জেনে নিন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের ইতিহাস ও গুরুত্ব
প্রদীপ ভট্টাচার্য, ৬ই ফেব্রুয়ারি, কলকাতা: শিক্ষায় মাতৃভাষা মাতৃদুগ্ধের সমান। আর সেই মাতৃভাষার আন্তর্জাতিক মঞ্চে স্বীকৃতি কিন্তু খুব পুরনো দিনের কথা নয়। ঐতিহাসিক একুশে ফেব্রুয়ারি সারা বিশ্বে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত হয়। এই দিনের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে আছে আমাদের প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশের স্বপ্ন, তার জন্ম এবং অবশ্যই ঐতিহ্য। কিন্তু সেই ইতিহাসে রয়েছে আত্মত্যাগ, নিরলস সংগ্রাম এবং কখনও হার না মানা মনোভাব।
ভারতীয় উপমহাদেশ তখন সদ্য স্বাধীন হয়েছে। ধর্মের ভিত্তিতে ভাগ হওয়া পাকিস্তানের দুটো আলাদা ভূখণ্ড- আর অন্যতম হল পশ্চিমবঙ্গের প্রতিবেশী পূর্ব পাকিস্তান। তবে পশ্চিম পাকিস্তানে উর্দু প্রধান ভাষা হলেও পূর্ব পাকিস্তানের ক্ষেত্রে হল বাংলা। ক্ষমতাসীন পাকিস্তান সরকার উর্দু ঘেষা, তাই পূর্ব পাকিস্তানের উপর শুরু থেকেই রুষ্ট। বাংলাকে রাষ্ট্রীয় ভাষার মর্যাদা দেওয়ার দাবী থেকে ভাষা আন্দোলন শুরু হয় পূর্ব পাকিস্তানের মাটিতে। ১৯৫২ সালে আজকের দিনে আন্দোলনরত ছাত্র ও সমাজকর্মীদের উপর পুলিশের বর্বরোচিত গুলিবর্ষণের ফলে রফিক, সালাম, আব্দুল জব্বার, শফিউল, সালাম সহ অনেক তরুণ শহীদ হন। এই দিনটি তাই ভাষা শহীদ দিবস হিসেবেও পরিচিত।
এরপর পদ্মার ওপর দিয়ে বয়ে যায় অনেক জল। মুক্তিযোদ্ধাদের অক্লান্ত লড়াই ও আত্মত্যাগের পর বাংলাদেশ স্বাধীন হয়, যে দেশের ভিত্তি ছিল বাংলা ভাষা। বঙ্গবন্ধুর হাত ধরে নতুন বাংলাদেশ শপথ নেয় নিজের মাতৃভাষা বাংলার প্রতি দায়বদ্ধতার কথা মনে রেখে। ইতিহাসের পাতায় শুধু ভাষার জন্য আন্দোলন এবং নতুন দেশের জন্ম, এর দ্বিতীয় কোনও উদাহরণ পাওয়া সম্ভব নয়।
বাংলাদেশের বাঙালিদের ভাষার প্রতি ভালোবাসা ও আত্মত্যাগকে সম্মান জানিয়ে ১৯৯৯ সালের ১৭ই নভেম্বর অনুষ্ঠিত ইউনেস্কোর প্যারিস অধিবেশনে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের বিষয়টি উত্থাপন করা হয়। ১৮৮ টি দেশ এই বিষয়টিকে সমর্থন জানালে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস গৃহীত হয়। ২০১০ সালের ২১শে অক্টোবর জাতিসংঘের ৬৫ তম অধিবেশনে প্রতিবছর ২১শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনের প্রস্তাব আনে বাংলাদেশ, যা সর্বসম্মত ভাবে গৃহীত হয়।
No comments:
Post a Comment