ভয়ঙ্কর ডাকাতের নামেই রানাঘাট শহর - press card news

Breaking

Post Top Ad

Post Top Ad

Tuesday 20 February 2024

ভয়ঙ্কর ডাকাতের নামেই রানাঘাট শহর

 


ভয়ঙ্কর ডাকাতের নামেই রানাঘাট শহর!


প্রদীপ ভট্টাচার্য, ২০শে ফেব্রুয়ারি, কলকাতা: ভয়ানক এক ডাকাতের নামেই নাকি নামকরণ হয়েছিল রানাঘাট শহরের! আপনি কি জানেন বাঙালি প্রিয় রসগোল্লা প্রথম তৈরি হয়েছিল কলকাতায় নয়, রানাঘাট শহরেই। জানেন কিভাবে ব্রহ্মডাঙ্গা হয়ে উঠল রানাঘাট? চূর্ণী নদীর তীরে অবস্থিত এই শহর একটা সময় নাকি ছিল ডাকাতদের মূল ঘাঁটি। হ্যাঁ, এরকম অনেক অজানা তথ্য লুকিয়ে রয়েছে রানাঘাট শহরের ইতিহাসে। তাহলে আসুন আমরা আজ বরং রানাঘাট শহরের ইতিহাস জেনে নিই।


পশ্চিমবঙ্গের সব থেকে জনপ্রিয়  শহর হল রানাঘাট। কলকাতার এই পার্শ্ববর্তী শহরটি অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি শহর। এই শহরকে নিয়ে বহু কাল্পনিক কাহিনী এখনও বেশ প্রচলিত রয়েছে। জানা যায়, এই শহরের নাম রানা ডাকাত থেকে এসেছে। সে নাকি আজ থেকে ৫০০-৬০০ বছর আগে এই এলাকার ত্রাস ছিলেন। লুটপাট করতেন দিনভোর আর তারপরই মা কালীকে ধন্যবাদ জানাতে নাকি পুজোও দিতেন। আর সেখান থেকেই রানা ডাকাতের নাম অনুযায়ী এই জায়গার নাম হয় রানাঘাট।


শোনা যায় রানাঘাটের প্রাচীন নাম ছিল ব্রহ্মডাঙ্গা। চূর্ণী নদীর তীরে অবস্থিত এই প্রাচীন জনপদে রানা নামে এক ডাকাতের নাকি মূল ঘাঁটি ছিল। তার ভয়ে আশেপাশের বাসিন্দারা নাকি রীতিমতো ভয়ে কাঁপতো। রানার ভয়ে সবাই দলবদ্ধভাবেই যাতায়াত করত। আর এই ভয়ের কারণেই বাসিন্দারা আর ব্রহ্মডাঙ্গাকে ব্রহ্মডাঙ্গা বলতো না, তারা বলতো রানা ডাকাতের ঘাঁটি বা রানার ঘাট। আর এই ভাবেই ব্রহ্মডাঙ্গা হয়ে ওঠে আজকের রানাঘাট।


তবে কারও কারও মতে আকবরের আদেশে রানা তোড়মল এখানে জমি জরিপ করতে আসেন একটা সময়। তার নাম অনুসারেই নাকি এই অঞ্চলের নাম হয় রানাঘাট। আবার অনেক গবেষকের মতে, রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের দ্বিতীয় স্ত্রীর নাম অনুসারে এই স্থানের নাম হয়ে রানীঘাট। আর রানীঘাট থেকেই আজকের রানাঘাট। আর এক ইতিহাসবিদের মতে চূর্ণী নদীর তীরে অবস্থিত রানাঘাট একেবারেই কোনও নতুন শহর নয়। রেনেলের মানচিত্রে রানাঘাটের উল্লেখ রয়েছে। এই শহরের জনসংখ্যার একটি বড় অংশ হল বাংলাদেশ থেকে আসা হিন্দু শরণার্থীদের পরিবার।


রানাঘাটের রেলপথেরও একটি দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। সিপাহী বিদ্রোহের পাঁচ বছর পর শিয়ালদহ - রানাঘাটে রেলপথের সৃষ্টি। ১৮৬২ খ্রিস্টাব্দে এই রেলপথের উদ্বোধন হয়। রানাঘাট একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়ী কেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি লাভ করে অনেক আগেই। ছোট ছোট ব্যবসাদাররা রানাঘাট থেকে মালপত্র সংগ্রহ করতেন। ফলে খুচরো এবং পাইকারি ব্যবসার এখানে অত্যন্ত উন্নতি ঘটেছে। রানাঘাট শহরে হস্তশিল্প, কুটির শিল্প এবং নানান প্রকারের কাপড়ের ফুল তৈরিতে সহস্র মানুষ জড়িত। রানাঘাট শহরে সড়কপল্লী, মদনমোহন কলোনি প্রভৃতি অঞ্চলে কয়েক হাজার মহিলা এই শিল্পের সঙ্গে আজও জড়িত।


রসগোল্লা সঙ্গেও এই শহরের নাম ওতপ্রোতভাবে জড়িত। বাগবাজারের নবীনচন্দ্র দাসকে রসগোল্লার উদ্ভাবক বলে ধরা হয়। ১৮৬৮ সালে নবীনচন্দ্র প্রথম রসগোল্লা তৈরি করেন। এছাড়া শিল্প-সংস্কৃতিতেও এই শহরের নাম অনেক আগে থেকেই জড়িয়ে রয়েছে। সংগীতের পীঠস্থান ছিল রানাঘাট। এই শহরের সঙ্গে আরও কিছু বিখ্যাত বংশের নামও জড়িয়ে রয়েছে। মার্গ সংগীতের পিঠস্থান ছিল রানাঘাট। চলচ্চিত্র অভিনেত্রী রাখি গুলজার রানাঘাটের একটি উদ্বাস্তু কলোনিতে জন্মগ্রহণ করেন এবং বেড়ে ওঠেন। অলিম্পিয়ান সোমা বিশ্বাস রানাঘাটেরই বাসিন্দা। কবি জয় গোস্বামীও এই শহরেই বড় হয়েছেন। রানাঘাটের বিখ্যাত স্থানগুলো হল পাল চৌধুরীদের জোড়া শিবমন্দির, চূর্ণী নদীর তীরে বড়বাজারে জগন্নাথ সুভদ্রা ও বলরামের মন্দির, রানা ডাকাতের প্রতিষ্ঠিত সিদ্ধেশ্বরী কালী মন্দির, রানাঘাট শহরের স্কুল মোড়ে প্রতিষ্ঠিত চিন্ময়ী ও মৃন্ময়ী মন্দির, ব্রজবল্লভ মন্দির এবং ছোট বাজারের রাধাবল্লভ মন্দির ইত্যাদি। ১৮৬৪ খ্রিস্টাব্দে ২১ শে সেপ্টেম্বর রানাঘাট পুরসভার প্রতিষ্ঠা হয়। এই শহরের বুড়োমা নামকরা একটি পুজো। রানাঘাটের বনেদি শর্মা বাড়ির বুড়োমা দুর্গাপুজো ৭০০ বছরের বেশি পুরনো।

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad