বীরভূমের বিজেপি প্রার্থী দেবাশিস ধরের মনোনয়ন বাতিল!
বীরভূম: লোকসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় পর্ব চলছে। এই আবহেই ধাক্কা খেল পদ্ম শিবির। বাতিল করা হল বীরভূমের বিজেপি প্রার্থী দেবাশিস ধরের মনোনয়ন। সূত্রের খবর, তিনি নো ডিউস সার্টিফিকেট দেখাতে পারেননি। তাই তার প্রার্থী পদ বাতিল করা হয়েছে। এই বিষয়ে কলকাতা হাইকোর্টে যাবেন বলে জানিয়েছেন দেবাশিস ধর। এদিকে দেবাশিসের জায়গায় বীরভূমে বিজেপি প্রার্থী করা হয়েছে দেবতনু ভট্টাচার্যকে। তিনি বিজেপির রাঢ়বঙ্গের ক্লাস্টার ইনচার্জ।
লোকসভা নির্বাচনের কয়েক সপ্তাহ আগেই আশ্রমকায় পুলিশের চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন দেবাশিস ধর। যদিও তাঁর ইস্তফা নবান্ন গ্ৰহণ করেনি। এদিকে পদ্ম শিবিরে যোগদানের পরেই মেলে টিকিট। নির্বাচনের জন্য প্রচারও শুরু করে দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু শুক্রবার বাতিল হয়ে গেছে তাঁর মনোনয়ন। রাজ্য সরকারের তরফে নো ডিউস সার্টিফিকেট না দেওয়ার দেবাশিসের মনোনয়ন বাতিল হল। যদিও তাঁর দাবী, শীর্ষ আদালতের ছাড়পত্র থাকার পরও তাঁর মনোনয়ন বাতিল হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে তিনি আদালতের দ্বারস্থ হবেন। উল্লেখ্য, সরকারি কর্মীর কাছে রাজ্য সরকারের কোনও পাওনা নেই, এই মর্মে নো ডিউস সার্টিফিকেট দেওয়া হয়।
কমিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, সেকশন ৩৬ অফ রিপ্রেসেন্টেশন অফ পিপলস অ্যাক্ট অনুযায়ী, কেউ যদি সরকারি চাকরি থেকে স্বেচ্ছাবসর নিয়ে নির্বাচনের প্রার্থী হন, তাঁকে নো ডিউস সার্টিফিকেট জমা করতে হয়। বীরভূমের বিজেপি প্রার্থী তা জমা দিতে পারেননি, তাই তাঁর মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে।
সূত্রের খবর, দেবাশিস ধরের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত চলছে রাজ্য সরকারের। পাশাপাশি তিনি ইস্তফা দিলেও নবান্ন থেকে তাঁকে এখনও রিলিজ দেয়নি। গত বিধানসভা ভোটে কোচবিহারের শীতলকুচি এলাকায় গুলি চলার সময় সেখানে পুলিশ সুপার ছিলেন দেবাশিস। তারপর নবান্ন তাঁকে সরিয়ে দেয়। তাঁকে রাখা হয়েছিল কম্পালসারি ওয়েটিংয়ে।
গত ৪ এপ্রিল কোচবিহারের জনসভা থেকে নাম না নিয়ে দেবাশিস ধরকে নিশানা করেছিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শীতলকুচি গুলিকাণ্ড নিয়ে সরাসরি তাঁকে দায়ী করেছিলেন তিনি। তাঁর বক্তব্য ছিল, 'নির্বাচনের সময় শীতলকুচিতে লাইনে দাঁড়ানো পাঁচজনকে গুলি করে মেরেছিল। ভোট চলাকালীন ছুটে এসেছিলাম। যে লোকটির নির্দেশে হয়েছিল, তাঁর বিরুদ্ধে সরকারের দুটি ডিপি চলছে। ভিজিলেন্স ক্লিয়ার হয়নি কিন্তু ভারতবর্ষের সরকার তাকে ক্লিয়ারেন্স দিয়ে দিয়েছে।'
যদিও প্রার্থী পদ পাওয়ার পর শীতলকুচি গুলি কাণ্ড নিয়ে মুখ খোলেন দেবাশিস। তিনি দাবী করেছিলেন শীতলকুচির ঘটনার জন্য নয়, তাঁকে সাসপেন্ড করা হয়েছিল ভোট পরবর্তী হিংসার জন্য। শীতলকুচির ঘটনা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবী করেন তিনি। প্রাক্তন পুলিশকর্তা দাবী করেন, ঐদিন ভোটদানে বাধা দেওয়ার অভিযোগ পেয়ে ভোটারদের নিয়ে বুথের দিকে যাচ্ছিল কেন্দ্রীয় বাহিনী। তখন তাদের আটকে ধাক্কাধাক্কি করা হয়। সেই সময় কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা শূন্যে গুলি চালান। একটি বাচ্চা অসুস্থ হয়ে পড়ায় তা নিয়ে গুজব ছড়ায়। এরপর হামলা চালানো হয় বুথে। তারপরে কেন্দ্রীয় বাহিনী ফের গুলি চালায়। আত্মরক্ষার ঠিক এই গুলি বলে দাবী করেন প্রাক্তন পুলিশকর্তা। তিনি জানান, সঠিকভাবে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন এবং তাঁর ভূমিকা নিরপেক্ষ ছিল বলেই তাঁকে ভিক্টিমাইজ করা হয়েছিল।
এদিকে দেবাশিসের বদলে প্রার্থী হওয়া দেবতনু জানান, দল তাঁর নাম প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছে, তাই দলের নির্দেশ মেনে মনোনয়নপত্র জমা দেবেন তিনি।
No comments:
Post a Comment