পাটনায় ফোটো শেসন; ২০ লক্ষ কোটির কেলেঙ্কারির সব এক মঞ্চে, বিরোধী ঐক্যকে নিশানা প্রধানমন্ত্রী মোদীর
প্রেসকার্ড নিউজ ন্যাশনাল ডেস্ক, ২৭ জুন: বিজেপির ১০ লক্ষ কর্মীদের উদ্দেশ্যে মঙ্গলবার ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এই সময় বিরোধীদের তীব্র আক্রমণ করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী মোদী বিরোধী ঐক্যের প্রচেষ্টাকে কটাক্ষ করে তাদের করুণার পাত্র, ও 'ভ্রষ্টাচারীদের মিলন', বলেন। তিনি বলেন, বিজেপির ঘোর বিরোধী দলগুলির মধ্যে ২০১৪ এবং ২০১৯ সালের চেয়ে বেশি ছটফটানি রয়েছে।' প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগে যাদের মানুষ শত্রু বলত, জল খেয়ে গালি দিত, আজ তাদের সামনে সাষ্টাঙ্গ হচ্ছে। তাদের এই অস্বস্তি দেখায় যে দেশের মানুষ ২০২৪ সালের নির্বাচনে বিজেপিকে ফিরিয়ে আনতে তাদের মন তৈরি করেছে। ২০২৪ সালে আবার বিজেপির বিশাল জয় নিশ্চিত, যার কারণে সমস্ত বিরোধী দল আতঙ্কে রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেন, আজকাল একটা কথা বার বার আসে- গ্যারান্টি। এই সমস্ত বিরোধী দল... এই লোকেরাই ভ্রষ্টাচারের গ্যারান্টি, তারাই লাখ লাখ কোটি টাকার দুর্নীতির গ্যারান্টি। সম্প্রতি পাটনায় নীতীশ কুমারের নেতৃত্বে বৈঠকের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেন, 'কিছুদিন আগে একসঙ্গে ছবি তোলার একটি কর্মসূচি ছিল। সেই ফটোতে যে সমস্ত লোকের আছেন, তাদের সবার মিলে একত্রিত করলে সব মিলে ২০ লক্ষ কোটি টাকার দুর্নীতির গ্যারান্টি।'
প্রধানমন্ত্রী মোদী কংগ্রেস, এনসিপি, আরজেডি, টিএমসি-র মতো দলগুলির বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগ গণনা করিয়ে বলেন, "কংগ্রেসের কেলেঙ্কারিরই মূল্য লক্ষ-কোটি টাকার। ১ লক্ষ ৮৬ কোটি টাকার কয়লা কেলেঙ্কারি, ১ লাখ ৭৬ হাজার কোটির টুজি কেলেঙ্কারি, ৭০ হাজার কোটি টাকার কমনওয়েলথ কেলেঙ্কারি, ১০ হাজার কোটি টাকার মনরেগা কেলেঙ্কারি, হেলিকপ্টার থেকে সাবমেরিন পর্যন্ত এমন কোনও ক্ষেত্র নেই, যা কংগ্রেসের কেলেঙ্কারির শিকার হয়নি। দ্বিতীয় আরজেডির দিকে দেখুন, হাজার কোটি টাকার কেলেঙ্কারির অভিযোগ রয়েছে। পশুখাদ্য কেলেঙ্কারি, আলকাটরা কেলেঙ্কারি, বন্যা ত্রাণ কেলেঙ্কারি, আরজেডির কেলেঙ্কারির তালিকা এত দীর্ঘ যে আদালতও ক্লান্ত। একের পর এক শাস্তি ঘোষণা করছে।"
তিনি আরও বলেন, "ডিএমকের ওপর অবৈধভাবে ১.২৫ লক্ষ কোটি টাকার সম্পত্তি তৈরির অভিযোগ, তৃণমূলের ২৩ হাজার কোটি টাকা কেলেঙ্কারি, রোজ ভ্যালি কেলেঙ্কারি, সারদা কেলেঙ্কারি, গরু চুরি, কয়লা চোরাচালান কেলেঙ্কারির অভিযোগ করেছে। বাংলার মানুষ এই কেলেঙ্কারি কখনও ভুলতে পারবে না। এনসিপি সম্পর্কে কথা বললে, এটি প্রায় ৭০ হাজার কোটি টাকার কেলেঙ্কারির অভিযোগে অভিযুক্ত। এই দলগুলোর কেলেঙ্কারির মিটার কখনই ডাউন হয় না।"
