বিলুপ্তির মুখে বাংলার তাঁত, সরকারি সাহায্যের আর্তি
নিজস্ব সংবাদদাতা, মালদা, ১৩ সেপ্টেম্বর: পুজো এলেই হাত চালিত তাঁতে বোনা কাপড় তৈরির ঠকঠক আওয়াজে ঘুম ভাঙতো গ্রামবাসীদের। বিশ্রামের সময় থাকতো না। কিন্তু বর্তমানে রেডিমেড টেক্সটাইলের দুনিয়ায় বাংলার তাঁত বিলুপ্তির পথে। এক সময় পুরাতন মালদার সাহাপুর গ্রাম তাঁতিপাড়া নামে পরিচিত ছিল গোটা রাজ্য জুড়ে। রমরমিয়ে চলত তাঁতের কাপড় বোনা। কিন্তু এখন সেই সব ইতিহাস। কদর কমেছে তাঁতে বোনা কাপড়ের। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিতে না পেরে আজ ধ্বংসের মুখে প্রাচীন বাংলার এই কুটির শিল্প।
এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত পুরাতন মালদার সাহাপুরের অচিন্ত্য দাস, হারাধন দাস, নিতাই দাসের মতো কারিগররা জানান, পুজো এলেও এখন তাঁদের মুখে হাসি নেই। অথচ আগে পুজো এলে গোটা গ্রাম জুড়ে কয়েক মাস আগে থেকেই শুরু হতো উৎসব। হাতচালিত তাঁতে বোনা কাপড়ের ঠকঠক আওয়াজে ঘুম ভাঙতো গ্রামবাসীদের। কিন্তু আজ প্রাচীন বাংলার এই কুটির শিল্প বিলুপ্তির পথে। আগের মত তাঁতের কাপড় বোনার বায়না পান না কারিগররা।
একটা সময় ছিল, পুরাতন মালদা ব্লকের সাহাপুর এবং মঙ্গলবাড়ি অঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকার প্রায় দশ হাজার কারিগর এই পেশার সাথে যুক্ত ছিলেন। কিন্তু বর্তমানে সেই সংখ্যা হাতে গোনা খুব বেশি হলে ১০-২০ টি পরিবার হবে। কারিগররা জানান বর্তমানে শাড়ি বোনের বায়না তারা পান না। তবে, জামা পাঞ্জাবির কাপড় বোনার কাজ বাধ্য হয়ে তারা করছেন। কারণ তারা অন্য কাজ করতে পারবেন না। এই কাজে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন। ১২ মিটার পাঞ্জাবি কিংবা জামার কাপড় বুনলে ৩০০ টাকা মজুরি পান। তাও আবার ১২ মিটার কাপড় বুনতে দু'দিন সময় লেগে যায়। তাই সরকারি সাহায্যের আর্জি জানিয়েছেন তাঁত শিল্পের সাথে যুক্ত কারিগররা।
এই বিষয়ে মালদা জেলা পরিষদের সভাধিপতি লিপিকা বর্মন ঘোষ জানান, বাংলার তাঁত শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য রাজ্য সরকার একাধিক উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন একাধিক প্রকল্প এবং ভাতা দিচ্ছেন কারিগরদের। বিষয়টি খতিয়ে দেখে জেলার হাতচালিত তাঁতে বোনা কাপড় শিল্পীদের পাশে দাঁড়াবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন সভাধিপতি।
No comments:
Post a Comment