দেগঙ্গায় মৃত কিশোরের পরিবারকে ফোন রাজ্যপালের, দিলেন পাশে থাকার আশ্বাস
নিজস্ব সংবাদদাতা, উত্তর ২৪ পরগনা, ০৫ জুলাই: তৃণমূলের মিছিলে বোমা হামলায় মৃত্যু একাদশ শ্রেণীর পড়ুয়ার। অভিযোগ, সিপিএম ও আইএসএফের ছোড়া বোমার আঘাতে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। দুই বিরোধী দলের পাল্টা দাবী, তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দলের জেরে এই হামলা। ঘটনাটি ঘটেছে মঙ্গলবার রাতে উত্তর ২৪ পরগনার দেগঙ্গা থানার গাঙহাটি গ্রামে। ঘটনার পর রাজনৈতিক হামলা, পাল্টা হামলায় অগ্নিগর্ভ এলাকা। মৃত কিশোরের নাম ইমরান হোসেন। বুধবার দুপুরে ইমরানের পরিবারের সাথে ফোনে কথা বলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস।
পুলিশও স্থানীয় সূত্রের খবর, গাঙহাটি গ্রামের বাসিন্দা তথা তৃণমূল সমর্থক ইমদাদুল হক মঙ্গলবার বিকেলে দুই ছেলে হাসানুজ্জামান ও ইমরান হোসেনকে নিয়ে তৃণমূলের মিছিল ও সভায় যোগ দিতে গিয়েছিলেন। রাতে ফেরার সময় কিছুক্ষণের জন্য বাড়ি থেকে ১ কিলোমিটার দূরে জাহাঙ্গির গাজি ওরফে পুটের বাড়ির সামনে রাস্তার ওপর দাঁড়িয়ে ছিলেন তারা। অভিযোগ, সেই সময় সিপিএম সমর্থক পুটের বাড়ি ও পাশের এক স্কুলের ছাদ থেকে ইট ও বোমা ছোঁড়া হয়। তারই একটা বোমা এসে লাগে ইমরানের বুকে। ঐ সময় কয়েক রাউন্ড গুলি চেলে বলেও অভিযোগ। পরবর্তীতে ইমরানকে উদ্ধার করে বিশ্বনাথপুর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
ইমরানের দাদা হাসানুজ্জামান বলেন, "আমরা ৮ থেকে ১০ জন দাঁড়িয়ে ছিলাম রাস্তার ওপরে। হঠাৎ শুরু হয় ইট বৃষ্টি, তারপর বোমা। একটি বোমা এসে লাগে ভাইয়ের বুকে। ঝাঝরা হয়ে যায় ভাই। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তাঁর। আমাদের কান বোমার শব্দে আক্রান্ত হয়। এখনও পুরোপুরি ঠিক হয়নি। আমি বোমার আওয়াজে ওখানেই পড়ে যাই, কানে শুনতে পাচ্ছিলাম না কিছু। ভাইয়ের মৃত্যুর আমরা সঠিক বিচার চাই প্রশাসনের কাছে।''
এক তৃণমূল কর্মী সইদুল মণ্ডল বলেন, "আমাদের তৃণমূলের মিটিং হচ্ছিল। আচমকা আইএসএফ সিপিএম যৌথভাবে ঐ মিটিংয়ে হামলা করেছে, বোমা মেরেছে, গুলি করেছে। ওদের হয়তো দুর্বলতা ছিল তাই করেছে। তিনি জানান, ৫ জন আহত হয়েছেন এবং রাতেই ৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
তৃণমূলের অভিযোগ, আইএসএফ সমর্থকরা পুটের বাড়ির ছাদ থেকে এলোপাথাড়ি বোমা ও গুলি ছুঁড়তে থাকে ইমরান ও তার বাবাকে লক্ষ্য করেই। পাল্টা সিপিএম ও আইএসএফের দাবী, গাঙহাটিতে গ্রাম সংসদে তৃণমূলের বিপক্ষে লড়ছে নির্দল প্রার্থীরা। তাঁদের কোনও প্রার্থী নেই। আর সেই শক্তি নেই যে, এই হামলা করবে।
এদিকে ইমরানের মৃত্যুর পর তৃণমূল ও আইএসএফের আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণে অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে গ্রাম। অভিযোগ, বেছে বেছে সিপিএম ও আইএসএফ সমর্থকদের কয়েক জনের বাড়িতে হামলা চালায় তৃণমূলের ক্ষিপ্ত কর্মীরা। পুটের বাড়িতে চড়াও হয় তারা। ভাঙা হয় বাড়ির জানালা ও গাড়ি।
দেগঙ্গার সিপিএম নেতা ইমতিয়াজ উদ্দিন বলেন, "ওরা নিজেরা মারামারি করে আমাদের ঘাড়ে দোষ চাপাচ্ছে। কয়েক জনের খড়ের গুদাম, ঘর-বাড়িতে অগ্নি সংযোগ থেকে বোমাবাজি করে। পুলিশকে আগে থেকেই জানিয়েছিলাম। দুষ্কৃতীদের নাম উল্লেখ করে নির্বাচন কমিশনে স্মারকলিপিও জমা দিয়েছি। পুলিশ কোনও পদক্ষেপ না করায় এ ঘটনা ঘটেছে।"
এদিন ঘটনার খবর পেয়ে পৌঁছায় দেগঙ্গা থানার বিশাল পুলিশ বাহিনী। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলেও বুধবার থমথমে ছিল গাঙহাটি গ্রাম৷ পুলিশ পিকেটও বসেছে গ্রামে। গ্রাম ছেড়েছেন বহু পরিবার।পুলিশ জানিয়েছে, এখনও পর্যন্ত কিশোরের মৃত্যুর ঘটনায় পাঁচ জনকে গ্রেফতার করেছে।
বারাসত পুলিশ জেলার সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বলেন,"ইতিমধ্যে পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছি।নিজেদের হেফাজতে নিয়ে ঘটনায় জড়িতদের নাম জানতে জেরা করা হবে। এলাকায় তল্লাশি চলছে।"
এদিকে বুধবার দুপুরে ইমরানের পরিবারের সাথে টেলিফোনে কথা বলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। ছেলের মৃত্যু শোকে কথা বলার শক্তি হারিয়েছেন ইমরানের বাবা-মা।রাজ্যপালকে ঘটনার কথা জানাতে গিয়ে একাধিকবার কান্নায় ভেঙে পড়েন তারা।ইমরানের পরিবার সূত্রের খবর,রাজ্যপাল পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন। পাশাপাশি রাজ্যে লাগাতার হিংসা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন রাজ্যপাল। উল্লেখ্য, রাজ্যে এ নিয়ে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়াল ১৬-তে।
No comments:
Post a Comment