সম্প্রীতির নিদর্শন! চাঁচল রাজবাড়ির পুজো ১৭ দিন - press card news

Breaking

Post Top Ad

Post Top Ad

Wednesday 11 October 2023

সম্প্রীতির নিদর্শন! চাঁচল রাজবাড়ির পুজো ১৭ দিন


 সম্প্রীতির নিদর্শন! চাঁচল রাজবাড়ির পুজো ১৭ দিন 



মালদা: আগে ছিল রাজবাড়ি। এখন রাজাও নেই, রাজত্বও নেই। এখন রাজবাড়ির একটি অংশে তৈরি হয়েছে মহকুমা আদালত, আর একটি অংশে কলেজ। একাংশে এখনও মন্দির রয়েছে। সেইসঙ্গে ঐতিহ্যের গরিমায় আজও উজ্জ্বল তিনশো বছরেরও বেশি প্রাচীন চাঁচল রাজবাড়ির পুজো। সম্প্রীতির নিদর্শন চাঁচল রাজবাড়ির এই দুর্গা পুজো। ষষ্ঠীর ১২ দিন আগে কৃষ্ণা নবমী তিথি থেকে শুরু হয় পুজো। টানা ১৭ দিন ধরে এই পুজো হয়। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। প্রত্যেকটা বনেদি পুজোর মতোই এই পুজোরও নিজস্ব কিছু ঐতিহ্য ও কাহিনী রয়েছে।    


জানা যায়, সতেরো শতকের শেষভাগ জুড়ে উত্তর মালদহের বিস্তীর্ণ এলাকার রাজা ছিলেন রামচন্দ্র রায়চৌধুরী। ধর্মপ্রাণ প্রজাদরদী রাজা হিসেবে তাঁর সুখ্যাতি ছিল। কথিত আছে, একবার রাজা দেবী চণ্ডীর স্বপ্নাদেশে মহানন্দার ঘাটে স্নান করার সময় তাঁর হাতে চতুর্ভুজা অষ্টধাতুনির্মিত মূর্তি উঠে আসে। দেবী চণ্ডীর অষ্টধাতুর মূর্তি সতীঘাটা থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে রাজবাড়িতে এনে প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। সেদিন থেকেই রাজবাড়িতে শুরু হয় দেবীর নিত্যপুজো। আর প্রতি বছর মহাসমারোহে রাজবাড়ির দুর্গা পুজো হয়ে আসছে।  


পরবর্তীকালে পুজোর জন্য পাকা মন্দির নির্মিত হয়। আজও প্রাচীন প্রথা মেনে সপ্তমী তিথিতে রাজবাড়ি থেকে দুর্গা দালানে নিয়ে আসা হয় অষ্টধাতুর চতুর্ভুজা মা চণ্ডীকে। দশমীতে তিনি ফের রাজবাড়িতে ফিরে যান। দীর্ঘ ১৭ দিন ধরে চলে পুজো। 


বর্তমানে রাজা নেই, রাজ্যপাটও নেই, রাজবাড়ির পুজো পরিচালনা করে ট্রাস্টি বোর্ড। তবুও রাজার সেই প্রাচীন রীতি মনে আজও মালদার চাঁচলের রাজ বাড়ির দূর্গা পূজা হয়ে আসছে। প্রতিদিন পুজোর পাশাপাশি সন্ধ্যায় বসে চন্ডীপাঠের আসর, যা দশমীর সন্ধ্যায় দেবী বিসর্জন পর্যন্ত হয়। এই রীতি আজও অক্ষুন্ন। 


দেবী এখানে চতুর্ভূজা সিংহবাহিনী। এলাকার মানুষের বিশ্বাস, চন্ডী মণ্ডপের দেবীর জন্যই তারা সুরক্ষিত। সেই আবেগ, বিশ্বাসে ভর করেই ভক্তি-নিষ্ঠা, ঐতিহ্যের এই পুজোয় একবারের জন্য হলেও হাজির হন স্থানীয়রা। রীতি মেনে অষ্টমীর দিন কুমারী পুজোও হয়। ওই দিন গোটা চাঁচলই হাজির হয় চন্ডীমণ্ডপে।


সেই আদিকাল থেকেই আজও দশমীর সন্ধ্যায় বিসর্জনের সময় সেখানকার অর্থাত্‍ মরা মহানন্দার নদীর ওপারের বৈরগাছি এলাকার মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ লণ্ঠন নিয়ে পথ দেখান মাকে। সেই রীতি এখনও প্রচলিত।

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad