ব্রহ্মা-সহ দেবী সরস্বতীকে নিয়ে অশালীন মন্তব্য আরজেডি বিধায়কের!
প্রেসকার্ড নিউজ ন্যাশনাল ডেস্ক, ৩১ ডিসেম্বর: বিদ্যার দেবী সরস্বতীকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেছেন আরজেডি বিধায়ক ফতেহ বাহাদুর কুশওয়াহা। বিহারের দেহরির বিধায়ক ফতেহ বাহাদুর সিংয়ের কুরুচিপূর্ণ এই বক্তব্যের জেরে ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে বিহারের রাজনীতি। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হচ্ছে তার ভিডিও। এদিকে আরজেডি এই বক্তব্য থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছে।
আরজেডি বিধায়ক বলেছেন, "আপনার ধর্মগ্রন্থে লেখা আছে যে সুরসতী (সরস্বতী) যিনি ব্রহ্মার কন্যা এবং ব্রহ্মাজির তাঁর নিজের মেয়ের ওপর নিয়ত (মন) খারাপ হয় এবং তিনি (ব্রহ্মা) তাকে বিয়ে করে নেন। আপনি নিজে বুঝুন... পূজা কার হয়, চরিত্রবানের নাকি চরিত্রহীনের?"
আরজেডি বিধায়ক বলেন, “এই চরিত্রবান- চরিত্রহীনের কথা আমি বলছি না, সাধক কবিরদাস বলেছেন। তিনি যা বলেছেন আমি তাই বলছি।" তিনি আরও বলেন, 'স্কুলে সরস্বতী জির মূর্তি লাগানো উচিৎ নয়।'
ফতেহ বলেন, সরস্বতী জি'র মূর্তির বদলে স্কুলে সাবিত্রীবাই ফুলের ছবি লাগানো উচিৎ। উল্লেখ্য, ৭ই জানুয়ারি সাবিত্রীবাই ফুলের জন্মবার্ষিকী। আরজেডি বিধায়ক ফতেহ এই অনুষ্ঠানের আয়োজনে লোকদের আমন্ত্রণ জানাতে এসেছিলেন। এই সময় সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে হিন্দু দেব-দেবীদের নিয়ে অশালীন মন্তব্য করেন বিধায়ক।
ফতেহ বাহাদুর সিংয়ের এই বক্তব্যের জন্য তাকে টার্গেট করছে বিজেপি। বিজেপি নেতারা চ্যালেঞ্জ করছেন যে, অন্য ধর্ম নিয়েও এইরকম কথা বলে দেখান। বিজেপি বলেছে, সাহস থাকলে কোরান বা মহম্মদ সাহেব নিয়ে কিছু বলে দেখান। একই সঙ্গে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে সন্তসমাজও। তাঁর এই বক্তব্যের বিরুদ্ধে মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের কাছে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবী করা হয়েছে। আরজেডি বিধায়ক ফতেহ বাহাদুর যেভাবে মন্তব্য করেছেন তাতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে সন্ত সমাজ। হরিদ্বারের সাধুরা একে সস্তা জনপ্রিয়তা লাভের মাধ্যম বলেছেন। এটাকে হিন্দু অনুসারীদের বিশ্বাস নিয়ে খেলা বলেও বর্ণনা করা হয়েছে।
তবে, এই প্রথম নয় যে বিধায়ক ফতেহ এমন বিবৃতি দিয়েছেন। এর আগে তিনি মা দুর্গাকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেছিলেন। তিনি মা দুর্গাকে কাল্পনিক আখ্যায়িত করে বলেছিলেন যে দেবী দুর্গার অস্তিত্ব নেই, এটি একটি মনগড়া গল্প। তিনি নিজেকে মহিষাসুরের বংশধর বলে দাবী করেন। তিনি বলেছিলেন, 'দেবী দুর্গার অস্তিত্ব থাকলে ব্রিটিশ শাসনামলে তিনি কেন ভারতকে রক্ষা করেননি।'
তিনি বলেন, 'একদিকে হিন্দু শাস্ত্রে বলা হয়েছে যে, ভগবান শঙ্কর অন্যান্য দেবতাদের সাথে আহ্বান করে দেবী দুর্গার উৎপত্তি করেছেন। একভাবে, ভগবান শিব দেবী দুর্গার আবিষ্কার করেছেন, তাই এই সম্পর্ক থেকেই দেবী দুর্গা শিবের কন্যা হন। অন্যদিকে, দেবী দুর্গাকে মহাগৌরী নামেও ডাকা হয়। এমন অবস্থায় গৌরী, ভগবান শিবের স্ত্রী ছিলেন, তাহলে কি ভগবান শিব তাঁর কন্যাকে বিয়ে করেছিলেন?'
ফতেহ বাহাদুর বলেছিলেন, এ সব মনুবাদীদের ষড়যন্ত্র। মহিষাসুরকে হত্যা করার জন্য তারা সবাই দুর্গাকে ব্যবহার করেছিল এবং মহিষাসুরকে বধ নয় হত্যা হয়।' তিনি প্রশ্নের সুরে বলেছিলেন যে, 'দুর্গা কোন মাঠে মহিষাসুরের সাথে যুদ্ধ করেছিলেন এবং রাতে যুদ্ধ করতে তাঁর জায়গায় কে গিয়েছিলেন তা বলার কাজ এই মনুবাদীরা করবেন?'
দেবী দুর্গা ও ভগবান শঙ্করকে নিয়ে তাঁর বলা আপত্তিকর কথা নিয়ে ব্যাপক তোলপাড় হয়। শুধু বিহারেই নয়, বহু জায়গায় আরজেডি বিধায়ক ফতেহ বাহাদুরের কুশপুত্তলিকা দাহ করেছে হিন্দু সংগঠনগুলি।
প্রসঙ্গত, লালুপ্রসাদ যাদবের দল থেকে প্রথমবারের মতো বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছেন ফতেহ বাহাদুর সিং। ২০২০ বিধানসভা নির্বাচনে, তিনি সত্যনারায়ণ সিং যাদবকে মাত্র ৪৬৪ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেছিলেন। তার বিরুদ্ধে অত্যন্ত অনগ্রসর বর্ণের জাল শংসাপত্র তৈরির অভিযোগও রয়েছে। ২০২৩ সালে, আয়কর বিভাগ তার হোটেলে অভিযান চালায়।
No comments:
Post a Comment