মশার তৈরি কেক-স্যুপ, চেটেপুটে খাচ্ছে মানুষ! - press card news

Breaking

Post Top Ad

Post Top Ad

Friday 25 August 2023

মশার তৈরি কেক-স্যুপ, চেটেপুটে খাচ্ছে মানুষ!

 


মশার তৈরি কেক-স্যুপ, চেটেপুটে খাচ্ছে মানুষ! 




প্রেসকার্ড নিউজ ওয়ার্ল্ড ডেস্ক, ২৫ আগস্ট: বর্ষাকাল এলে বৃষ্টির পাশাপাশি বাড়ে মশাদের আনাগোনাও। সেই সঙ্গেই মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে ডেঙ্গুর মত মশাবাহিত রোগ। অতএব ধরে নেওয়া যেতেই পারে যে, এখন আমাদের প্রধান শত্রু ডেঙ্গু এবং এই মরশুমে প্রায় সকলের বিপদ শিওড়ে। কিন্তু এই যে মশা আমাদের কাছে এতটা যন্ত্রণাদায়ক হলেও বিশ্বের এমন এক জাতি আছে যাদের জন্য মশা আশীর্বাদ স্বরূপ। মশার উৎপাত থেকে রক্ষা পেতে আমরা অনেক কিছুই করি। কিন্তু তারা মশার উৎপাদন যেন বেশি হয়, সেটাই চান। আফ্রিকার লেক ভিক্টোরিয়া এবং এর আশেপাশের এলাকার বাসিন্দাদের কাছে বর্ষা এক উৎসবের সময়। কারণ এই মশা থেকেই তৈরি হয় কেক এবং স্যুপ, যা তাদের খুবই পছন্দের একটি খাবার। 


প্রতি বছর বর্ষার মরশুমে আফ্রিকার ভিক্টোরিয়া গ্রেট লেক অঞ্চলে উড়তে থাকে লাখ লাখ মশা। মশার ভিড়ে কালো হয়ে আসে আকাশ। অনেক সময় মশার কারণে দূরের অনেক কিছুই দেখা যায় না। মশার পরিমাণ বাড়ার সাথে সাথে তাদের খুশিও বাড়তে থাকে। কারণ তাদের কাছে মশা হল মাংস খাওয়ার প্রধান মাধ্যম। আফ্রিকার এই অঞ্চলে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর বাস। এখনও অনেক লোক আছেন, যারা পর্যাপ্ত পরিমাণে খাবার বা বিশুদ্ধ জল পান করতে পারেন না। কিন্তু তারা এর বিকল্প খুঁজে নেয় মশার কেক বা স্যুপ থেকে। এটি স্থানীয় খাবার, যা মাংসের বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হয়। 


আফ্রিকা বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মিঠা জলের লেক হল ভিক্টোরিয়া লেক। ১৮৫৮ সালে ব্রিটিশ অভিযাত্রীরা লেকটি আবিষ্কার করেন। বিশাল লেকে প্রতিবছর বর্ষার মরশুমে কয়েকশো মিলিয়ন মশা জন্ম নেয়, যা পরবর্তীতে তাদের প্রোটিনের যোগান দেবে। লেক ভিক্টোরিয়ার ছোট-বড় সবাই এই উৎসবে যোগ দেয়। হাতে খালি হাঁড়ি নিয়ে তারা মশা সংগ্রহ করে। উড়তে থাকা মশার দলে একবার হাঁড়ি শূন্যে ঘোরালেই হাঁড়িতে জমা হয় মশার স্তুপ। সেই মশা থেকেই তৈরি হয় কেক।


কেক তৈরির জন্য প্রথমে সংগ্রহ করা হয় মশা। হাতে ডোলে মন্ড করতে হয়, যা দেখতে অনেকটা ভর্তার মত। সেই মন্ড ভাগ করে মাংসের চাপের মতো বানানো হয়, যেভাবে বার্গারের প্যাটি বানানো হয় ঠিক সেভাবেই। এরপর সেগুলোকে ভাজতে হয়। পাতলা প্যানে তেল দিয়ে উল্টে পাল্টে দুপাশে ভেজে নেওয়া হয়। এ সময় চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে মশার চাপের ঘ্রাণ। ভেতরের অংশ কাঁচা থাকলেও যদিও বাইরের অংশে কালো হয়ে যায় তাহলে সমস্যা নেই। 


এছাড়াও এই মিশ্রণ দিয়ে তারা স্যুপ তৈরি করেও খান। তৈরি মশার কেক খেতে অনেকটা মাছের বড়ার মত। তাদের বিশ্বাস মশাগুলো ভিক্টোরিয়া লেকের আশেপাশে থাকে, তাদের মাংস থেকে সামুদ্রিক খাদ্যের স্বাদ পাওয়া যায়। এই কারণে তাদের ধারণা মশার কেক তাদের দৈনন্দিন প্রোটিনের চাহিদা মেটাতে পারে। তবে গবেষকরা বলেছেন, এভাবে মশা খাওয়া নিরাপদ নয়। নানান ধরণের স্বাস্থ্য সমস্যা তৈরি হতে পারে এর ফলে। 


আফ্রিকার এই জনগোষ্ঠীর দাবি তারা শত শত বছর ধরে এভাবেই মশা খেয়ে আসছেন, তাদের কখনও কোনও সমস্যা হয়নি। আফ্রিকার এই জনপ্রিয় খাবার মশার কেক, এক কামড়ে হাজার হাজার মশা। প্রোটিনের অন্যতম উৎস হলেও এটি আসলে তারা খেতে বাধ্য হয়েছেন। এটি তাদের জন্য বিলাসিতা নয় বরং দারিদ্র্যের অন্যতম এক উদাহরণ। মূলত এই অঞ্চলের মানুষ পর্যাপ্ত খাদ্যের অভাবে বিভিন্ন পোকামাকড় খেয়ে থাকেন, এমনকি ক্ষিদে মেটাতে মাটির তৈরি বিস্কুটও খান তারা।

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad