সন্ধি পুজোয় শুন্যে গুলি, লুচি-সুজির ভোগ! ১১৩ বছরের প্রাচীন রীতি আজও অটুট চৌধুরী পরিবারের পুজোয়
দক্ষিণ দিনাজপুর: একটা সময় ছিল যখন পারিবারিক আয়োজনেই দুর্গা পূজা হতো। পারিবারিক আবহে এই দুর্গা পূজায় সাধারণত শাস্ত্রাচার পালনের ওপরেই জোর দেওয়া হতো বেশি। কিন্তু বারোয়ারি পূজার দাপটে এখন অনেকটাই বিলীন হতে বসেছে পারিবারিক দুর্গা পূজা। আবার কোথাও কোথাও এখনও ঐতিহ্য হিসেবে পারিবারিক পূজার সংস্কৃতি টিকে আছে। সেরকম ভাবেই ঐতিহ্য আর পারিবারিক আবেগ নিয়ে এখনও ১১৩ বছর ধরে নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার পতিরাম থানার নাজিরপুর এলাকার বইদুল গ্রামের চৌধুরী পরিবারে জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে দুর্গা পূজার আয়োজন করা হচ্ছে।
এ অঞ্চলের সবচেয়ে পুরনো হিসেবে পরিচিত এই বইদুল চৌধুরী বাড়ির দুর্গাপূজা। ১১৩ বছর আগে বর্তমান চৌধুরী পরিবারের প্রাণপুরুষ প্রফুল্ল লাল চৌধুরী প্রথম এই পারিবারিক পুজো প্রবর্তন করে ছিলেন। কালের নিয়মে তিনি গত হওয়ার পরও তাঁর বংশধররা এই পুজো চালনা করে আসছেন। বাদ যায়নি একটি বছরও। তবে নিজেদের সুবিধার্থে বর্তমান চৌধুরী পরিবারের ছয় শরিক প্রত্যেক বছর নিজেরা পালা করে এক-এক পরিবার এই পারিবারিক পুজো করে থাকে।
শুধু এই পুজো নয়, পারিবারিক রীতি অনুযায়ী বৈশাখ মাস থেকে চৈত্র মাস অবধি দুর্গা, কালী, লক্ষ্মী, সরস্বতী থেকে সত্যনারায়ণ পুজো পর্যন্ত এই পরিবার করে থাকে। এভাবেই শতাব্দী প্রাচীন এই চৌধুরী পরিবারের বনেদি দুর্গা পুজো হয়ে আসছে বইদুলের এই গ্রামে।
এই পুজো হয়ে থাকে বৈষ্ণব মতে, তাই মায়ের অন্ন ভোগ একমাত্র দশমীর দিন দেওয়া হলেও ষষ্ঠী থেকে নবমী মাকে লুচি-সুজি ও ফলমুল এবং অন্যান্য মিষ্টান্ন ভোগ দেওয়ার রীতিই চলে আসছে বলে জানিয়েছেন বর্তমান চৌধুরী পরিবারের বড় শরিকের কর্ত্তা মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী ও ছোট শরিক ভীষ্মদেব চৌধুরীরা।
তারা আরও জানান, ব্রিটিশ আমলে তাদের পরিবারের ছয় শরিকের ছিল বন্দুক। সেই সময় স্থানীয় মানুষের ধারনা ছিল ওসব বন্দুকের গুলি ফোটে না, তাই এই দুর্গা পুজোর সময় সেই সব বন্দুক মায়ের সামনে এনে রাখা হতো ও সন্ধি পুজোর সময় সেই বন্দুক থেকে আকাশ পানে গুলি ছোঁড়া হত। সেই ট্র্যাডিশন এখনও এই পুজোতে বজায় রাখা হয়েছে। সন্ধি পুজোর সময় শূন্যে গুলি চালিয়ে মায়ের আরাধনার রীতি এই বনেদি চৌধুরী বাড়ির পুজোর অঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে তারা দুজনেই জানিয়েছেন।
এছাড়াও পুজোর দিনগুলিতে মণ্ডপে আজও চলে চন্ডি মায়ের গানের পালা। 'এভাবে নিয়ম-নিষ্ঠার দিক থেকে আমাদের আয়োজনে এই পূজা এখনও এক নম্বর বলে পরিবারের সব শরিকের দাবী। তাদের সংযোজন, 'পরিবারকেন্দ্রিক হলেও পুজোর কদিন এখানে সব শ্রেণির লোকের আগমন ঘটে। এই পুজোর মধ্যে দিয়েই তাদের মাঝে প্রীতি, মৈত্রী ও ভ্রাতৃত্ব আনয়নের চেষ্টা থাকে আমাদের।'
No comments:
Post a Comment