দশমীতে মায়ের ভোগ পান্তাভাত-কচুশাক, জেনে নিন কল্যানপুরের বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়ির পুজোর ইতিহাস - press card news

Breaking

Post Top Ad

Post Top Ad

Tuesday 3 October 2023

দশমীতে মায়ের ভোগ পান্তাভাত-কচুশাক, জেনে নিন কল্যানপুরের বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়ির পুজোর ইতিহাস

 


দশমীতে মায়ের ভোগ পান্তাভাত-কচুশাক, জেনে নিন কল্যানপুরের বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়ির পুজোর ইতিহাস 



দক্ষিণ ২৪ পরগনা: বাড়ির মেয়েদের সাথেই পূজার নৈবদ্য সাজনো থেকে ফল কাটা সবই করেন সাথে ছেলেরা। এই রীতি এখনও অব্যাহত আছে বারুইপুরের আদি গঙ্গা সংলগ্ন কল্যাণপুরের বন্দোপাধ্যায় বাড়িতে, যা দেখতেই পুজোর কদিন মানুষজনের বিশেষ ভিড় লেগে থাকে। ১১৫৭ সালে পূর্ব মেদিনীপুরের মহিষাদল থেকে জমিদার সহস্ররাম বন্দোপাধ্যায় এসে বন্দোপাধ্যায় বাড়িতে মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। তারপর থেকে বংশ পরম্পরায় দুর্গা পুজো হয়ে আসছে, দুর্গা মন্দিরে। 


দুর্গা মন্দিরে এখন চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। রঙের প্রলেপ পড়ছে মন্দিরে। বর্তমানে এই বাড়ির সদস্যরা কেউ মুম্বাই, কেউ ব্যাঙ্গালোর, এমনকি কেউ আমেরিকায়ও থাকেন। কিন্তু বাড়ির পুজোর টানে সকলেই চলে আসেন ওই কয়েকটা দিন। রথের দিন থেকে কাঠামো পুজোর প্রস্তুতি শুরু হয়। প্রতিপদেই বসে ঘট। কুলপুরোহিতের সঙ্গে তন্ত্রধারক মিলে শুরু করেন চণ্ডীপাঠ। 


বাড়ির গৃহবধূ শিক্ষিকা রুমকি বন্দোপাধ্যায় জানালেন, 'পুরানো ঐতিহ্য ধারাকে বজায় রেখেই একমাত্র এই বাড়িতেই পুজার কয়েকটা দিন ফলকাটা থেকে শুরু করে নৈবদ্য সাজানো সব কাজ বাড়ির ছেলেরাই করে। দীক্ষিত মহিলারাই পায় পুজোর ভোগ রান্নার অনুমতি। বংশ পরম্পরায় বাড়ির পরিবারের গৃহবধূরা পালাক্রমে মায়ের বরন সারেন।'



তিনি আরও বলেন, 'কলা বৌ স্নান যখন সব আদি গঙ্গায়, পুকুরে হয়। তখন এই পরিবারে সেই স্নান হয় মন্দিরের ভিতরেই। সপ্তমীর দিন মন্দির সংলগ্ন চাতালে যূপ কাষ্ঠে হয় পাঁঠা বলি, এছাড়া অষ্টমীর দিন ও সন্ধিপুজার সময় পাঁঠাবলির রীতি রয়েছে। এমনকি, নবমীর দিনও পাঁঠা ও শস্য বলি হয়ে থাকে।'


বাড়ির গিন্নি কল্পনা বন্দোপাধ্যায় জানান, 'যেদিন থেকে দুর্গা মন্দিরে ঘট বসে, সেইদিন থেকেই পরিবারে মাছ ছাড়া মাংস, ডিম, পেঁয়াজ এসব কিছুই খাওয়া হয় না, যা চলে লক্ষ্মী পুজো পর্যন্ত। বকখালির নবগ্রাম থেকে পুজোর কয়েকটা দিন কাজের জন্য ছেলেরা আসে, তারাই পরিষ্কার করা থেকে শুরু করে গঙ্গাজল আনা সবটা করে থাকে। মায়ের বোধন শুরু হয় দরমার বেড়া দিয়ে বেলগাছ ঘিরে।'


পুজোর কয়েকটা দিন মায়ের ভোগ বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। সপ্তমী থেকে নবমী মাকে ভোগে নানাপদ মাছ, মাংস ,ডাল, খিচুড়ি সবই দেওয়া হয়। কিন্তু দশমীর দিন মাকে পান্তা ভাত, কচু শাক দেওয়া হয়। কারণ, দশমীর দিন অরন্ধন হিসেবে পালিত হয়। সে দিন রান্না হয় না। নবমীর ভোগের পর ফের দশমীর রান্নার আয়োজন করা হয়। দশমীর দিন মহিলাদের সিঁদুরখেলা দেখতেই ভিড় জমে যায় বাড়িতে। পূজা ঘিরে পরিবারের পাশাপাশি এলাকার মানুষজনও মেতে ওঠেন বন্দোপাধ্যায় বাড়ির মাতৃবন্দনায়।

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad