কুলপুকুরের কালী মন্দিরের অলৌকিক কাহিনী
প্রদীপ ভট্টাচার্য, ১৭ই মার্চ, কলকাতা: কুলপুকুর কালী মন্দিরে মায়ের অস্তিত্ব প্রমাণ করে দেয় বেশ কিছু অলৌকিক ঘটনা। যশোর রোডের দ্রুত গতির যানবাহন মন্দিরের সামনে এলেই ধীর হয়ে যায় তার গতিবেগ। আজও গভীর রাতে কখনো শিশুকন্যা রূপে আবার কখনো বুড়িমা রূপে দেখা দেয় এই কুলপুকুরের কালীমা। অমাবস্যার গভীর রাতে আজও তার দর্শন পান বহু গাড়ি চালক। মন্দিরের পুরোহিতরাও মায়ের অস্তিত্ব বুঝতে পারেন পুজোর রাতে। ইতিহাস বলে সুদূর বরিশাল থেকে মা কালীকে আনা হয় এই কুলপুকুরে। তাই কোনও ভক্ত কিছু চাইলে মা তাদের ফেরার না খালি হাতে। দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে নানা অলৌকিক ঘটনার সাক্ষী এই কুলপুকুর কালী মন্দির।
উত্তর ২৪ পরগনা জেলার প্রাচীন ও ঐতিহ্যশালী কুলপুকুর কালীমন্দিরের মা হলেন অকালবোধনা। ফাল্গুনী অমাবস্যার গভীর রাতে যখন চারপাশে নেমে আসে গাঢ় অন্ধকার তখনই মায়ের পূজো হয় এই মন্দিরে। তবে এই পুজো আজকের নয়। এই পুজো চলে আসছে দেশভাগের সময় থেকে। বঙ্গভঙ্গের জীবন্ত সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে এই কুলপুকুর কালী মন্দির।
ইতিহাস বলছে, কুলপুকুরের এই কালীপুজোর সূচনা হয়েছিল বর্তমান বাংলাদেশের বরিশাল এলাকায়। কিন্তু দেশভাগ হওয়ার সময় যখন ওপার বাংলার মানুষরা ভারতে চলে আসছিল ঠিক সেই মুহূর্তে ঘটে এমন এক ঘটনা যা শুনলে আপনার গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠবে। যখন সবাই বাড়ি ছেড়ে চলে আসছিলেন তখন নাকি স্বয়ং মা কালী নিজের মুখে বললেন, আমাকে নিয়ে যাবি না? আমাকে এখানে একা ফেলে রেখে যাবি। কালির এই কথায় তারা সেখান থেকে মাটির ঘট ও মাটি নিয়ে আসেন বর্তমান কুলপুকুর এলাকায়। এই পুকুরপাড়ে একটি কুল গাছের নিচে টিনের ছাউনি দিয়ে মায়ের মন্দির প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল সেই সময়। সেই মন্দিরই আজ ধীরে ধীরে হয়ে উঠেছে সকলের মা কুলপুকুর কালী মায়ের মন্দির। আর পুকুর পাড়ের সেই কুল গাছ থেকেই এই এলাকার নাম হয়েছে কুলপুকুর।
কথিত আছে এখানে মা কালী জীবন্ত এবং জাগ্রত। তাই ভক্তি করে মায়ের কাছে কোনও ভক্ত তার মনের ইচ্ছা জানালে সেই ইচ্ছা পূরণ করেন মা। সেই কারণেই ফাল্গুনী অমাবস্যার দিনে এখানে দূর দূরান্তর থেকে কয়েক লক্ষ ভক্তের সমাগম হয়।
তবে এই মন্দিরকে ঘিরে রয়েছে নানা অলৌকিক ঘটনার খতিয়ানও। শোনা যায় যশোর রোড দিয়ে যাওয়া যানবাহনের চালকেরা অনেক সময় গভীর রাতে এই মন্দির এলাকায় কখনো বুড়িমা, আবার কখনো ছোট্ট শিশু কন্যার বেশে দেবীর উপস্থিতি অনুভব করেন। এমনকি দ্রুতগতির যানবাহনও মন্দিরের সামনে গিয়ে ধীরগতি হয়ে যায় বলে অনেকে জানিয়েছেন। এছাড়াও মন্দিরের পুরোহিতরা পূজো সেরে ফেরার পথে নাকি পথ ভুল করেন বারবার আর তখনই অমাবস্যার রাতে মাঠে ঘুরতে ঘুরতে তারা মা কালীর অস্তিত্ব বুঝতে পারেন।
আগামী অমাবস্যাতেও মহাসমারোহে পূজিত হবেন কুলপুকুরের জাগ্রত কালী মা। প্রতিবছরই মায়ের পূজাকে ঘিরে লক্ষাধিক ভক্তের সমাগম হয় কুলপুকুর এই মন্দির প্রাঙ্গণে। প্রতিদিনই বেলা তিনটে তে নিয়ম করে চলে দেবীর আরাধনা। মন্দির কমিটি জানায় এক শনিবার পার্শ্ববর্তী পুকুরে দেবীর বিসর্জন দিয়ে পরবর্তী শনিবারে দেবীকে মন্দিরে নিয়ে আসার রীতি রয়েছে। তাই এই মন্দিরে আপনিও যদি কোনও মনস্কামনা নিয়ে আসেন তাহলে আপনিও হয়তো খালি হাতে ফিরবেন না।
No comments:
Post a Comment