলগিরির তেল লাগিয়ে শিশুকে শোঁকালে নাক দিয়ে জল পড়া বন্ধ হয় এবং নাক বন্ধের সমস্যা থাকলে তাও উপশম হয়।
বি.দ্র: এখানে দেওয়া তথ্য সাধারণ জ্ঞান ও ঘরোয়া প্রতিকার হিসেবে দেওয়া। প্রেসকার্ড নিউজ এটি নিশ্চিত করে না। কোনও নতুন কিছু শুরুর আগে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞর পরামর্শ অবশ্যই নিন।
No comments:
Post a Comment