প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেন, "এখন দেশকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে দেশ কেলেঙ্কারির গ্যারান্টি মেনে নেবে কি না? দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেন, 'যদি তার কেলেঙ্কারির গ্যারান্টি থাকে, তাহলে মোদীরও একটি গ্যারান্টি আছে। আমার গ্যারান্টি, প্রতিটি স্ক্যামারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার গ্যারেন্টি। প্রত্যেক চোর-লুটেরাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার গ্যারেন্টি। যারা গরীবদের লুটেছে, যারা দেশকে লুটেছে, তাদের হিসেব তো হবেই। আজ যখন আইনের ডান্ডা চলছে, জেলখানার যখন সামনে দেখা যাচ্ছে, তখনই চলছে এই জুগলবন্দি। তাদের সাধারণ ন্যূনতম কর্মসূচি হল দুর্নীতির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ এড়ানো। বিজেপির বুথ স্তরের কর্মীরা যদি এই জিনিসটি প্রতিটি গ্রামে নিয়ে যায়, তবে লোকেরা তাদের বাস্তবতা জানতে পারবে। জনগণ নিজেরাও সচেতন, তারা দেখছে বিরোধী ঐক্যের এই প্রচেষ্টার পেছনে সব দলের উদ্দেশ্য কী। ওই দলগুলোর আসল পরিচয় ২০ লক্ষ কোটি টাকার কেলেঙ্কারির গ্যারান্টি। এটাই তাদের ইতিহাস।
প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেন, "গ্রামের কোনও অপরাধী যদি জেলে সাজা ভোগ করে গ্রামে আসে, তাহলে তার প্রতি মনোভাব কী? তারা তার কাছে যায়, যাদের জেলে যাওয়ার ভয় রয়েছে, তারা জিজ্ঞেস করে জেল কেমন হয়? পশুখাদ্য কেলেঙ্কারিতে সাজাপ্রাপ্ত লালুপ্রসাদ যাদবের দিকে ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেন, 'পাটনার চেয়ে ভালো জায়গা আর কী হতে পারে। আজকে আমরা দেখছি যে অনেক লোক যারা জামিনে আছে, যারা কেলেঙ্কারির অভিযোগে অভিযুক্ত, যাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে, এই ধরনের লোক, যারা সাজা ভোগ করছেন বা কারাগার থেকে অভিজ্ঞতা নিয়ে এসেছেন তাদের সাথে দেখা করছেন। এভাবেই তারা একে অপরকে বাঁচানোর চেষ্টা করছেন। এটা দেশের মানুষকে বুঝতে হবে, দেশের মানুষ আমাদের চেয়ে বেশি বোঝে।"
প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেন, "আপনি যদি গান্ধী পরিবারের ছেলে-মেয়ের উন্নয়ন করতে চান, তাহলে কংগ্রেসকে ভোট দিন, যদি মুলায়ম সিংয়ের ছেলের ভালো করতে চান, তাহলে সমাজবাদী পার্টিকে ভোট দিন। লালু পরিবারের মেয়েদের ভালো করতে চাইলে আরজেডিকে ভোট দিন। শরদ পাওয়ারের মেয়ের ভালো করতে চাইলে এনসিপিকে ভোট দিন। আবদুল্লাহ পরিবারের ছেলের ভালো করতে চাইলে ন্যাশনাল কনফারেন্সকে ভোট দিন। করুণানিধির ছেলে-মেয়ে, নাতি-নাতনিদের ভালো করতে চাইলে ডিএমকে-কে ভোট দিন, কিন্তু আমার কথা মন দিয়ে শুনুন। আপনি যদি আপনার ছেলে, আপনার মেয়ে, আপনার নাতি, আপনার নাতি, আপনার আত্মীয়, আপনার নাতি, আপনার পরিবারের সন্তানদের ভালো করতে চান, তাহলে বিজেপিকে ভোট দিন।"
No comments:
Post a Comment