- press card news

Breaking

Post Top Ad

Post Top Ad

Monday 5 February 2024

পরকীয়ায় আসক্ত হচ্ছে পাখিরা, ভাঙছে ঘর, বাড়ছে বিচ্ছেদ 



প্রেসকার্ড নিউজ বিনোদন ডেস্ক, ৫ই ফেব্রুয়ারি: ডিভোর্স বাড়ছে পাখিদেরও। সংসার ভাঙছে পরকীয়ায়। এই তথ্য অবাক করে দেবে আপনাকে। মানুষের মতো পাখিরাও পরকীয়ায় আসক্ত হচ্ছে। পাখিদের মধ্যেও বাড়ছে ডিভোর্সের প্রবণতা। না না আমরা নয়, বলছেন বিজ্ঞানীরা। পাখিদেরও নাকি মানুষের মতো সমাজ আছে। সেখানে বিয়ে আছে, বউ, বর আছে। সংসার আছে। আর আছে পরকীয়ায়ও। নিশ্চয়ই ভাবছেন পাখিদের আবার পরকীয়া! হ্যাঁ, হাস্যকর হলেও সত্যি এটাই। কিভাবে পরকীয়া  করে পাখিরা? জেনে নিন।


নীল দিগন্তে ছোট ছোট দুটি ডানা মেলাতেই আনন্দ। গাছ গাছালির মধ্যে শরীর ডুবিয়ে মিষ্টি সুরে ভৈরবী ধরত তারা। গানের সুরে জানান দিত ভোর হয়েছে। ঘুম ভাঙানোর গান এক, আর প্রেমিকাকে ডাক পাঠানোর গান আর এক। তাতে সুর আরো মিষ্টি। সুর, তাল, লয়, ছন্দে প্রেম করতো পাখিরা। তারপর পাশে থাকার অঙ্গীকার করত। পাখিদের সেই প্রেম, বিয়েও নাকি এখন আর টিকছে না। ফটাফট প্রেম হচ্ছে, আবার ঝটপট ডিভোর্সও হয়ে যাচ্ছে। কেন পাখিদের মধ্যে ডিভোর্স বাড়ছে তার ব্যাখ্যাও করেছেন বিজ্ঞানীরা।


বিশেষজ্ঞরা দাবি করছেন, মানুষের মত পাখি সমাজেও ডিভোর্স বাড়ছে। চিন ও জার্মানির বিজ্ঞানীরা পাখিদের সংসারে নাক গলিয়ে দেখেছেন, তাদের মধ্যেও স্বামী-স্ত্রীর ঝগড়া বাড়ছে, ফলে বিয়ে নাকি আর টিকছে না। এখনো পর্যন্ত ২৩২টি পাখি দম্পতির ডিভোর্স দেখেছেন তারা। ব্যাপারটা আসলে খুবই মর্মান্তিক। কিন্তু পাখিদের সম্পর্কে এত ভাঙ্গন কেন? 


বিজ্ঞানীরা বলছেন পাখিরাও আজকাল পরকীয়ায় জড়াচ্ছেন। সাধারণত পুরুষ ও স্ত্রী পাখি গাঁঠছড়া বাঁধার পরে সন্তান আসা অবধি একসঙ্গে থাকেন। এটাই পাখি  সমাজের নিয়ম। বিজ্ঞানীদের দাবি ইদানিং দেখা যাচ্ছে প্রথম ব্রিড হবার আগেই পুরুষ পাখি অথবা স্ত্রী পাখি অন্য সঙ্গী খুজে নিচ্ছেন। অথবা অন্য সঙ্গীর সঙ্গে গোপনে প্রেম করছেন। একজন পরকীয়ায় জড়ালে অন্যজন তা কিছুতেই মানতে পারছে না। ফল হচ্ছে ডিভোর্স। আবার এমনও দেখা যাচ্ছে, পাখি দম্পতির একজন অনেক দূরে উড়ে গিয়ে আর ফিরে  আসছে না, সেখানেই অন্য সংসার পাতছে। ফলে বিচ্ছেদ হচ্ছে অচিরেই। পরিযায়ী পাখিদের ক্ষেত্রে ঠিক এই কারণেই ডিভোর্স বেশি হচ্ছে। long distance relationship আজকাল পাখিরাও পছন্দ করছে না। পাখিদের মধ্যে অবসাদের প্রবণতাও দেখেছেন বিজ্ঞানীরা। পরিবেশ ও বাস্তুতন্ত্রের বদল, জলবায়ুর বদল, মানুষের তৈরী দূষণে পাখিরাও অতিষ্ঠ। এইসব কারণে তাদের সংসার পাতার ইচ্ছেও চলে যাচ্ছে।


বিজ্ঞানীরা বলছেন, পাখিদের ডিভোর্স শুনে ব্যাপারটা হাস্যকৌতুক হিসেবে নিলেও, মোটেও তা স্বাভাবিক ব্যাপার নয়। পাখিদের পারস্পরিক কথোপকথন, তাদের বংশবিস্তারের প্রক্রিয়া, ব্যাহত হচ্ছে ডিজিটাল সভ্যতার বাড়াবাড়ির কারণে। ক্যানবেরার অস্ট্রেলিয়ার ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির পক্ষীবিদ বিপন্ন প্রজাতির পাখিদের নিয়ে দীর্ঘ সময় ধরেই গবেষণা করছেন। তিনি বলেছেন বিশ্বজুড়ে অনেক প্রজাতির পাখি বিপন্নের তালিকায় চলে গেছে। এই পাখিদের নিয়ে গবেষণা করতে গিয়েই বিজ্ঞানী দেখেছেন নিজের প্রজাতির মধ্যে ভাব বিনিময়ের যে মাধ্যম তাই-ই ভুলে গেছে পাখিরা। নিজেদের মধ্যে কথা বলতে এখন তারা অন্য প্রজাতির গান নকল করছে। কোকিল যদি এখন হঠাৎ অন্যরকম গান ধরে তাহলে ব্যাপারটা যেমন হবে ঠিক তাই। বিজ্ঞানী বলছেন মনুষ্য সৃষ্ট দূষন আর পরিবেশ বদলের যে ভয়ংকর প্রভাব আসতে চলেছে বিশ্বজুড়ে, তার সূচনা হয়ে গেছে।

মানুষের মতো পাখিদেরও নিজেদের সমাজ গোষ্ঠী থাকে, কিন্তু এখন পাখিরা নিজেদের বাসস্থান হারাচ্ছে। পাখিদের প্রেম আর জমছেই না। পাখিরা যে গান শুনিয়ে বা বুলি শুনে ছুটে এসে সঙ্গী বেছে নিতো, সেই প্রক্রিয়ায় এখন বাধা পাচ্ছে মোবাইল নেটওয়ার্কের যুগে। তাই প্রেমিকের বাড়ির ঠিকানা খুঁজেই পাচ্ছে না প্রেমিকারা। পাখিদের মিলনেও বাধা পড়ছে। তাদের সংসার ভাঙছে। 


পাখিদের ডিভোর্সের জন্য মানুষের কান্ড কারখানাকেই দায়ী করছেন পরিবেশবিদরা। জঙ্গল সাফ হয়ে যাচ্ছে। গাছ কেটে কংক্রিটের বাড়ি উঠছে। পাখিরা বাস্তুহারা হচ্ছে। মোবাইলের মাইক্রোওয়েভ রশ্মি, টাওয়ার থেকে ভেসে আসা তরঙ্গ, গাড়ির আওয়াজে দিশেহারা হচ্ছে পাখিরা। ভাব বিনিময়ের পদ্ধতি ভুলে যাচ্ছে পাখিরা। এই গবেষণা আগামী পৃথিবীর কাছে এক অশনি সংকেত ই বটে। গবেষকরা বলছেন একটা সময় আসবে যখন পৃথিবী থেকে মুছে যাবে পাখির গান। হারিয়ে যাবে সমস্ত সুরেলা পাখিরা।

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad