নিকাশি সমস্যা, দোসর বৃষ্টি! ব্যাপক ক্ষতির মুখে চাষিরা, রাস্তা আটকে বিক্ষোভ
নিজস্ব সংবাদদাতা, মালদা, ২৬ সেপ্টেম্বর: বন্ধ হয়ে গেছে ক্যানেল, নিকাশি সমস্যা সমাধানে প্রশাসনের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ তুলে বাঁশের ব্যারিকেড দিয়ে রাস্তা বন্ধ করে বিক্ষোভ চাষীদের। ঘটনা মালদার চাঁচল ১ নং ব্লকের মকদমপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের আশ্বিনপুর গ্রামের।এখানে কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে চাষিদের হাহাকার। নিকাশি সমস্যা নিয়ে প্রশাসনিক উদাসীনতায় অথৈ জলে আশ্বিনপুরের চাষিরা। বিগত তিন দিনের ভারী বৃষ্টিপাতে আশ্বিনপুর মৌজায় প্রায় হাজার বিঘা ফসলি জমি জলের তলায়। ব্যাপক ক্ষতির মুখে ধান ও রেশম চাষিরা।এলাকার বেশ কয়েকটি পুকুরেও জল উপচে পড়ায় নষ্ট হয়েছে কয়েক লক্ষ টাকার মাছ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এই সমস্যার মূল কারণ হল এলাকার একমাত্র নিকাশি ব্যবস্থার পথ বন্ধ হয়ে যাওয়া। রবিবার সকালে নিকাশি সমস্যা সমাধানে প্রশাসনিক হস্তক্ষেপের দাবী জানিয়ে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন কৃষকরা। কিন্তু তারপরেও সমস্যা সমাধান না হওয়ায় মঙ্গলবার দুপুরে আশ্বিনপুরে গ্রামীণ সড়ক অবরোধ করে রাস্তার দুই প্রান্ত বাঁশের ব্যারিকেড দিয়ে ঘিরে বিক্ষোভ দেখান এলাকার কৃষকেরা।
বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, এলাকা দিয়ে একটি ক্যানেল গেছে। সেই ক্যানেলই এলাকার জল নিকাশির একমাত্র রাস্তা। কিন্তু কয়েক মাস আগে ওই ক্যানেলের গতিপথে পার্শ্ববর্তী গ্রামের এক ব্যক্তি পুকুর খনন করেন, যার ফলে বন্ধ হয়ে গেছে ক্যানেল। সেখান থেকেই সমস্যার সূত্রপাত।গত আগস্ট মাসের ৯ তারিখ ব্লক প্রশাসনের কাছে কৃষকেরা অভিযোগ করলেও সুরাহা হয়নি। এদিকে ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে চাষের জমি থেকে এখনও জল নামেনি। কিন্তু এই ব্যাপক ক্ষতির পরও সমস্যা সমাধান করছে না প্রশাসন, এমনই অভিযোগ। আর তাই সমস্যা সমাধানের দাবীতে গ্রামীণ সড়ক বাঁশের ব্যারিকেড দিয়ে বন্ধ করে বিক্ষোভ।
বিক্ষোভকারী রাজ মহম্মদের কথায়, "প্রশাসন যদি এখনও সুরাহা না করে, তাহলে আমরা গম বা সরিষা চাষ করতে পারব না। নিকাশি না থাকলে তো চাষ করা সম্ভব নয়। আমাদের ভাতে মরতে হবে। তাই আজ বিক্ষোভ করছি।প্রয়োজন হলে আমরণ অনশন করব।"
বিক্ষোভকারী মোঃ জামাল আলী বলেন, "প্রশাসনকে আমরা দীর্ঘদিন ধরে বলছি। সমস্যার সমাধান করলে আজকে এত ক্ষতি হত না। এবার ক্ষতি হওয়ার পরেও সমাধান করছে না। আমরা আর কি করতে পারি।"
এদিকে বিক্ষোভ চলাকালীন রাস্তার পাশ দিয়ে ওই গ্রামেরই আনসার আলী নামে এক মাঝ বয়সী ব্যক্তি হেঁটে যাচ্ছিলেন ঘাড়ে ব্যাগ নিয়ে। সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধিদের দেখে এগিয়ে এসে তিনি বলেন, "আমার দশ বিঘা জমির ধান নষ্ট হয়ে গেল। লোন করে জমিতে ধান লাগিয়েছিলাম, বিক্ষোভ করে আর কি করব! এই এখন বেরিয়ে যাচ্ছি দিল্লী যাবো খাটতে।"
এদিকে প্রায় দুই ঘন্টা লাগাতার বিক্ষোভ চলার পর প্রশাসনিক প্রতিনিধিদের মাধ্যমে চাষিদের আশ্বাসবার্তা পাঠান চাঁচল ১ নং ব্লকের সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক সমীরণ ভট্টাচার্য। তারপরেই রাস্তার দুই প্রান্ত থেকে বাঁশের ব্যারিকেড খুলে নেওয়ার পাশাপাশি বিক্ষোভ তুলে নেন চাষীঊরা। এই প্রসঙ্গে বিডিও সমীরণ ভট্টাচার্য বলেন, "সমস্যা নিয়ে আমরা অবগত রয়েছি। ভূমি দপ্তর বিষয়টি দেখছে। ৭২ ঘন্টার মধ্যে সমস্যার সমাধান হবে।"
No comments:
Post a Comment